সোমালিয়ায় জিম্মি জাহাজ
সাইদ মেমন, বরিশাল
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪৯ পিএম
নাবিক মো. আলী হোসেন। প্রবা ফটো
মাঝেমধ্যে কথা বললেও স্বাভাবিক হতে পারছে না ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক মো. আলী হোসেনের পরিবার। দুশ্চিন্তায় কাটছে আলী হোসেনের দাদি, বাবা, মা ও স্ত্রীর সময়। পারিবারিক সব কর্মকাণ্ড থেমে গেছে। একসময় প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর বাড়টিতে এখন বধ্যভূমির নিস্তব্ধতা।
গত বুধবার দুপুরে বানারীপাড়া উপজেলার পশ্চিম উমারের পাড় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে পুরো বাড়িই সুনসান। বাড়িতে প্রবেশের আগে দেখা হয় আলী হোসেনের চাচা শহীদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বললেন, এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলি না। কারণ কোনো আলোচনা করলে ভাবি (আলীর মা) অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিন কক্ষের ছোট টিনের ঘরে ঢুকতেই এলেন আলীর বাবা ইমাম হোসেন। পাশের ইউভিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি থেকে গত ২১ মার্চ অবসরে যাওয়া ইমাম হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যে কথা হয়। ছেলের কথা বলতে গিয়ে বলেন, এক মিনিট আধা মিনিট কথা বলে। বেশি সময় কথা বলতে দেয় না। কেমন আছি জানতে চায়। সবাইকে দোয়া করতেও বলেছে। বন্দি অবস্থায় কত আর ভালো থাকতে পারে। ইমাম হোসেন জানান, আলী বলেছে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না। তাহলে এখানে সমস্যা হবে।
এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে অয়েলার পদে কাজ করেন আলী হোসেন। বাড়ি থেকে গেছেন গত ২৫ নভেম্বর। ২৯ নভেম্বর জাহাজে পাড়ি দেন। গত ৯ জুলাই বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী ইয়ামনি সদ্য এইচএসসি পাস করেছেন। ইমাম হোসেন জানান, পুত্রবধূ ইয়ামনি মেধাবী ছাত্রী। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পাস করেছে। সে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। কিন্তু স্বামীর চিন্তায় ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারছে না। বিয়ের পর প্রথম রোজায় স্বামীকে নিয়ে আতঙ্কে কাটাচ্ছে ইয়ামনি।
জলদস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক অভিযান চান না জানিয়ে সরকার ও জাহাজ কোম্পানির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইমাম হোসেন বলেন, তারা যদি একটু সহানুভূতি দেখায়। তারা যদি উদ্যোগ নেয়। তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে আসতে পারবে। এখন পর্যন্ত খাবারের কোনো সমস্যা হয়নি বলে আলী জানিয়েছে। সে রোজাও রাখে। জলদস্যুরাও মুসলিম। তারাও রোজা রাখে বলে জানিয়েছে।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটির ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। বর্তমানে জলদুস্যদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তারা।
দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট আলী হোসেন এসএসসি পাস করে নারায়ণগঞ্জ মেরিন একাডেমি থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। পরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে চাকরি নেন।