× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গাজীপুরে গ্যাস বিস্ফোরণ

মশিয়ারকে হারিয়ে অকূল পাথারে দুই পরিবার

এম হোসেন মিন্টু, লালমনিরহাট

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫২ পিএম

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৫ পিএম

গাজীপুরে গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত মশিয়ারের পরিবার। ছেলেকে হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন তারা। প্রবা ফটো

গাজীপুরে গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত মশিয়ারের পরিবার। ছেলেকে হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন তারা। প্রবা ফটো

মশিয়ার রহমান ছিলেন পরিবারের একমাত্র বাতিঘর। সেই মশিয়ারের ইচ্ছাগুলো আর পূরণ হলো না। গত ১৯ মার্চ গাজীপুরে ভাড়া বাসার পাশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মশিয়ার রহমানের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পারুলিয়া এলাকায়। হামিদুল ইসলাম ও মর্জিনা খাতুন দম্পতির একমাত্র ছেলে তিনি। মশিয়ার তিন ভাইবোনের মধ্যে মেজ ছিলেন। তাকে হারিয়ে তার নিজের পরিবার যেমন ব্যাকুল তেমনি তার স্ত্রীর পরিবার।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হামিদুল। তিনি বলেন, ‘বড় মেয়ে হাজেরা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে হাফিজা খাতুন রুমা বিজ্ঞান শাখায় নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তিস্তার করাল গ্রাসে ভিটেমাটি হারানো সংসারের হাল কেবল ধরেছিলেন মশিয়ার। প্রায় চার বছর ধরে ঢাকায় গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করত মশিউর। কিন্তু কী হতে কী হয়ে গেল।’

হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি মাসে মশিয়ার ও বউমা মিলে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পাঠাত। ঘটনার দিনও বলেছিল, আব্বা ঈদে আমরা বাড়ি যাব না। টাকা পাঠাব। আপনারা ঈদ করেন। আমরা কোরবানি ঈদে বাড়ি যাব। একসঙ্গে ঈদ করব। ওই সময় বাড়ির কাজও করব। ছেলের অনেক স্বপ্ন ছিল। কোনোটাই আলোর মুখ দেখল না। রুমাকে পড়াশোনা করিয়ে বড় কিছু করতে চেয়েছিল। তা-ও হলো না। এখন রুমার পড়াশোনার কী হবে আমার জানা নেই।’ তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ কিংবা অন্য কেউই আমাদের কোনো খবর নেয়নি। কেউ যদি পাশে না দাঁড়ায় তাহলে হয়তো রুমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এই বয়সে খেয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’ 

মশিয়ারের মা মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘তিস্তা নদী অর্ধেক জীবন খেয়েছে। নদীতে সব হারিয়ে কিনারে এসে তিন বছর আগে ঠাঁই নিলাম। এখন সেই ভালো দিনে আল্লাহ সবকিছু নিয়ে গেল। কিছুই রেখে গেল না। এর পরও বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহর দোয়া ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় নতুন করে বাঁচতে চাই। যদি আল্লাহ সহায় হন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বউমার বিষয়ে ওর বাবা-মা যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটাই মাথা পেতে নেব। মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হতে পারে না।’

অকালে স্বামী হারিয়ে চরম শোকাহত গার্মেন্টসকর্মী সাহানা খাতুন। একদিকে স্বামী হারার শোক অন্যদিকে বেদনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবারের সদস্যের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে কাজ করছেন। জানতে চাইলে এসএসসি পাস সাহানা খাতুন বলেন, ‘কী করব? শোক চলছে। এরই মধ্যে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ফোন দিয়ে ডেকেছে। এখানে না এলে বেতন-বোনাস পাইতাম না। তা ছাড়া চাকরিটাও থাকত না। এজন্যই মাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে এসেছি। ঈদ মাটি হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কিসের আনন্দ! ঈদে বাড়ি যাব। দেখি বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি কী সিদ্ধান্ত নেয়। আমি চেষ্টা করব চাকরি করার। কিন্তু আসলে করতে পারব কি না, এখনই বলতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মশিয়ারসহ আগামী কোরবানি ঈদে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। গ্রামের ভাঙাচোরা টিনের ঘরটি ইট দিয়ে করার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য গত কোরবানির ঈদে বাড়িতে গিয়ে আমরা কিছু ইটও কিনে রেখেছিলাম। বাড়ি করা হলে ছোট ননদকে বিয়ে দেওয়ার পর আমাদের সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সে ইচ্ছাগুলো আর পূরণ হলো না। এটি আমাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! আল্লাহ কি আমার ভাগ্যে এই লিখে রেখেছিল?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুই পরিবার ছিলাম যেন একটি পরিবার। আমার শ্বশুর-শাশুড়ির একমাত্র ছেলে ছিল মশিয়ার। অনেক আদরের ছিল। জামাই হিসেবে আমার বাবা-মায়ের কাছেও ছিল ওর অনেক আদর। কিন্তু এখন আমার কী হবে আমি কিছুই বলতে পারছি না। মানসিক সাপোর্ট এই মুহূর্তে প্রয়োজন, কিন্তু কে দেবে আমাকে এই মানসিক ট্রমা থেকে উত্তরণের সঙ্গ? তাই পরিবার নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। জীবন গড়ে তুলতেই হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা