সোমালিয়ায় জিম্মি জাহাজ
এম আর ইসলাম রতন, নওগাঁ
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২৬ পিএম
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৩ পিএম
সাইদুজ্জামানের ছবি হাতে তার মুক্তির সংবাদ পাওয়ার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্ত্রী। প্রবা ফটো
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান। গত ১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির সংবাদের প্রতীক্ষায় সময় পার করছেন সাইদুজ্জামানের বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী। খুশির ঈদ তাদের কাছে ধরা দিয়েছে বিষাদ হিসেবে। বাবা-মায়ের চাওয়া সাইদুজ্জামান ফিরে আসলেই ঈদের খুশি ধরা দিবে তাদের পরিবারে। তারা বলেন, বুকের ধন না থাকায় চাপা পড়েছে ঈদ আনন্দ।
সন্তানকে ফিরে পেতে সারাক্ষণ আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে সময় পার করছেন বাবা মা। আর মাঝে মধ্যেই ছেলের ছবি এবং মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কিনা তা দেখছেন। প্রতীক্ষার প্রহর যেন তাদের শেষ হতে চাইছে না। তারা চান ঈদের আগেই যেন তার সন্তানের মুক্তি মেলে। জাহাজ ছিনতাই হওয়ার পর সাইদুজ্জামানের ভাগ্যে কী ঘটছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই তার পরিবার ও স্বজনদের মাঝে।
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি নওগাঁ শহরের পলিটেকনিক এভিনিউয়ে দুবলহাটি রোডের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে এ এস এম সাইদুজ্জামান। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে পরিবারের সদস্যরা তার আগমনে পথের দিকে চেয়ে আছেন। ঈদের আগেই সরকার বা জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে সু-সংবাদের অপেক্ষায় বন্দি নাবিকের বাবা, মা, স্ত্রী ও স্বজনরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাইদুজ্জামান ২০ বছর ধরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেশি বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির জাহাজে কাজ করছেন। সর্বশেষ তিনি চট্টগ্রাম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ কাজ করছিলেন।
সাইদুজ্জামানের বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমার ছেলে এবার ঈদে বাড়িতে আসার কথা ছিল। বলছিলো বাবা ঈদে বাড়ি যাবো ছুটি নিয়ে সবাই মিলে ঈদ করবো একসাথে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস ছেলে আমার হাজার -হাজার মাইল দূরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। প্রতিবছর ঈদের কেনাকাটা করলেও এবার কিছুই হয়নি। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছি আমরা। দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরে আসুক সেই কামনা করছি। মাঝে মাঝে মোবাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে খুব সামান্য সময়ের জন্য। তারা ভাল আছে। জলদস্যুরা এখন কোন কাজে বাঁধা দিচ্ছে না। এরপরেও তারা চরম শঙ্কায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে জাহাজ কোম্পানি ও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মুক্ত করার চেষ্টা করছে জানতে পারছি।
সাইদুজ্জামানের মা কোহিনূর বেগম বলেন, আমাদের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। ছেলেকে দ্রুত ফিরে পেতে চাই আমরা। সরকার যেন দ্রুত ঈদের আগেই আমার ছেলেসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সেই দাবি ও অনুরোধ করছি।
সাইদুজ্জামানেরর স্ত্রী মাননা তাহরীন বলেন, ঈদের আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ হবে যদি দ্রুত স্বামীকে ফিরে পেতাম। কবে ফিরবে কিছুই জানি না। সরকার যেন দ্রুত উদ্যোগ নেয়। খুব চিন্তার মাঝে দিন রাত পার করছি আমরা। যা বলে বোঝাতে পারবোনা।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস, এম, রবিন শীষ বলেন, সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকেই আমরা বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছি। অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও জাহাজ মালিক পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।