মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩০ পিএম
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১২ পিএম
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ‘নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তায়’ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ১৯৭তম ঈদ জামাতে ইমামতি করার কথা ছিল বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ আহালে মুসলিমিন বাংলাদেশের সভাপতি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের। তিনি অসুস্থ থাকায় এবার ইমামতি করেন বড়বাজার মসজিদের ইমাম হযরত মাওলানা মো. আবদুর রউফ সোয়াইব।
নিরাপত্তার কারণে শোলাকিয়ায় যাওয়ার বেশিরভাগ সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় মুসুল্লিরা চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেটে সকাল থেকে শোলাকিয়ায় আসতে শুরু করে। চৈত্রের এই সময়ে অনুকূল আবহাওয়া ও বাতাসের কারণে সকাল সোয়া নয়টার দিকেই মাঠ কানায়-কানায় ভরে যায়।
ময়দানের পাশাপাশি সড়ক, বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন বিল্ডিং,পুকুরের পারসহ বিভিন্ন স্থানে নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যান মুসল্লিরা। নামাজ শুরুর ৭ মিনিট, ৫ মিনিট ও এক মিনিট আগে ৩টি, দুটি ও একটি করে শর্টগানের ফাঁকা গুলির ছোঁড়া হয়। নামাজ শুরু হয় সকাল ১০টায়।
মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং বিদেশ থেকে আগত মুসুল্লিরা এবার শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেন।
এর আগে গত কয়েকদিন ধরেই গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, বরিশাল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোরসহ ৬৪টি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে মুসল্লিরা কিশোরগঞ্জে আসতে শুরু করে। তাদের অনেকে আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাসায়, আবাসিক হোটেল, শহরের মসজিদগুলোতে এবং ঈদগাহ মাঠে রাত কাটায়।
রেলওয়ে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল এক্সপ্রেস ট্রেন‘ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা নেয়। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ছয়টায় ছেড়ে সকাল আটটায় কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে আসে। অন্যটি সকাল পৌনে ছয়টায় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে সকাল সাড়ে আটটায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছে। উভয় ট্রেন দুটি দুপুর ১২টার দিকে মুসল্লিদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
হালুয়াঘাট থেকে আসা মুসল্লি রহমতুল্লাহ বলেন, গত ২০ বছর ধরে এ মাঠে নামাজ পড়ছি। এখানে নামাজ পড়লে আলাদা শান্তি লাগে। এক সঙ্গে এত বেশি মানুষের নামাজ পড়া, আল্লাহ বিশেষ রহমত দান করেন।
পাবনার ঈশ্বরদীর বদরুল হক (৬০) জানান, একাধিকবার নিয়ত করেছি শোলাকিয়ায় নামাজ পড়ব, আসা হয়নি। আল্লাহতলা এবার মনের বাসনা পূরণ করেছে। বিশেষ ফরিয়াদ নিয়ে এখান এসেছি। নিশ্চয় আলাহ কবুল করবে। মুসুল্লিদের ভিড়ে অনেককে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, এবার শোলাকিয়া ময়দানে ১ হাজার ১১৬ সক্রিয় পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র্যাব, সাদা পোশাকে পুলিশ, আর্মড পুলিশ, ডিবি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন বিশেষ নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করায় মুসলিরা শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশে নামাজ আদায় করেন।
নামাজ শেষে মুসলিম উম্মার শান্তি, দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহতের জান্নাত দানের জন্য বিশেষ মাগফিরাত কামনা করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বছর ৬ থেকে ৭ লাখের মতো মুসুল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন মাঠ পরিচালনা কমিটির সচিব উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. আবু রাসেল। তিনি বলেন, প্রায় সাত লাখ মুসল্লি এবার নামাজ আদায় করেছেন।