ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৭ পিএম
বুধবার সকালে ফুলবাড়ী আঁখিরা গণহত্যা দিবস ও ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে নির্মাণাধীন স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আঁখিরা পুকুর পাড়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের একটি বর্বরোচিত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এতে প্রাণ হারিয়েছিলেন দেড়শতাধিক বাঙালি হিন্দু। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বধ্যভূমির নির্মাণাধীন স্মৃতিস্তম্ভে বুধবার (১৭ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বুধবার সকাল ১০টায় ফুলবাড়ী আঁখিরা গণহত্যা দিবস ও ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট সংলগ্ন আঁখিরা পুকুর পাড় বধ্যভূমিতে নির্মাণাধীন স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে এটা করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরীর নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় সুধীজন আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
পরে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী।
সভায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অম্বরিশ রায় চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কাশেম আকন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তোজাম্মেল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শচিন্দ্র নাথ দাস, আলাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাজমুস শাকির বাবলু, ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক, ইউপি সদস্য মো. ইদ্রিস আলী, ইউপি সদস্য অর্পণ রায়, ফুলবাড়ী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও আমরা করব জয় সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্লাবন শুভ প্রমুখ।
স্মরণসভা শেষে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে প্রাণ উৎসর্গকারী বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রামভন্দ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ, বিরামপুর, পার্বতীপুরের শেরপুর, ভবানীপুর, বদরগঞ্জ ও খোলাহাটিসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাঙালি হিন্দু পরিবারের দেড়শতাধিক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতিসহ শিশু-কিশোর-কিশোরীকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ফুলবাড়ীতে নিয়ে আসে। এরপর অস্ত্রের মুখে পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকা অর্থ-সম্পদসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে তাদের খানসেনাদের হাতে তুলে দেয় রাজাকার কেনান সরকার। খানসেনারা ওইদিন সকাল ১১টার দিকে উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট সংলগ্ন আঁখিরা পুকুর পাড়ে নিয়ে সবাইকে লাইনে দাঁড় করায়। এরপর মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে তাদের নির্বিচারে হত্যা করে। এরপরও যারা বেঁচে ছিলেন তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপির প্রচেষ্টায় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়ে)’ শীর্ষক প্রকল্পের আঁখিরা বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটির আওতায় ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যয়ে আঁখিরা বধ্যভূমিতে ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। নির্মাণ কাজ ওই বছরের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছরেও শেষ হয়নি। ফলে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ অর্ধসমাপ্ত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ অবস্থায় আজ বুধবার ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে নির্মাণাধীন স্মৃতিস্তম্ভটিতে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।