চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন এমপি, অন্য প্রার্থীদের অভিযোগ

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। এ নিয়ে অপর চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিষয়টিকে দলীয় শৃঙ্খলা ও নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন বলছেন তারা।

সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন দুই মাস ধরে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পিকে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’ অনুষ্ঠানে তিনি কারও নাম সরাসরি মুখে উচ্চারণ না করলেও ওইসব অনুষ্ঠানে এমপির সঙ্গে মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি উপস্থিত থাকেন।

উপজেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানান, বাপ্পি যুবলীগ নেতা হয়েও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করেছেন। নির্বাচনে তার পক্ষে কমলনগর উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন বাপ্পি। এর প্রতিদান হিসেবে এমপি আবদুল্লাহ উপজেলা নির্বাচনে বাপ্পির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিরোধী পক্ষের অভিমত।

নিবাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কমলনগর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বাপ্পি ছাড়াও চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ হিরন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাবুল মিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহমান দিদার ও নুরনবী প্রার্থী হয়েছেন।

বুধবার দুপুরে জেলা নির্বাচন অফিস প্রাঙ্গণে চেয়ারম্যান প্রার্থী আহসান উল্লাহ হিরন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর (মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পি) পক্ষে এমপি মহোদয় অবস্থান নিয়েছেন। তার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী।’

আহসান উল্লাহ হিরন বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। কিন্তু আমাদের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন আমার নেতাকর্মীদের অনেক ডিস্টার্ব করতেছেন। উনি বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পির পক্ষে ভোট চাচ্ছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। আমার আহ্বান থাকবে, তিনি যাতে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধিতে আছে, কোনো মন্ত্রী বা এমপি কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবেন না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়রাম্যান প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, দলের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকি। শুধু এমপি না, যেকোনো নেতা বা মেম্বার, চেয়ারম্যান কোনো না কোনো প্রার্থীর পক্ষে থাকতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়মনীতি অনুসরণ করে তারা সমর্থন করবেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপি মহোদয় কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।’

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফোন করে বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। ৮ মে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলাও রয়েছে।