বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৭ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ০৯:২১ এএম
রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। ছবি: ফেসবুক
দুবাইয়ে বিলাসী জীবনযাপনের জৌলুস দেখাতে গিয়ে নিজের অন্ধকার অতীতকেই সামনে নিয়ে এসেছেন পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে আরাভ খান। তাকে নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশে সাড়াজাগানো প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে বিরামহীনভাবে এ বিষয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। একে একে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। ব্যাপক চাপের মুখে আরাভ খান যেকোনো সময় দুবাই ত্যাগ করতে পারেন বলে তথ্য এসেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে।
দুবাই থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২২ মার্চ আরাভ খান দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পথে পাড়ি জমাতে পারেন। এরই মধ্যে তার কানাডার ভিজিট ভিসা বাতিল হয়ে গেছে। যে কারণে আপাতত তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। তবে কানাডার ভিসা বাতিলের খবরের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া আরাভ খানের পাসপোর্টে ইতালির ছয় মাসের ভিসা রয়েছে। যার মেয়াদ চলতি বছরের ২৮ জুন শেষ হবে।
আরও পড়ুন: কার ডাকে দুবাইয়ে সাকিব আল হাসান
আরাভ খানের দুবাই ছেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়। প্রথমত দুবাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও তার পরিচিতজন মিলে শতাধিক মানুষ তার ব্যবসায় অর্থ ও স্বর্ণালংকার বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন তার আসল চেহারা সামনে আসার পর তারা সবাই লগ্নি করা অর্থ ফেরত চাইছেন। কেউ কেউ আরাভের জুয়েলারি শপ থেকে লগ্নি করা স্বর্ণালংকার এরই মধ্যে ফেরত নিয়ে গেছেন।
তবে নগদ অর্থের জন্য বিনিয়োগকারীরা তার নাগাল পাচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত দুবাই থেকে তাকে ফেরত আনতে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। যেকোনো সময় ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি হতে পারে। এতে করে দুবাই ত্যাগ করতে গেলে তার গ্রেপ্তারের ঝুঁকি রয়েছে। সব মিলিয়ে ‘নিরাপদ’ দুবাই তার জন্য ক্রমেই বিপদসংকুল হয়ে উঠছে। মূলত এসব কারণেই দুবাই ছাড়তে যাচ্ছেন আরাভ খান।
দুবাই থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবাসী ফোন করে জানান, প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রতিবেদনের পর তা দুবাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নজরে এসেছে। অনেকেই আরাভ জুয়েলারির সামনে ভিড় করছেন। এমনকি কেউ ওই এলাকায় গেলে চেষ্টা করছেন আলোচিত দোকানটি ঘুরে যাওয়ার।
গত বৃহস্পতিবার আরাভ খান ফেসবুক লাইভে এসে তার যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড ও কানাডার নাগরকিত্ব থাকার কথা দাবি করেন। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। বরং ভারতীয় পাসপোর্ট দেখিয়ে তিনি চলতি বছরের ৭ মার্চ ১০ বছর মেয়াদি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছেন। একই দিনে তার স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক সাজেমা নাসরিনও একই মেয়াদের ভিসা পেয়েছেন। দুজনই আর বি১/বি২ টাইপ ভিসা পেয়েছেন। এই ভিসা ইস্যু হয়েছে আবুধাবি থেকে।
কানাডায় আরাভ খান ও তার স্ত্রী সাজেমার ভিজিটর ভিসা পেয়েছেন। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ওই ভিসা ইস্যু করা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলসের কানাডীয় দূতাবাস থেকে।
আরও পড়ুন: এত টাকার মালিক হলো কীভাবে, প্রশ্ন গ্রামবাসীর
এদিকে ভারতীয় পাসপোর্টধারী আরাভ খান গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত বছরের মার্চ এবং সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। দুবাইয়ের বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে ভারতীয় পাসপোর্টে তিনি ভিসা নিয়েছিলেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে প্রতিদিনের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি বাড়িতে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খানকে। পরে গাজীপুরের জঙ্গলে নিয়ে পেট্রল ঢেলে তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি ছিলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। তখন থেকেই তিনি পলাতক।