প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:০১ পিএম
ফাইল ফটো
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান অনুন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা ব্যয়ে পরামর্শক নিয়োগ দিতে পারবেন। অথচ ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অভ্যন্তরীণ অডিটের জন্য ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ফার্ম নিয়োগ দিয়েছেন, যা স্পষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের অনুমোদন নেওয়ার কথা থাকলেও তা করেননি তিনি।
২০১৫ সালে সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধানকে পরামর্শক সেবা গ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর বেশি খরচ করতে হলে বোর্ডে পাস হতে হবে। এ খাতে বোর্ডের আর্থিক ক্ষমতা রয়েছে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত।
এদিকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে অডিট ফার্ম নিয়োগ নিয়ে বোর্ড সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ক্ষুব্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার ওয়াসার বর্তমান এমডি তাকসিম এ খান বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই নিজের ক্ষমতাবলে নিয়ে থাকেন। কোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় হলে ওই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন থাকত। যেহেতু অডিট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফার্ম নিয়োগের বিষয়, তাই এখানে বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। কেননা ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তা অডিটের মাধ্যমে বেরিয়ে আসার সুযোগ ছিল। কিন্তু ওয়াসা বোর্ডকে না জানিয়ে এমডির ইচ্ছা অনুযায়ী যে অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ হিসাবে কতটা স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার স্থায়ী সম্পদ মজুদ, মালামাল, ঋণ ও অনুদানের হিসাব যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়নসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের জন্য সিএ ফার্ম নিয়োগ করে সংস্থাটি। এ নিয়ে হুসাইন ফরহাদ অ্যান্ড কো-চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস ফার্মের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
অডিট ফার্ম নিয়োগের জন্য বোর্ডের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ সম্পর্কে ওয়াসা বোর্ড কিছুই জানে না।’
ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বলেন, ‘বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। আমাকে লিখে দেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে খোঁজ নিয়ে জানাব।’ পরে তার কথা অনুযায়ী বিষয়টি উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হয়। কয়েকবার কলও করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ কাজই ওয়াসা বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেন এমডি তাকসিম এ খান। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এমডি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া এবং সেখানে অবস্থানকালে ভার্চুয়ালি অফিস করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করে দেয় ওয়াসা বোর্ড। তাকে দুই মাসের পূর্ণ ছুটি দেওয়া হলেও ভার্চুয়ালি অফিস করার বিষয়টি নাকচ করে দেয় বোর্ড। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর ছুটির আবেদন করেন তাকসিম এ খান। সেই ছুটির আবেদনে ওয়াসা বোর্ডের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে ভার্চুয়ালি অফিস করবেন বলে জানানো হয়।