প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ২২:১৫ পিএম
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩ ২২:১৬ পিএম
অস্ত্রধারী বডিগার্ড নিয়ে ঘুরতেন মোশা বাহিনীর প্রধান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা। প্রবা ফটো
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা বাহিনীর প্রধান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা জামিন পেয়েছেন। প্রায় আড়াই মাস কারাগারে থাকার পর সোমবার (২১ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে তার ‘বেইল বন্ড’ পৌঁছানোর পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার নাশির আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তার বেইল বন্ড কারাগারে পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আদালত থেকে বেইল বন্ড আসায় এবং অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকায় মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মোশা বাহিনীর প্রধান মোশার জামিনে মুক্তি পাওয়ার খবরে রূপগঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি মুক্তি পাওয়ায় এলাকায় নতুন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখারও অনুরোধ করেছেন তারা।
ভারতে পালানোর সময় গত ৩১ মে রাতে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে মোশাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১ এর একটি দল। পরদিন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে দুটি এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়।
সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে মোশা ও তার বাহিনীর ২৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৮০ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন এসআই আমিনুর রহমান। ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ আবু মিয়া, জায়েদা খাতুন, মারুফা খাতুন, আলো, আনোয়ার হোসেন ধলকু, বদিউজ্জামান বদি, সাখাওয়াত উল্লাহ, নীরব, স্বাধীন, নাজমুল, ওয়াসিম, রিফাত, রায়হান, দেলোয়ার, তাজেল, রুবেল, লিটন, আমির হামজা, জয়নাল, শাহাজালাল, নুর জাহান, সালেহা, আলী আজগর ও এমারত।
এজাহারে বাদী জানান, মোশার হুকুমে ও নেতৃত্বে আসামিরা অস্ত্রসহ পুলিশের কাজে বাধা, পুলিশের ওপর অতর্কিত আক্রমণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় আসামি আনোয়ার হোসেন ওরফে ধলকুর ছোড়া ইটপাটকেলে পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান, সাখাওয়াত উল্লাহর ছোড়া ইটপাটকেলে পুলিশ পরিদর্শক তন্ময় মণ্ডল, নীরবের ছোড়া ইটপাটকেলে এসআই অলিউল্লাহ, স্বাধীনের ছোড়া ইটপাটকেলে এসআই শহিদুল ইসলাম এবং আসামি নাজমুলের ইটপাটকেলে পুলিশ সদস্য আল-আমিনসহ কয়েক নারী পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় জানমাল রক্ষায় পুলিশ ২২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৪ মামলার আসামি মোশাসহ তার বাহিনীর ৩৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৬০-৭০ জনকে অভিযুক্ত করে অপর মামলাটি করেন।
বাদীর অভিযোগ, পিস্তল, ককটেল, লোহার রড, চাপাতি, রামদা নিয়ে গ্রামবাসীকে ঘেরাও করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মোশা বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদার টাকা না পেয়ে গ্রামবাসীর ওপর তারা হামলা করে।
এই মামলার আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন ধলকু, আলী আজগর ভূঁইয়া, বদিউজ্জামান বদি, সাখাওয়াত উল্লাহ, নীরব, স্বাধীন, নাজমুল, আব্বাস, ওয়াসীম, রিফাত, রায়হান, দেলোয়ার, অনিক, সুজন, তাজেল, রুবেল, লিটন, আমির হামজা ওরফে ভুট্টু, জয়নাল, কবির, শাহাজাদা, শিহাব, আরমান, কামাল, আলী, সোবহান, নূর ইসলাম, নিলু, এমারত, আমির মিয়া, তৃপ্তি, নাসরিন, আলম তারা, নূরজাহান ও চুমকী।
এর আগে ২৫ মে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকার চিনখলা গ্রামে মোশা বাহিনীর সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। ওই সময় মোশা বাহিনীর গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপরও চড়াও হয় মোশা বাহিনী। পুলিশ মোশাকে গ্রেপ্তার করার পর তার সহযোগীরা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাদের হামলায় পুলিশ ও গ্রামবাসীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত তিনজন।
এসব মামলায় মোশাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে মোশা তার বাহিনী নিয়ে রূপগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জমি দখল, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসার কথা স্বীকার করে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। অবৈধভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। এলাকার সাধারণ জনগণ মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীদের ভয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকত। মোশার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র, প্রতারণা ও মাদকসহ ৪৩টির বেশি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে তিনি একাধিকবার কারাগারেও গেছেন।
র্যাব জানায়, মোশারফ স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি ‘মোশা বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তোলেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন।
রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মজনু মিয়া নামে একজন জানান, মোশা এলাকায় ফেরত আসা মানেই আবার এলাকা সন্ত্রাসীদের দখলে চলে যাওয়া। মোশা সবসময় সশস্ত্র বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করে। সে এলাকায় চাঁদাবাজি, জমিদখল ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। সে মে মাস থেকে প্রায় আড়াই মাস কারাগারে ছিল। এই আড়াই মাস এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল। এখন আবার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল মিয়া জানান, মোশা জামিনে ছাড়া পেলেও পুলিশের উচিত তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা। নজরদারিতে না থাকলে সে এলাকায় খুনখারাবিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে।