× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মোবাইল ব্যাংকিং

বিকাশ-নগদে হিসাব খুলে প্রতারণা, জানে না গ্রাহক

আলাউদ্দিন আরিফ

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৫৮ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

খোরশেদ আলম বাংলালিংকের মার্কেট অপারেশন ডিস্ট্রিবিউটরের একজন এজেন্ট ও বাংলালিংকের সিম নিবন্ধক। এজেন্ট হওয়ার সুযোগে তিনি রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় গিয়ে সিম বিক্রির সময় কৌশলে লোকজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। এসব ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে পরে আরও সিম ইস্যু করেন। এসব সিম তিনি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতেন বিকাশ এজেন্ট আনোয়ার ও ফয়সালের কাছে। পরে এসব সিম ব্যবহার হতো প্রতারণার কাজে। বিকাশ এজেন্ট বা কর্মকর্তা সেজে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো। 

সম্প্রতি মিরপুর থানা-পুলিশের তদন্তে এমন একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে। থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘কিছুদিন আগে খোরশেদ আলম, ফয়সাল হাসান ফাহিম, আনোয়ার পারভেজ ভূঁইয়া, মমিনুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম নামে পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করি। তাদের কাছ থেকে যেসব সিম উদ্ধার করা হয় সেগুলো যেসব গ্রাহকের নামে ইস্যু করা তারা জানেনই না যে, সিমগুলো তাদের নামে তোলা। এসব সিমে বিকাশ, নগদ বা রকেট অ্যাকাউন্ট খুলে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা হতো।’

এভাবেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষের নামে ইস্যু করা সিম দিয়ে চলছে অভিনব প্রতারণা। প্রকৃত গ্রাহকরা জানেই না যে প্রতারণার কাজে যেসব সিম ব্যবহার হচ্ছে, সেটি তাদের নামে ইস্যু করা। এ রকম বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

অন্যের নামে সিম তুলে বিকাশ, নগদসহ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারক চক্রের বিষয়ে তদন্ত করছে সিআইডির শরীয়তপুর জেলা। সিআইডি শরীয়তপুরের পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘একটি মামলার তদন্তে নেমে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার বড় শ্যামনগর গোতামারি এলাকার বাসিন্দাদের নামে ইস্যু করা বেশকিছু সিম পেয়েছি। যেগুলো বিকাশ, নগদ ও রকেট হিসাব খুলে প্রতারণার কাজে ব্যবহার হচ্ছিল। অথচ যাদের নামে সিম ইস্যু করা, তারা এসবের কোনো তথ্যই জানে না।’ মামলাটির তদন্ত করছেন জেলা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, কারা এসব সিম দিনাজপুরে গিয়ে বিক্রি করেছে, সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

সিআইডির তদন্তে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রবি সিম বিক্রি করতে ওই গ্রামে যান তিন যুবক। তারা ২০ টাকা করে প্রায় ১০০টি সিম বিক্রি করেন। ওই সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ, ছবি, চোখের মণির ডিজিটাল চিত্রসহ বিভিন্ন তথ্য নেওয়া হয়। ওই গ্রামের কয়েকজনের নামে ইস্যু করা সিম দিয়ে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

সিআইডির তদন্তে আরও দেখা যায়, যাদের নামে সিম ইস্যু হয়েছে তাদের কেউ ভিক্ষুক, কেউ দিনমজুর, কেউ স্কুলশিক্ষক কেউ আবার গৃহিণী। যাদের নামে সিম ইস্যু করা হয়েছে তাদের নামে ‘বিকাশ’, ‘রকেট’ ও ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। অনেকে স্থানীয় গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গিয়ে সিম বন্ধ করেছেন। থানায় জিডিও করেছেন। কিন্তু দেখা যায় একজন ব্যক্তি যে সিম ব্যবহার করছেন, সেই সিমের বাইরেও প্রত্যেকের নামে দুই থেকে তিনটি সিম ইস্যু হয়েছে। যা তারা জানতেন না।

চিরিরবন্দর থানার ওসি বজলুর রশীদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সিআইডি শরীয়তপুর থেকে বড় শ্যামনগর গোতামারি এলাকার কিছু ব্যক্তির ঠিকানা যাচাই ও তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কি না, জানতে চেয়ে চিঠি আসে। আমরা ঠিকানা যাচাই করে সঠিক পাই এবং সে অনুযায়ী সিআইডি শরীয়তপুরকে জানাই।’ তিনি আরও জানান, যাদের নামে নোটিস এসেছে তারা দাবি করেছেন, কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। তারাই এ বিষয়ে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে।

মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা কোম্পানির মিডিয়া বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিম কিনে কেউ প্রতারিত হয়ে থাকার অভিযোগ গ্রাহকের কাছ থেকে পেলে আমরা সিম বন্ধ করে দিই।’ রবির অপর একজন কর্মকর্তা জানান, নিয়ম মোতাবেক একই নামে একাধিক সিম ইস্যু হলে সেটা শনাক্ত করা মুশকিল। অনেকেই এক নামে একাধিক সিম কিনে থাকেন। এনআইডির সঙ্গে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে সিম চালু করা হয়। 

নগদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে একটি এনআইডির বিপরীতে নগদে একটাই হিসাব খোলা যায়। যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। কারও নামে চারটি সিম থাকলেও নগদ অ্যাকাউন্ট একটাই করা যাবে। 

বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘একটি এনআইডি দিয়ে অনেকেই একাধিক সিম ব্যবহার করেন। কিন্তু একটি এনআইডি দিয়ে বিকাশে একটাই হিসাব খোলা যায়। একটি এনআইডির বিপরীতে একটির বেশি হিসাব খোলার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের কোনো গ্রাহকের হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন না হলে কেউ টাকা পাঠিয়ে প্রতারণার শিকার হলে আমাদের পক্ষে সেটা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।’

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিমের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, গ্রাহকের উচিত অননুমোদিত বা রাস্তাঘাট থেকে সিম না ক্রয় করা। কাস্টমার কেয়ার বা ফোন কোম্পানির স্বীকৃত ডিলার থেকে সিম নেওয়া উচিত। সেখানে কোনো প্রতারণার শিকার হলে আইনের আওতায় আনা যায়। কিন্তু রাস্তাঘাটে বা হকারি করে যারা সিম বিক্রি করে পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। তাই সেখানে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। 

সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার বাছির উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিকাশ, নগদ, রকেটসহ এমএফএস গ্রাহকের প্রতারণা বা অনিয়মের বিপুলসংখ্যক অভিযোগ আমরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছি এবং সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিকারের জন্য আমরা সুপারিশ করছি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা