বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:২৭ এএম
প্রতীকী ছবি
পুটয়াখালীর বাউফলে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং কালচার। মাদক বাণিজ্য ও সেবন, চাঁদাবাজি ও খুনের ঘটনার সঙ্গে সহজেই জড়িয়ে পড়েছে উঠতি বয়সি কিশোর-তরুণরা। বেপরোয়া এই কিশোরদের প্রধান অস্ত্র হয়েছে সুইচগিয়ার নামক ধারালো ছুরি। গত কয়েক মাসে উপজেলায় একাধিক হত্যার ঘটনায় এ সুইচগিয়ার নামক ছুরির ব্যবহার হওয়ায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
সম্প্রতি উপজেলায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের একাধিক হামলায় কিশোরেরা সুইচগিয়ার ব্যবহার করছে। শুধু হামলাই নয়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, দলীয় মহড়া, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে সংঘাত, এমনকি বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ভীতি সৃষ্টিতে ভাড়ায় যাচ্ছে এসব কিশোর। এতে তাদের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে সুইচগিয়ার।
বাউফল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাতে উপজেলার আদাবাড়িয়া মিলঘর এলাকায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আল-আমিন নামে এক যুবকের বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করা হয়। ছুরির আঘাতে ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে আল-আমিন মারা যায় বলে জানায় পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। অভিযোগ উঠেছে, ওই ঘটনার নিহত আল-আমিনের চাচা মোতালেব মৃধা এবং তার ১৭ বছর বয়সি ছেলেসহ একাধিক কিশোরও হামলায় অংশ নেয়। কিশোরদের সুইচগিয়ার নামক ছুরির আঘাতেই আল-আমিনের মৃত্যু হয়।
চলতি বছর ২২ মার্চ উপজেলার সূর্যমণি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মারুফ ও নাফিজ নামে দুই শিক্ষার্থী একই বিদ্যালয়ের একদল কিশোরের ছুরিকাঘাতে খুন হয়। কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা সুইচগিয়ার নামক ছুরি দিয়ে কুপিয়ে নাফিজ ও মারুফকে হত্যা করে। নাফিস ও মারুফ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ারসহ সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত সুইচগিয়ার ছুরি।
২০২০ সালের ২৪ মে পৌর শহরে থানাসংলগ্ন ডাকবাংলোর সামনে একটি তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় যুবলীগ নেতা তাপস দাসকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তাপস। তাপসের ওপর হামলার একটি ভিডিও সেসময় ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, সাইমুন নামে এক কিশোর তাপসকে সুইচগিয়ার দিয়ে আঘাত করছে। পরে ওই সুইচগিয়ারসহ সাইমন গ্রেপ্তার হয়।
২০২২ সালের ২ আগস্ট, উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর বাজারে যুবলীগ নেতা রুমন ও ইশাদকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দলীয় কোন্দলের জেরে ওই খুনের ঘটনা ঘটে। এ হত্যার ঘটনাতেও সুইচগিয়ার চাকুর ব্যবহার হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার এ.এস.এম সায়েম বলেন, বিশেষভাবে তৈরি এসব ছুরি সহজেই বহনযোগ্য। ছুরির ধারালো অংশ একটি কভারে ঢোকানো থাকে আর হাতলের কাছে থাকে সুইচ। যা চাপলেই দ্রুত ধারালো অংশ বের হয়ে আসে। ছুরিটি অত্যন্ত ধারালো ও বিষাক্ত হওয়ায় সহজেই গুরুতর জখম হন আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, সুইচগিয়ার নামক ছুরির আঘাতে জখম ব্যক্তির শরীরের রক্তনালি সহজেই কাটা পড়ায় শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এতে জখম ব্যক্তির রক্তক্ষরণ রোধে বেগ পেতে হয়। যে কারণে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বাউফল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বশার তালুকদার বলেন, খেলাধুলার চর্চা না থাকায় উঠতি বয়সি কিশোর-তরুণরা দিনদিন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। মোবাইলের সহজলভ্যতায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম দেখে নিজেরাও জড়িয়ে পড়ছে নানান অপরাধে। এসব কিশোর তুচ্ছ ঘটনায় প্রাণঘাতী সুইচগিয়ার নামক ছুরির ব্যবহার করছে; যা উদ্বেগের।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ এটিএম আরিচুল হক বলেন, শুধু পুলিশের পক্ষে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সামাজিক ও নাগরিক সচেতনতা এবং অভিভাবকদের দায়িত্ব রয়েছে। এসব কিশোর-তরুণ কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, নগদ টাকা কোথায় পায়Ñ সে দিকে পরিবার থেকেই নজর রাখতে হবে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগই পারে কিশোর গ্যাং কালচার রোধ করতে।