প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৩ এএম
রমনা বিভাগের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন অর রশীদ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন অর রশীদ ইস্যুতে পুলিশে চলছে নানা সমীকরণ। বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা প্রকাশ্যে তার পক্ষ নিয়েছেন। আবার বড় একটি অংশ বলছে তিনি বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
হারুনকাণ্ডে বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন। তিনি বলেন, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত এক সভা শেষে মন্ত্রী বলেন, ‘হারুন সম্পর্কে আমাদের তাৎক্ষণিকভাবে যেটা করার, আমরা সেটা করেছি। এখন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। সবই একটা প্রক্রিয়ার অংশ। তাৎক্ষণিকভাবে যেটার দরকার ছিল, আমরা তাকে সাসপেন্ড করেছি। এখন তদন্ত শুরু হয়ে তার নামে যদি মামলা হয়ে থাকে, সে মামলাগুলোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমার জানা মতে যারা ভিকটিম হয়েছেন, তারা এখনও মামলা করেননি। মামলা করলে মামলার তদন্ত হবে। আর যেহেতু ঘটনা একটা ঘটেছে, এটার বিভাগীয় মামলা তো হবেই। সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই হবে। হারুন ইস্যুতে সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিব্রত কি নাÑ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে। যে ভুল করে, তার শাস্তি হয়; এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সরকারের সিদ্ধান্তÑ সে যেই হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সে যদি অপরাধ করে, শাস্তি তাকে পেতেই হবে, এটা হলো মূলকথা।’
ডিএমপির এডিসি সানজিদাকে রংপুর বদলি করার খবর অনেক গণমাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘না, এটা স্রেফ গুজব।’
এদিকে বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপকমিশনার (ডিসি) বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুন ও হারুন অর রশীদ একই রাজনৈতিক আদর্শের। তারা পাশাপাশি থেকে শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করেছেন। দীর্ঘসময় একত্রে কাটিয়েছেন। তাদের দুজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে, পুলিশে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক। তারা বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষায় হারুন অর রশীদের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিতে পারছেন না। তবে তারা চান হারুনের অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি হওয়া জরুরি। ওই ডিসি আরও বলেন, সানজিদা আফরিন নিপাকে নিয়ে বিতর্ক পুলিশ প্রশাসনে নতুন নয়। আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক সহকর্মীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। এসব বিষয়ে ব্যাচমেট ও সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়েছে। এ ছাড়া এর আগে তার বিষয়ে একাধিক অভ্যন্তরীণ তদন্ত হয়েছে। যদিও রহস্যজনক কারণে সেসব তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বারডেম হাসপাতালে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার কয়েক দিন আগেও হারুনের কার্যালয়ে (এডিসি রমনা জোনাল অফিস) সানজিদা আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় কাটান। বিষয়টি তার স্বামী মামুনের কানে পৌঁছায়। সেই থেকে মামুনের বন্ধু পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয়।
ডিএমপির ডিসি পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা আলাপকালে বলেন, বারডেম হাসপাতালের ঘটনা যাই ঘটেছে সেটা তেমন কিছু হতো না। নিজেদের মধ্যে একটা মীমাংসা হয়ে যেত। কিন্তু বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৯৯৯-এ কল দিয়ে বিষয়টি শাহবাগ থানায় জানানোর কারণে জটিলতা তৈরি হয়।
এ ছাড়া ডিএমপির এক কর্মকর্তা গণমাধ্যম ডেকে এনে কৌশলে রাষ্ট্রপতির এপিএসের নাম প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে সানজিদা তার স্বামীর বিরুদ্ধে একাধিক গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। ফলে বিষয়গুলো জটিল রূপ নিয়েছে।