× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সরেজমিন রূপগঞ্জের নাওড়া ইছাখালী বরুনা

নৌকায় ভোট দিলে এলাকাছাড়া করার হুমকি সন্ত্রাসীদের!

প্রবা প্রতিবেদক, রূপগঞ্জ থেকে ফিরে

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:১৬ পিএম

আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:১৬ পিএম

মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া ওরফে মোশা। প্রবা ফটো

মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া ওরফে মোশা। প্রবা ফটো

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রূপগঞ্জের রাজনীতি। এরই মধ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে এই বলে হুমকি দিচ্ছে যে, ‘ভোট দিতে গেলে এলাকা ছাড়া করার পাশাপাশি প্রাণে মেরে ফেলা হবে।’ এসব সন্ত্রাসী নৌকায় ভোট দিলে নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটেরও হুমকি দিচ্ছে। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বেশি। ফলে পুরো রূপগঞ্জে এক ভয়ার্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া, বরুনা, ছনপাড়া, ইছাখালীসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ সর্বস্তরের ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এসব হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতির কথা জানান। তারা বলেন, রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেন ওরফে মোশার ক্যাডার বাহিনী এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। তারা নৌকা মার্কার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভয়ানক আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।এই অবস্থায় ভোটারদের দাবি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা। কারণ বড় একটি শিল্পগ্রুপ আশ্রিত মাস্তান বাহিনী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষ নিয়ে ভোটারদের ‍হুমকিগুলো দিচ্ছে। যার নেতৃত্বে আছে ৪২ মামলার আসামি রূপগঞ্জ থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা বাহিনীর প্রধান মোশা। 

আলাপকালে নাওড়া গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ শামসুন্নাহার বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার ছেলে মোটরসাইকেলে চড়ে যাচ্ছিল। তখন তার ওপর হামলা করে কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোশা বাহিনীর লোকজন। তাকে চাপাতি ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়েছে। এমনকি তারা আমার ছেলের হাত ও পা ভেঙে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমার দুই ছেলে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করছে। এ নিয়ে মোশা বাহিনী আমার ছেলেকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা ভয়ের মধ্যে আছি। সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেদের মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। তারপরও আমরা নৌকায় ভোট দিব। নৌকায় ভোট দিতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চাই।’

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন শাজাহান ভূঁইয়া। তার মার্কা কেতলি। তিনটি হত্যাসহ বেশ কিছু মামলার আসামি শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই দলীয় পদপদবি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি এলাকায় মোশাসহ দাগী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিচ্ছেন। সন্ত্রাসীরা এখন শাজহাজান ভূঁইয়ার হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। 

নাওড়া গ্রামের নতুন ভোটার কলেজছাত্র লিখন মিয়া। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এবার প্রথমবার ভোট দিতে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ভোট দেওয়ার একটি সুন্দর পরিবেশ করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন দেখে আমি নৌকাতে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশার বাহিনী বিভিন্নভাবে আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির আগেই যাতে আমি এলাকা ছেড়ে চলে যাই। ভোটের সময় এলাকায় থাকলে আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিবে। আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কিত। শুধু আমি নই, আমার মতো অন্য যারা প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন তাদেরকেও একইভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। এখানে যারা নৌকার সমর্থক তাদের সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে।’ কারা এই সন্ত্রাসী বাহিনীর মদদদাতা জানতে চাইলে লিখন বলেন, এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তার নেপথ্য গডফাদার হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপ রয়েছে বলে আমরা সবাই জেনেছি। মোশা বাহিনীর ভয়ে এলাকার অনেক মানুষ ইতোমধ্যে এলাকা ছেড়ে দিয়েছে। তাই আমরা নাওড়াবাসী প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। যাতে করে নির্বাচনে আমরা পছন্দের প্রার্থী ও নৌকা মার্কায় ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারি।’ 

নাওড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের রিপন সরকার বলেন, ‘নৌকা আমাদের মার্কা। বাবা-দাদার আমল থেকে আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থন করি। আজীবন নৌকায় ভোট দিয়েছি। কিন্তু এবারে নির্বাচনে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়কে রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা ও তার বাহিনী ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তারা বলছে, ৭ তারিখ নৌকাকে ভোট দিলে আমরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারব না। যদি আমরা কেন্দ্রে যাই, তাহলে আমাদের বড় ধরনের সমস্যা হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাজাহান ভূঁইয়ার সমর্থক সন্ত্রাসী মোশারফ আমাদেরকে বলেছে, আগামী ৭ তারিখ আমরা এলাকায় থাকতে পারব না। আমাদেরকে অন্য জায়গায় চলে যেতে বলেছে। এলাকায় থাকলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে মারাত্মক ভয়ের মধ্যে আছি।’ 

স্থানীয় আইনজীবী যতীন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক খুবই আতঙ্কে আছি। আমরা নৌকা মার্কার লোক। স্বাধীনতার পক্ষের লোক। নৌকায় ভোট দেওয়া ছাড়া আমরা অন্যকিছু ভাবতে পারি না। কিন্তু এবার শাজাহান ভূঁইয়া কেতলি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি খুবই দুষ্ট প্রকৃতির লোক এবং কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি।’ তিনি মানুষের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন, ‘তোমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। তোমরা কেন্দ্রে যাবা না। কেন্দ্রে গেলে ভোটের পর তোমাদের অবস্থা কি হবে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’ যতীন্দ্র ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে কেতলি মার্কা জামানত হারাবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের পদে থাকলেও তিনি একজন ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীর আশ্রয়দাতা হিসেবে চিহ্নিত। তিনি যা বলেন সেটা মানুষকে শুনতে বাধ্য করা হয়। এখন আবার তার পক্ষে যোগ দিয়েছেন ভূমিদস্যু দানব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বসুন্ধরা গ্রুপ। কেতলি মার্কা রূপগঞ্জে বিজয়ী হলে লোকজনের বাড়িঘর, জমিজমা দখল করে নিবে ভূমিদস্যু বসুন্ধরার মালিক শাহ আলম। তাই এরা কোটি কোটি টাকা ঢালছে শাহজাহান ভূঁইয়ার পেছনে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব অপকর্মের প্রতিকার চাই। আমরা নিরাপদে নির্বিঘ্নে নৌকায় ভোট দিতে চাই।’ 

নাওড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষ্মী রাণী বলেন, ‘নৌকা আমার স্বাধীনতার মার্কা। নৌকায় ভোট দিতে কেউ বাধা দিতে এলে তাকে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করব। সে সন্ত্রাসী মোশা হোক আর যেই হোক। আমরা নৌকায় ভোট দিব এবং নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করব।’ 

এভাবেই নাওড়া ও বরুনা গ্রামে হিন্দুধর্মের অনুসারী গৌরাঙ্গ, সুশীল, রামচন্দ্র, হরিপদ, সুধীর, আশাপূর্ণ, অজিৎ, রিপন মন্ডল, লক্ষ্মণ, শিলা রানী পাল, রঞ্জনা, জোৎসা রানী, সবিতা রানী, রীতা রানী, কমলা রানী, দীপালীসহ অনেকেই শাহজাহান ভূঁইয়ার মারাত্মক ভয়ভীতি দেখানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চান। তারা বলেন, নৌকায় ভোট দিতে না পারলে এবং নৌকায় ভোট দিয়ে নিজেদের নিরাপদ মনে না করলে এই গ্রামে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। 

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জোসনা মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা রূপগঞ্জবাসী আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। কিন্তু সন্ত্রাসী মোশা বাহিনী আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে যাতে কেউ না যায় সেজন্য ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক সাহেবের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য কেন্দ্রে যাব, নৌকায় ভোট দিব; যত বাধাই আসুক নৌকাকে বিজয়ী করে আনব। 

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ওজুফা বেগম নাওড়া বাজারে পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, মোশার লোকজন হুমকি দিয়ে বলেছে, নৌকায় ভোট দিলে বাড়িছাড়া করা হবে। বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দিবে। আমরা সাধারণ মানুষ ভয়ে আছি। আমরা রাতবিরাতে চলাফেরা করি। কখন তারা আমাদের কি ক্ষতি করে তা তো বলা যায় না। আমরা ভোট দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের ও এলাকার নিরাপত্তা চাই। এভাবেই রূপগঞ্জের নাওড়া, বরুনা, ইছাখালী ও বড়ালু এলাকার অসংখ্য মানুষ মোশা বাহিনীর ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকির কথা তুলে ধরেছেন।

সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনী ভোটারদের হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে রূপগঞ্জে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর সংস্কৃতি চলতে দেওয়া হবে না। কোনো ধরনের মহড়া, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনের আওতায় আনা হবে। মোশাসহ কোনো সন্ত্রাসী মাস্তানকে পুলিশ একবিন্দুও ছাড় দিবে না। নির্বাচন সামনে রেখে কারও কোনো হুমকি-ধমকি মেনে নেওয়া হবে না।’ কেউ ভোটারদের ভয় দেখালে তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করছি।’ 

ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, নির্বাচনকালে কোনো সন্ত্রাসী ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কাউকে ভয়ভীতি দেখালে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করছি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা