প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:১৮ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৯ পিএম
শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা পরিচয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া দুই প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংগৃহীত ছবি
শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার ও উপসচিব পরিচয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া দুই প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা অনিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত। তাদের বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে মোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা-মেট্রো উত্তরের পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা দুজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অফিসার পরিচয় দিয়ে ছদ্মনামে তারা প্রতারণা করে বেড়াতেন। তাদের একজনের নাম আসাদুজ্জামান মানিক। তিনি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার ফলগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। আরেকজন আব্দুল গফফার। তিনি রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে অবসরে যান। ২০১৯ সালে আসাদুজ্জামান মানিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা ছক আঁকেন। আব্দুল গফফার স্যুট-টাই পরে ভুয়া উপসচিব সেজে ঘুরে বেড়ান। আর আসাদুজ্জামান মানিক প্রোগ্রাম অফিসার সাজেন। এরা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখেন যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি পেন্ডিং আছে, লাইব্রেরিয়ান বা বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া দরকার, সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের নম্বর জোগাড় করে ফোন দেন।’
তিনি বলেন, ‘তারা অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগের চেষ্টা করে ভোলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ স্থাপন করতে সফল হন। পরে তারা ঢাকায় চলে আসেন এবং তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সচিবালয়ের অপর দিকে অবস্থান নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর ১২ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রতারিত ব্যক্তিরা ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা তাদের দেন। পরে বিভিন্নভাবে বিকাশ-নগদের মাধ্যমে বাকি টাকা নেওয়া হয়। টাকা দেওয়ার পরেও যখন কাজ হচ্ছিল না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা খোঁজখবর নেন। তারপর অধিদপ্তরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন এই নামে কেউ নেই। এ বিষয়ে পিবিআই প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায়। পরে ওই প্রতারিত শিক্ষক মামলা দায়ের করলে সেই মামলার সূত্র ধরে একজনকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে এবং উপসচিব পরিচয়ধারী আরেকজনকে উত্তরার একটি ভাড়াবাসা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই দুই প্রতারক ২০১৯ সাল থেকে প্রতারণার কাজটি করে যাচ্ছিলেন। তাদের মাধ্যমে প্রতারিত অনেকে আমাদের কাছে আসছে। আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করব। বর্তমানে আমরা তাদের আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসামিরা বরগুনার পূর্ব হাজার বটতলা সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নাটোরের বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ৮৫ হাজার টাকা, ভোলার উত্তর চরমানিকা লতিফীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জয়পুরহাটের মোহাব্বতপুর আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ আরও অন্যান্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি বাতিল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদ নম্বরে সর্বমোট ৪ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭২ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’