× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বসুন্ধরার পেটে আইসিবির পৌনে তিনশ কোটি টাকা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪২ এএম

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৬ এএম

বসুন্ধরার পেটে আইসিবির পৌনে তিনশ কোটি টাকা

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় পৌনে তিনশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। জামানত জালিয়াতি ও ভুয়া প্রকল্পের অনুকূলে ২৩১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেনি গ্রুপটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে যার সুদসহ দায় ছিল ২৫৮ কোটি টাকা। আর বর্তমান দায় ২৮০ কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

তথ্যানুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজারে অন্যতম বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এতে নিরীক্ষা পরিচালনা করে দেশের সর্বোচ্চ অডিট প্রতিষ্ঠান মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)। ২০২৩ সাল ভিত্তিক ওই নিরীক্ষায় বসুন্ধরার ঋণ জালিয়াতির তথ্য বেরিয়ে আসে। এ সংক্রান্ত নথিপত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে রয়েছে। 

নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আইসিবির প্রধান কার্যালয়ের ২০১৭-১৮ হতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ফান্ড ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ইস্যুভিত্তিক নিরীক্ষা চালায় সিএজি। এ সময়ে ইমপ্লিমেন্টেশন ডিপার্টমেন্টের নথি পর্যালোচনায় আনা হয়। এতে দেখা যায়, সহজামানত অতি মূল্যায়নপূর্বক পুঁজিবাজারের বাইরে ডিবেঞ্চার খাতে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায় না হওয়ায় ২৫৮ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার ৭০২ টাকা অনাদায়ি রয়েছে।

আইসিবির ফান্ড ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনাকালে নিরীক্ষক দলের কাছে অনিয়মের চিত্র ধরা পড়ে। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আইসিবি পরিচালনা পর্ষদের ৫০০তম বোর্ড সভায় বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোং লিমিটেডের অনুকূলে ২৩১ কোটি ২২ লাখ ১৭ হাজার ৯১২ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সুদ ধরা হয় ১১ শতাংশ। ঋণের চুক্তি অনুযায়ী বিটুমিনের পাশাপাশি ডিজেল, ফার্নেস অয়েল এবং ন্যাপথা উৎপাদনের জন্য এ অর্থ দেওয়া হয়েছিল। এ অর্থ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট আমদানি দ্রব্য ও স্থানীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থ উত্তোলনের তিন বছর পরও প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যায়নি। তাই নিরীক্ষা দলের কাছে ঋণটি জালিয়াতিপূর্ণ হিসেবে প্রমাণিত হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গ্রাহক নির্বাচনে ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করে নিরীক্ষা দল। 

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিনিয়োগের শর্ত অনুযায়ী আসল অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ডিবেঞ্চারের অর্থ বিতরণের তারিখ থেকে এক বছর রেয়াতি (গ্রেস পিরিয়ড) সুবিধার পর সমান ২০টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সুদের ক্ষেত্রে কোনো গ্রেস পিরিয়ড থাকবে না। অর্থাৎ অর্থ বিতরণের তারিখ হতে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ১১ শতাংশ সুদ হারে পরিশোধযোগ্য। অথচ ঋণটি মেয়াদোত্তীর্ণের পরও সুদাসলে ২৫৮ কোটি ২০ লাখ ২০ হাজার ৭০২ টাকা অনাদায়ি থাকে। 

তবে আইসিবি সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঋণটির বর্তমান দায় ২৮০ কোটি টাকার বেশি। অর্থ পরিশোধ না করায় ২০২০ থেকে ২০২৩ সময়ে সুদ আসলে এ অঙ্ক দাঁড়ায়। 

নিরীক্ষায় দেখা যায়, ঋণটি বিতরণ করতে গিয়ে ব্যাপক জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জামানত জালিয়াতি বড় ঘটনা। ভাটারা থানার জোয়ার সাহারা মৌজা থেকে ২৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ ভিটি জমি রেজিস্টার্ড মর্টগেজ করা হয়েছে, যা আইসিবি কর্তৃক মূল্যায়ন করা হয়েছে ৩২১ কোটি ৫ লাখ টাকা। কিন্তু সাবরেজিস্ট্রার অফিসের নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী জমির মূল্য দাঁড়ায় ১১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বন্ধকি সম্পত্তির অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে।

বিধি অনুযায়ী, নিরাপত্তা জামানতের পরিমাণ বিনিয়োগের ১ দশমিক ৫০ গুণ হওয়ার কথা থাকলেও এ ঋণের ক্ষেত্রে শর্ত পরিপালন হয়নি। এক্ষেত্রে ২৩১ কোটি ২২ লাখ ১৭ হাজার ৯১২ টাকা বিতরণের বিপরীতে ১১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার সহজামানত গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জামানত ঘাটতি ২৩৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

নিরীক্ষা দল প্রতিবেদনে চিহ্নিত করেছে, ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানটির পুঁজিবাজারে কোনো অংশগ্রহণ না থাকা সত্ত্বেও ডিবেঞ্চার খাতে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করেছে আইসিবি। তাই অডিট আপত্তি দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অর্থ আদায়ের সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা দল।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে সরাসরি ও অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। তবে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল প্রধান কার্যালয়ে এমডির দপ্তরে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এ সময় আইসিবির রিকভারি বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অডিট আপত্তি দেওয়ার ঘটনাটি সঠিক। তবে ইতোমধ্যে আমরা ঋণটি সমন্বয় করতে পেরেছি। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।’

২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অর্থবছরজুড়ে আইসিবি ঋণের অর্থ উত্তোলন করেছে ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। তবে প্রিফারেন্স শেয়ার, বন্ড ও ডিবেঞ্চার খাতে উত্তোলন হয়েছে মাত্র ৪০৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে আলোচিত ঋণ সমন্বয় সংক্রান্ত আইসিবির দাবির যৌক্তিকতা নেই। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট আদায় হয়েছিল ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। 

২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে আইসিবির মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিভেঞ্চার খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ২১ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ২০৮ টাকা। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতের ঋণের স্থিতি একই পরিমাণ ছিল। অর্থাৎ গেল অর্থবছরে ডিবেঞ্চার খাতে ঋণের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেনি। তাই আলোচিত ঋণ সমন্বয়ের তথ্যটি আইসিবির বার্ষিক প্রতিবেদনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণের চাপে পুঁজিবাজারে অন্যতম বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২৩৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ডিপোজিট হিসাবে রাখা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ আটকে থাকার ঘটনায় আর্থিক সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। এসব প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না আইসিবি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে গ্রাহকের ফিক্সড ডিপোজিটের (স্থায়ী আমানতের) মেয়াদ শেষ হলেও টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তাই জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া মোটা অঙ্কের এ ঋণের অর্থ জরুরি ভিত্তিতে আদায় করা গেলে প্রতিষ্ঠানটির তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

নাম প্রকাশ না করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পেশিশক্তি কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট করছে বড় শিল্প গ্রুপটি। কিন্তু তাদের লাগাম টানতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ তারা জালিয়াতির অর্থ ব্যবহার করে ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে।’

আর্থিক খাতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একের পর এক জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর একপেশে আচরণ পরিহার করা উচিত। আইনের চোখে যারাই অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ সুশাসন নিশ্চিত না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। কীভাবে এসব ঋণ বেরিয়ে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা না হলে আর্থিক খাতে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা