ক্যাম্পস
সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক ও রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৫ এএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৯ এএম
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্র। ছবি : সংগৃহীত
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় শিক্ষক রায়হান শরীফের বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে শরীফকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও একটি পিস্তল তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই নিয়ে তার কাছ থেকে মোট দুটি অবৈধ পিস্তল উদ্ধার করা হলো। তা ছাড়া তার বাসা থেকে ৮১ রাউন্ড গুলি, চারটি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশি কাতানা (লম্বা তলোয়ারবিশেষ), ১০টি অত্যাধুনিক বার্মিজ চাকু ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলহাজ উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হবে।’ এর আগে সোমবার রাতে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় শিক্ষক রায়হান শরীফের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। গতকাল সকালে তারা কলেজের সামনের রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন চালান। এ সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীকে গুলি করার পর শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ আসছে। নিজের কাছে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র রাখার পাশাপাশি তিনি এসব অস্ত্র দিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন করতেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ছাত্রছাত্রী।
সোমবার বিকালে কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অষ্টম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফ। ঘটনাস্থল থেকে তাকে অস্ত্রসহ আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি কোর্সের ভাইভা চলছিল। তখন শ্রেণিকক্ষে ৪৫ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। হঠাৎ সেখানে ঢুকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গুলি ছুড়লে তা তমালের ডান পায়ে বিদ্ধ হয়। রাত সোয়া ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা মো. আবদুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার ছেলের সহপাঠীরা জানায়, আমার ছেলের আইটেম পরীক্ষা কলেজের একাডেমিক ভবনের চতুর্থ তলায় ডা. সামাউন নূরের কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। পরীক্ষা চলাকালে বেলা ৩টার দিকে আসামি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অহেতুক বকাবকি করেন। একপর্যায়ে ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। গুলিটি আমার ছেলের ডান পায়ের ঊরুর ওপরের অংশে লেগে গুরুতর জখম হয়। সহপাঠীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে চাইলে আসামি অস্ত্র উঁচু করে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বলেন, তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস, তাহলে তোদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলব। তৎক্ষণাৎ ছেলের বন্ধুরা ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে সিরাজগঞ্জ থানার পুলিশ ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিকে অস্ত্রসহ থানায় নিয়ে যায়।
একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি কলেজের ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেন এবং ছাত্রদের প্রায়ই ভয়ভীতি দেখান। এমনকি রায়হান শরীফ কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বে নিজস্ব ক্ষমতা দেখিয়ে ফরেনসিক বিভাগে ক্লাস নিয়ে থাকেন। তিনি প্রায়ই ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করেন বলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
শিক্ষার্থীকে গুলি করার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রের বাবা একটি মামলা দায়ের করেছেন। আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দায়ে আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরপর তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
রাজশাহী মেজিকেল কলেজের (রামেক) ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রায়হান শরীফ। তার সম্পর্কে রামেক অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, ছাত্রজীবন শেষে শরীফ রাজশাহী মেডিকেল কলেজে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর তিনি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সিরাজগঞ্জে বদলি হন। অধ্যক্ষ বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই শরীফ বেপরোয়া ছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। যেখানে ছাত্ররাই আমাদের প্রাণ। ক্লাসে যেখানে বেত নিয়ে ঢোকাই নিষেধ, সেখানে অস্ত্র নিয়ে ঢোকাটা চরম অন্যায়। মানসিক ভারসাম্যহীন না হলে বা ডিপ্রেশনে না থাকলে এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। আমার ধারণা তিনি নিজের চিকিৎসা করাননি।’