মুনিয়া হত্যা মামলা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৩ এএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৫ এএম
মোসারাত জাহান মুনিয়া ও সায়েম সোবহান আনভীর। ফাইল ফটো
কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। তবে বাদীপক্ষ বলছে, আগের শুনানিতে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন নিয়ে আদালত উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, রায় তাদের পক্ষে আসবে। কিন্তু বিচারক তাদের বিস্মিত করেছেন। ন্যায়বিচার পেতে এখন তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
বুধবার (২০ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শওকত আলীর আদালত ওই আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদী যে নারাজি দিয়েছেন সেটি আদালত গ্রহণ করেননি। বেলা ৩টায় বাদীর আবেদন নাকচ করে আদেশ দেন বিচারক।
তিনি আরও বলেন, আদেশের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, মুনিয়ার সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা আছে সে আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া যে রুমে তার মরদেহ পাওয়া গেছে সেই কক্ষের দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। মেয়েটির পরিধেয় পোশাকে পুরুষের স্পার্ম পাওয়া গেছে, এ কথা ঠিক আছে। কিন্তু সেই স্পার্ম কার সেটি পরীক্ষা করা হয়নি। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বিচারক পিবিআইয়ের প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন।
মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে প্রধান করে ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেছিলেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। মামলাটি সে সময় তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন আদালত। সংস্থাটি তদন্ত করে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী। সেই নারাজির শুনানি এক বছরেরও বেশি সময় হয়নি। সবশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি নারাজির শুনানির তারিখ পড়লে আদালতে পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে মামলা নেওয়ার আদেশ চান বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। সেই দিন নথি পর্যালোচনা করে বিচারক শওকত আলী ২০ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন। পরে শুনানি ১০ দিন এগিয়ে এনে ১০ মার্চ ঠিক করেন। ওই দিন শুনানিতে বাদীর জবানবন্দি শোনেন বিচারক। দুই শুনানিতে বিচারক উষ্মা প্রকাশ করেন মামলার তদন্ত ও পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে। মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় এত আলামত থাকার পর কীভাবে মূল আসামিসহ অন্যদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তোলেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, মামলার আসামি অত্যন্ত প্রভাবশালী। শুরু থেকে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল আসামিপক্ষ। তারপরও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায়, আমরা বেলা পৌনে ১১টার দিকে আদালতে উপস্থিত ছিলাম। বিচারক ১১টার দিকে এজলাসে আসেন। কোনো কিছু না বলে তিনি আদেশ বিকালে দেবেন জানিয়ে এজলাস ছেড়ে চলে যান। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে বিচারক বাদীর নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন।
তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ে যখন বিচারক আদেশ না দিয়ে এজলাস ত্যাগ করেছেন তখনই আমাদের মনে হয়েছে ন্যায়বিচার পাব না। সেই আশঙ্কার কথাই সত্যি হলো। আমরা মামলাটি গ্রহণ করার জন্য যেসব যুক্তি ও তথ্যপ্রমাণ ছিল, সেগুলো যথাযথভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছি। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেছি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আদেশ আমাদের পক্ষে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। আমরা বিচারকের আদেশের কপি হাতে পেলে বুঝব তিনি কোন বিবেচনায় বাদীর আবেদন খারিজ করেছেন। আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।
বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি। এখানে তার চরিত্র হরণে বেশি মনোযোগী ছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাদের প্রতিবেদনে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বেশি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল গুলশানে ইব্রাহিম আহমেদ রিপনের বাড়ির ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফ্ল্যাট থেকে একটি ডায়েরি পাওয়া যায় সেখানে মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের প্রেম, বিয়ের আশ্বাস, শারীরিক সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে লেখা ছিল। ওই সময় গুলশান থানায় মুনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগে আনভীরকে আসামি করে একটি মামলা হয়। কিন্তু সেই মামলায় আনভীরকে অব্যাহতি দিয়ে গুলশান থানা পুলিশ ১৯ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ১৮ আগস্ট ওই মামলায় পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী ওই সময় পুলিশের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মুনিয়ার পরিবারের করা অনাস্থার আবেদনও খারিজ করে দেন।