নাদিয়া সামদানী
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:২৭ পিএম
২০২২ সালে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা মেম্বার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অর্জন করেন নাদিয়া সামদানী। শিল্পের প্রতি ভালোবাসার জন্যই তিনি এ সম্মান অর্জন করেন। পৃথিবীর টপ ১০০ আর্ট কালেক্টরের মধ্যে রাজীব-নাদিয়া দম্পতির অবস্থান ৪৯তম। তার হাত দিয়ে বাংলাদেশে ২০১২ সালে শুরু হয় আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব, যে উৎসবকে বলা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব। ‘ঢাকা আর্ট সামিট’ নামে পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি পাওয়া এ উৎসবের ষষ্ঠ এডিশন চলছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এ উৎসব নিয়ে কথা হয় ঢাকা আর্ট সামিটের পরিচালক ও সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নাদিয়া সামদানীর সঙ্গে। এখানে কথোপকথনের বিস্তারিত, সঙ্গে ছিলেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সাহিত্য সম্পাদক ফারুক আহমেদ
ফারুক আহমেদ
: এটাতো ষষ্ঠ এডিশন, এ পর্যায়ে এসে নতুন কী যুক্ত হলো?
নাদিয়া সামদানী
: এটা ঢাকা আর্ট সামিটের ষষ্ঠ এডিশন। অনেক গবেষণার ভেতর দিয়ে আমাদের প্রতিটি আয়োজন
করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও আমরা গবেষণার কাজটা দীর্ঘদিন করে তবেই তা প্রদর্শনে গিয়েছি।
এ ক্ষেত্রে প্রদর্শনীর একেক ক্ষেত্রে একেকজন কিউরেটর কাজ করেন। এখানে যে রকম বিভিন্ন
গ্যালারি দেখছেন, একেকটা একেকজন কিউরেটরের করা। একজন কিউরেটর শুধু বাংলাদেশিÑ বিশ্বজিৎ
গোস্বামী। বাকি সবাই বিদেশি এবং তারা বিদেশের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন থেকে এসেছেন। আমাদের
এক্সিবিশনের প্রধান থিম ‘বন্যা’।
ফা. আ. : এবারের
থিম তো বন্যা।বন্যাকে কেন বেছে নিলেন?
নাদিয়া সামদানী : বন্যা বলতে আপনি কী বোঝেন? দেখা যায়, আমরা আমাদের মেয়েবাচ্চার নাম রাখি বন্যা। কিন্তু বিদেশে কেউ তাদের বাচ্চার নাম ফ্লাড রাখবে না। কারণ ফ্লাড মানে বিপর্যয়। কিন্তু বন্যা মানে বিপর্যয় নয়। বন্যা নামের একটি ছোট্ট মেয়ের চোখ দিয়ে এই সম্পূর্ণ এক্সিবিশন দেখা। এখানে কম বয়সের বাচ্চাদের মনোযোগ আকর্ষণের মতো অনেক কাজ রয়েছে। অনেক মিথ বা গল্প আছে যেগুলো আমরা ছোটবেলা থেকে পড়ে বা শুনে বড় হয়েছি। কিন্তু এগুলো আসলে মিথ। দক্ষিণ এশিয়ায় ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র মতো অনেক রূপকথার গল্প আছে। এর অনেকটিকে ফোকাস করে এক্সিবিশন করা হয়েছে। আমাদের এটার নাম ‘আ ভেরি স্মল ফিলিংস’। ওটা আপনার নিজের ভেতরের শিশুটিকে বের করে আনবে। আপনি বুঝতে পারবেন, ওহ! এটা মীনা কার্টুন! এখানে একটা দোলনার মতো করা আছে, দেখেছেন? ওটায় ১২ জন একসঙ্গে উঠতে হবে। একসঙ্গে মিলেমিশে চলতে হবে। একজন সামনে, একজন পেছনে করে চললে কিন্তু ওটা কাজ করবে না। এখানকার সবকিছু, প্রতিটি জিনিসই কিন্তু ডিজাইন কিউরেটেড। এগুলো অনেক চিন্তাভাবনা করে, গভীরভাবে গবেষণা করে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের এক্সিবিশন, ডিজাইন বা লাইটিং দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন।
ফা. আ. : এ
রকম বড় একটা আয়োজনের চিন্তা কীভাবে এলো? এর আগে তো এত বড় করে কেউ এটা করেনি?
নাদিয়া সামদানী
: আমাদের দেশে তো ও রকম কোনো আর্ট মিউজিয়াম নেই। কোনো গ্যালারি নেই। সুতরাং আমাদের
আর্টিস্টদের কী হবে! আমাদের আর্টিস্ট কমিউনিটি কিন্তু অনেক ট্যালেন্টেড। কিন্তু তাদের
কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। সুতরাং ওখান থেকেই আমাদের এ আইডিয়াটা এসেছে। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম
করতে চেয়েছি, যেখানে আর্টের সমন্বয় হতে পারে। ১০-১২ বছর আগে যখন সামিট হতো, তখন আমরা
নিজেরাই করতাম। মানে দেশের বাইরে থেকে কেউ দেখতে আসত না। কিন্তু এখন ঢাকা আর্ট সামিট
আর আগের অবস্থানে নেই। বিদেশ থেকে নিয়মিত মানুষ আসছে এ সামিট দেখতে। আমাদের আর্টকে
তারা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা সামিট এখানে ৯ দিনের জন্য হয়, কিন্তু এগুলো বিভিন্ন
দেশে ট্রাভেল করে দীর্ঘ সময় ধরে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশি আর্টকে বৈশ্বিক
প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া। এখন ১০ বছর পরে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশি আর্ট বিভিন্ন দেশের
বিভিন্ন গ্যালারি অন্তর্ভুক্ত করছে। এ সবকিছু হয়েছে ঢাকা সামিটের জন্য, এটা দৃঢ়ভাবেই
বলা যায়।
ফা. আ. : আপনারা
আর্ট গ্যালারি নিয়ে কি কোনো ধরনের কাজ করছেন?
নাদিয়া সামদানী
: না, আমরা আর্ট গ্যালারি নিয়ে কোনো কাজ করছি না। কারণ আমরা ননকমার্শিয়াল। আমরা কখনও
কোনো কমার্শিয়াল বিষয়ে যুক্ত হব না। কেননা কমার্শিয়াল বিষয়ে যুক্ত হলেই আপনি বায়াসড
হয়ে যাবেন। আমাদের কিউরেটররা তাদের ডিজাইন অনুযায়ী এক্সিবিশন করছেন। কিউরেটররা ডিসাইট
করেন কাজটা কীভাবে করতে হবে। এবং আমরা ননকমার্শিয়াল বলেই এতদূর আসতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে
দেখা যায় আমাদের থিমের সঙ্গে যাদের কাজ যাচ্ছে, তাদের কাজই যুক্ত করা হয়। এর বাইরে
অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী আছেন। হয়তো সামনের আয়োজনে বা পরের আয়োজনে তারা থাকবেন। মূলত
কিউরেটর যিনি, তিনি তার থিমের সঙ্গে যায় সেসব শিল্পকর্মই যুক্ত করেন।
ফা. আ. : ব্রিটিশ
রাজ পরিবারের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা মেম্বার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট পেলেন কিছুদিন
আগে। এ অর্জনে অনুভূতি কেমন?
নাদিয়া সামদানী
: কাজ করার পর এ রকম একটা সম্মান পাওয়া অনেক বড় প্রাপ্তি। ইংল্যান্ডের রানীর কাছ থেকে
পাওয়া পুরস্কার, এটা অবশ্যই একটা বড় প্রাপ্তি। এটা অনেক সম্মানের এবং আমি একটা টাইটেল
পেয়েছি। এটা এমন নয় যে একটা সম্মাননা পুরস্কার হাতে তুলে দিয়েছে। এটা একটা টাইটেল।
এটা আমাদের জন্য একটা বড় অনুপ্রেরণা।