× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাবির হাকার কবিতা

রাজ রিডার

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩ ১২:৩২ পিএম

সাবির হাকার কবিতা

পহেলা মে। শুধুই শ্রমিকদের। হাজার হাজার বছরে সবার জন্য কোনো না কোনো বিশেষ দিন থাকলেও শ্রমিকদের ছিল না কিছুই। আজ আছে শ্রমিক দিবস। কেউ দেয়নি। ছিনিয়ে নিতে হয়েছে।

এতদিন তাদের আওয়াজ থাকলেও ভাষা ছিল না। এখন দুটোই আছে। আর এই ভাষাকে ভাব ও দর্শন দিয়েছে শত শত লড়াকু কবি। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইরানি কবি সাবির হাকা। তিনি পেশায় নির্মাণশ্রমিক; আমাদের ঝিনাইদহের গরিব কবি গুলজার হোসেনের মতো। তিনি রবার্ট ফ্রস্টের মতো: হাতে কলম নিলেই ফুটে ওঠে নানা রঙের কাব্যপদ্ম, আর কাস্তে হাতে নিলেই মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে আসত নানা ধরনের সবুজ সবজি। তিনিই হলধর নাগের প্রতিনিধি। সাবির হাকা জাতে অভিজাত না হলেও মননে-বুননে, আমেজে-মেজাজে মানুষের প্রতিনিধি। অসম কিংবা ভারসাম্যহীন সমাজে তিনি এক আশ্চর্য প্রতিভা। তিনি যেন এল সালভাদোরের কবি রোকে ডাল্টন, যেন গুয়াতেমালার সেই লড়াকু কবি ওতো রেনে কাস্তিও, যেন পুয়ের্তোরিকোর কবি হুলিও দি বুর্হোস : প্রবাদে না হলেও প্রতিবাদে তো বটেই।

হাকা ১৯৮৬-তে কেরমেনশাহে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তেহরানে বসবাস করেন। দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কাব্যদেবী আশীর্বাদে দুটো ডালভাতের ব্যবস্থা হয়নি। তিনি দারিদ্র্যকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। রাতের বেলা তেহরানের পথে পথে হেঁটে বেড়ান। যেন জীবন খুঁজতে থাকেন। তার কষ্টের সুরে সুর মিলিয়ে গুলজার হোসেন গেয়ে ওঠেনÑ সাবির হাকা সাড়া দাও/এখানে অনেক শ্রমিক বন্ধু আছে তোমার

তিক্ততা

 

যাপিত জীবনে

আমি মোটেও পারব না

বাবার মতো সহ্য করতে।

বাবা ছিলেন

খোদাভীরু।

কান্নাকাটি করতেন

যেন হয়

পাপ মোচন।

 

কিন্তু এই আমি

খোদাকেই খুন করতে চেয়েছি।

যেহেতু আমি টের পেয়েছি

মায়ের অনুপস্থিতি

আর জীবন থেকে শিখেছি

জন্ম-মৃত্যু দুটোই তার হাতে

আর

মৃত্যুর জন্য বাহাদুরি লাগে না

যথেষ্ট

শুধু একটি কারণ।

 

তুঁতফল

 

এ যাবৎ গাছ থেকে

তুঁতফল ছুটে পড়া দেখেছো কি?

কী সুন্দর টকটকে লাল হয়ে

মাটিতে মিশে যায়।

ছুটে পড়ার মতো নিদারুণ কষ্টের

আর কিছুই নেই।

আমি দেখেছি অনেক শ্রমিককে

ছুটে পড়তে

উঁচু উঁচু ভবন থেকে।

হয়ে গেছে

তুঁতফল।

 

অণুকাব্য

 

 ১. তুমি যদি আমাকে ছেড়ে যাও

আমিও হয়ে যাব সেই অভাগা শ্রমিকের মতো

যার এইমাত্র চাকরি গেছে।

 

২. কাজ ফাঁকি দেওয়ার জন্য

আমি টয়লেটে যেয়ে বসে থাকি

কিংবা নিজেকে আহত করে দিই

আর সব সময় নিজেকে এমনভাবে ফাঁকি দেই

যেন বাড়ির কথা মনেই পড়ে না

কাজ শেষে যখন আসমান ছুঁই ছুঁই ইমারতে

বসে থাকি

দেখতে থাকি কেমন করে

আস্তে আস্তে চিমনি থেকে বের হতে থাকে

নীরব রাত্রি।

 

৩. মধ্যাহ্ন বিরতি

এখনও অর্ধেক দিন বাকি

আমি ও মৃত্যু চোখাচোখি পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম

সে যাচ্ছে শহরে

আমি যাচ্ছি কবরে।

 

৪. আমি বড় না হলেই ভালো হতো

আর আমি আজও বুঝিনি

বাবা কেন এই মিথ্যাটা বলেছিল যে

কোনো কিছু মাটিতে পুঁতে দিলেই

তা সবুজ হয়ে উঠে আসবে

আর এটা নাকি খোদার রহমত!

কিন্তু এটা কেউ কেন বোঝে না যে

আমি অনেক বছর অপেক্ষা করছি

তবুও তো মা উঠে আসল না।

 

৫. আমার গলায় যেন অনেক ভারি বেদনা চেপে আছে

পিচের উপর দিয়ে রোলার গেলে যেমন হয়।

রোলার চলতে থাকে

রোলার চলতে থাকে স্বপ্নের মধ্যেও

নিঃশব্দ ঘুমে

কাজ পাগল শ্রমিকরা

শরীরের হাড়গোড়ের ওপরও কাজ করতে থাকে

আমিও শ্রমিক।

 

৬. সারা জীবন আমি একটা নীতি অনুসরণ আসছি :

মিথ্যা বলব না,

কারও মন ভাঙব না

এবং

যেকোনো ক্ষতিকে জীবনের অংশ হিসেবেই মেনে নেব।

এরপরও আমি মরতে খুব ভয় পাই।

মরে যদি আবার শ্রমিক হই!

 

৭. শ্রমিক :

সাদাসিধে জীবন

আর আছে

সুন্দরী জীবনসঙ্গী।

কাজ শেষে

যখন ঘরে ফেরে

গগনচুম্বী সব ভবন থেকে

বাড়ি নিয়ে যায়

তুলতুলে

সাদা মেঘ।

 

ঈশ্বর

 

ঈশ্বর নিশ্চিতভাবে একজন

শ্রমিক

তিনি হয়তো শ্রেষ্ঠ ঝালাই মিস্ত্রি

সূর্যাস্তলগ্নে

ঈশ্বরের চোখ দগদগে লাল হয়ে যায়

জ্বলন্ত কয়লার মতো

 

ভরসা

 

আমার বাবা

নিষ্ঠাবান

ভরসা করা যায়

এমন একজন

শ্রমিক ছিলে।

যখন তিনি জায়নামাজে বসতেন

আর হাত তুলতেন

দোয়া করার জন্য

তখন খোদা তায়ালাও

লজ্জায় লাল হয়ে যেত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা