× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অনুবাদ

ক্রিকেটার আর্থার কোনান ডয়েল

অরুণাভ সেনগুপ্ত

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৬ পিএম

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৮ পিএম

ক্রিকেটার আর্থার কোনান ডয়েল

ক্রিকেট সম্পর্কে যারা একটু খোঁজ রাখেন আবার একই সঙ্গে বই পড়তে ভালোবাসেন তাদের কুইজে একটি প্রশ্ন করা যেতেই পারে। ‘শার্লক হোমসের স্রষ্টা ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে প্রথম কার উইকেট নিয়েছেন?’ উত্তরটিও সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যাবে। ‘সেই একবারই। ডব্লিউ জি গ্রেস।’

১৯০০ সালের ২৫ আগস্ট। মহান লেখক দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কদিন আগে ইংল্যান্ড ফিরেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বোয়ার যুদ্ধে ব্রিটিশ আর্মির চিকিৎসক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ডব্লিউ জি গ্রেসের উইকেট নিয়ে আর্থার কোনান ডয়েল এতটাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন যে শিগগিরই এ নিয়ে কিছু পঙ্‌ক্তিও রচনা করে ফেলেন। দোষ দেওয়া যায় না বেচারাকে। চমকপ্রদ ও শ্রেষ্ঠ এক ক্রিকেটারের উইকেট নেওয়ার অর্জন তো কম নয়। তবে কোনান ডয়েল তার লেখায় একটি বিষয় এড়িয়ে গিয়েছিলেন। গ্রেস তখন লন্ডনের কাউন্টি দল ক্রিস্টাল প্যালেসের অধিনায়ক। ৫২ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার সেদিন ১১০ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলেছিলেন। কোনান ডয়েলের বলে টপ এজ হওয়ায় বল চলে যায় উইকেটকিপার বিল স্টোরারের গ্লাভসে। যত যা-ই হোক, এই একটি ঘটনার মাধ্যমে ক্রিকেট ও সাহিত্য এক আঙিনায় চলে আসে।

অদ্ভুতই বলতে হবে। আর্থার কোনান ডয়েল শার্লক হোমস সিরিজে ৫৬টি ছোটগল্প ও ৪টি উপন্যাস যুক্ত করেছেন। বিশাল কলেবরের এ রচনাসমগ্রে ক্রিকেটের উল্লেখ হয়েছে মোটে দুবার। প্রথম উল্লেখ ‘দি অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য প্রায়োরি স্কুল’-এ, আরেকবার উল্লেখ করা হয় ‘অ্যাডভেঞ্চার অব দ্য থ্রি স্টুডেন্ট’ গল্পে। শার্লক হোমসের মনোহারিণী জগতে এ দুই গল্প বাদে আর কোথাও ‘ভদ্রলোকের খেলা’র উল্লেখ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সাইন অব ফোরে টবি নামে একটি কুকুর হোমস ও ওয়াটসনকে কেনিংটন লেনে নিয়ে আসে। কেনিংটন লেন ওভালের পুবদিকে অবস্থিত। ওই লেখায় এ দুই চরিত্রের কাউকেই ওভালে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। অথচ কোনান ডয়েল ক্রিকেট ভীষণ পছন্দ করতেন। খেলতেনও প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে। ক্রিকেটের কলাকৌশল বানানোর ক্ষেত্রেও তার আগ্রহ ছিল দেখার মতো। জীবনের শেষ পর্যায়ে তার একটি স্বপ্ন পূরণ হয়। ক্রিকেট, জীবন, ধর্ম ও মূল্যবোধকে সংযুক্ত করার কাজটি করতে পারেন। প্রচণ্ড আগ্রহ থাকলেও খুব ভালো ক্রিকেটার তিনি কখনই ছিলেন না। তরুণ বয়সেই বুঝতে পেরেছিলেন ক্রিকেটার হিসেবে বেশিদূর এগোতে পারবেন না। তার পরও জীবনে ১০টি ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন। তার অনেক ভক্তের মনে এমন একটি ধারণা তাই রয়েছে, তিনি প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিলেন। বাস্তব প্রীতিকর নয়। তবে খেলার প্রতি তার নিবেদন এবং আগ্রহ কোনো অংশেই কম ছিল না।

জীবনের শেষ পর্যায়ে ক্রিকেট কেন্দ্র করে একটি ছোটগল্পও লিখেছিলেন। এ গল্পের সূত্র ধরেই অনুমান করা যেতে পারে কোনান ডয়েল খেলাটি নিয়ে অনেক ভাবতেন। তবে ক্রিকেট নিয়ে তার ভাবনা বাস্তবসম্মত বলা চলে না। শার্লক হোমসে ক্রিকেটের উল্লেখ না থাকার পক্ষে সাহিত্য সমালোচকদের অভিমত, কোনান ডয়েল শার্লক হোমসের মতো ডিটেকটিভ রচনাকে অত বড় লেখা মনে করতেন না। সাহিত্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের তুলনায় নিজের এ সিরিজটিকে তিনি কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতেন। শার্লক হোমসের জন্য কোনান ডয়েল ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হলেও তিনি তার এ সিরিজটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন না। নিজের লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস ও নন-ফিকশনগুলোকেই ভাবতেন গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যুদ্ধ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিজ্ঞান এবং আধিভৌতিক ঘটনার মতো জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যেই নিজের সার্থকতা দেখতে পেতেন। সম্ভবত ক্রিকেটও তার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হওয়ায় তাকে খেলো করতে রাজি হননি।

তার পরও প্রশ্ন থেকে যায়... যদি এ যুক্তি সত্য হয় তাহলে শার্লক হোমসে দুবার কেন ক্রিকেটের প্রসঙ্গ এলো? ক্রিকেটে কোনান ডয়েলের আগ্রহ নিয়ে পুরো বই লিখে ফেলা যাবে। ব্রিটেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কোনান ডয়েল একাধিক খেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্কি করা, বিলিয়ার্ড, গলফ এমনকি অলিম্পিকেও যুক্ত হয়েছিলেন। যেকোনো মহান ব্যক্তির জীবনের সঙ্গে কিছু কিংবদন্তি জুড়ে যেতে পারে। তাই মূল ঘটনা জানতে হলে প্রথমে আমাদের বাস্তবের প্রেক্ষাপটে যাচাই করতে হবে সব। খেলার আঙ্গিক থেকে কোনান ডয়েলের জীবন একবার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেলে হয়তো কিছু উত্তর পাওয়া যেতে পারে।

একজন সামান্য স্কুল ক্রিকেটার

সাহিত্যাঙ্গনে শার্লক হোমসের নামকরণ নিয়ে একটি ধারণা ব্যাপক জনপ্রিয়। নটিংহ্যামশায়ারের দুই ক্রিকেটারের নামের সমন্বয়ে শার্লক হোমস নামটির সৃষ্টি। প্রথমজন একজন উইকেটকিপার, মরডেকাই শেরউইন এবং অন্যজন ফাস্ট বোলার, ফ্রাংক শ্যাকলক। শ্যাকলক ডার্বিশায়ারে আসার পর তার দলের ফাস্ট বোলার ছিলেন উইলিয়াম মাইক্রফট। বোঝাই যাচ্ছে, ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন ডিটেকটিভের ভাইয়ের নামটিও এক ক্রিকেটারের নাম থেকেই অনুপ্রাণিত। তবে এগুলো অনুমানমাত্র। অনুমানে অবশ্য সত্যের ছিটেফোঁটা কিছুটা হলেও পাওয়া যায়। মাইক্রফটের নামটির প্রসঙ্গের ক্ষেত্রে তা সত্যই মনে হয়। ক্ষুরধার এই ডিটেকটিভের শেষ নামটি যে অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস থেকে অনুপ্রাণিত, তা এক প্রকার প্রতিষ্ঠিত। অলিভার একজন মার্কিন চিকিৎসক ও কবি। কোনান ডয়েলের মতোই সাহিত্য আর ওষুধের জগতে সমান্তরালে চলাচল।

হোমসের প্রথম নামটির অনুপ্রেরণা আন্টি জেন থেকে। কাকা হেনরির স্ত্রী বাটলারহাউজ ক্যাসলে জন্ম নিয়েছিলেন। পদবি ছিল শার্লক। তা ছাড়া কোনান ডয়েল স্টোনিহার্স্টের যে স্কুলে পড়তেন সেখানে প্যাট্রিক শার্লক নামে এক বন্ধু জুটেছিল। স্টোনিহার্স্টে পড়ার সময়টি কোনান ডয়েলের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। কারণ সেখানে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পর আয়ারল্যান্ড থেকে এসে দুই ভাইও স্কুলটিতে ভর্তি হয়। মরিয়ার্টি বয়েজ বলে অভিহিত বড়জনের নাম ছিল জেমস। জেমস পরে গণিতবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবেন। স্টোনিহার্স্টেই তিনি অনুপ্রেরণা জুগিয়ে প্রফেসর চ্যালেঞ্জার সিরিজ লেখার রসদ খুঁজে পেয়েছিলেন।

স্টোনিহার্টস গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক থেকে। এখানেই কোনান ডয়েল ক্রিকেটকে ভালোবেসে ফেলেন। খেলাটির প্রতি তার মুগ্ধতাই যে বেড়েছিল তাই নয়, খেলাটিকে নিয়ে আকাশকুসুম কল্পনাও শুরু করে দিয়েছিলেন। মধ্যযুগের নাইটদের মতো মহান বীরত্বের অর্জন উইলোর ব্যাট দিয়ে করা যায় ভেবে কত দিন খেলেছেন তার ইয়ত্তা নেই। তবে খেলায় তিনি খুব একটা ভালো ছিলেন না। একটু বেটে হওয়ায় কিছু সুবিধাও পেয়েছিলেন। ফাস্ট বোলাররা সহানুভূতিপ্রবণ হয়ে জোরে বল করতেন না। টুকে টুকে রান করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটু বড় হওয়ার পর এ সহানুভূতি আর পাচ্ছিলেন না। তখন দক্ষতার পূর্ণ বহিঃপ্রকাশই তাকে করতে হতো।

১৮৭৩ সালে কোনান ডয়েলের বয়স ১৪। কোনান ডয়েল তৃতীয় একাদশে জায়গা পেলেন। পরবর্তী বছর তিনি দ্বিতীয় একাদশে চলে আসেন। স্কুলের প্রথমে একাদশের সঙ্গে জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলেন তখন। কোনান ডয়েলকে ওপেন করতে পাঠানো হয়। পুরো দলের স্কোর ওভার শেষে হয় ৪০। প্রথম একাদশের তোপে রান করতে কষ্ট হয়েছিল অবশ্যই। কোনান ডয়েল অবশ্য শেষ পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন। ৭ রান করেছিলেন। পরবর্তী দুই বছর প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য অনেক কসরত করেও লাভ হয়নি।

১৮৭৫ সালে কোনান ডয়েল জেসুইটদের পরিচালিত স্টেলা মটুটিনাকে কিছুদিন কাটান। অস্ট্রিয়ান পর্বতমালার এ জায়গায় দীর্ঘক্ষণ হাঁটা এবং বিয়ারের আপ্যায়নে বেশ সময় কাটছিল। তবে সেখানে ক্রিকেট খেলার বন্দোবস্ত না থাকায় সামান্য অস্বস্তিতে পড়েন। নিজের আত্মজীবনীতে অবশ্য তিনি স্কুলের সঙ্গে শহরের একটি দলের তিন দিনের ম্যাচ খেলার কথা লেখেন; যেখানে সত্যের চেয়ে কল্পনার মিশেলই বেশি ছিল।

অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন আকাশ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা