× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কামাল চৌধুরী : শিল্পের সহযাত্রী

মিনার মনসুর

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০০ পিএম

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০০ পিএম

সমসাময়িক কবিবন্ধুদের সঙ্গে কবি কামাল চৌধুরী (নীল শার্ট)। আরও আছেন সিকদার আমিনুল হক, মুহাম্মদ নূরুল হুদা, ফারুক মাহমুদ, মোহাম্মদ সাদিক, মিনার মনসুর প্রমুখ।

সমসাময়িক কবিবন্ধুদের সঙ্গে কবি কামাল চৌধুরী (নীল শার্ট)। আরও আছেন সিকদার আমিনুল হক, মুহাম্মদ নূরুল হুদা, ফারুক মাহমুদ, মোহাম্মদ সাদিক, মিনার মনসুর প্রমুখ।

কামাল চৌধুরীকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে আমি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। শরতের পরিযায়ী মেঘের মতো এ কোনো ক্ষণস্থায়ী আবেগ মাত্র নয়; বরং শ্রাবণের ঘন ভারী মেঘমালার মতো দিগন্তপ্রসারী অনড় তার অবস্থান। কাকতালীয়ভাবে তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অজস্র শ্রাবণের অনিরুদ্ধ অশ্রুধারাও। অতএব, এ নিছক স্মৃতিকাতরতা নয়। তার চেয়ে গভীর, ব্যাপক ও ভিন্নতর কিছু; যাকে ঠিক শব্দ দিয়ে ধরা যায় না। পুরোপুরি ধারণ করা যায় না অনুভবের অস্থির ভঙ্গুর পাত্রেও।

আমি অনির্ণেয় অপ্রতিরোধ্য যে স্মৃতিস্রোতের কথা বলছি তারা কখনও একা আসে না। শেকড়বাকড়সুদ্ধ সঙ্গে নিয়ে আসে জগদ্দল পাথরের মতো ভারী কবন্ধ এক সময়কে, বাংলার ইতিহাসে যার তুলনা বিরল। সিন্দবাদের দৈত্যের মতো ব-দ্বীপের মানচিত্রজুড়ে চেপে বসা দৈত্যাকার সেই পাথরটি শুধু যে তার আসুরিক ঔদ্ধত্য নিয়ে আমার ভাবনার পথ রোধ করে দাঁড়ায় তাই নয়, বরং বুনো হাতির মতো যা কিছু বাংলাময় তার অস্তিত্বসুদ্ধ পিষে ফেলতে চায়। তার দাঁত থেকে, নখ থেকে টাটকা রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ে। সেই রক্ত শিশুর, সেই রক্ত গর্ভবতী নারীর, সেই রক্ত বাংলাদেশ নামক এ রাষ্ট্রের মহান স্থপতিরÑএ জনপদের হাজার বছরের ইতিহাস যাঁকে নিয়ে গর্ব করে।

দুই.

একাত্তর থেকে পঁচাত্তর। কিশোরকাল পার হওয়ার আগেই আমাদের পাড়ি দিতে হয়েছে দুটি রক্তসমুদ্র। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে পড়া উচ্চ সংবেদনশীল শিশুদের কচিপ্রাণে কী ভয়াবহ আর কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে তার অভিঘাত, তা মনোবিজ্ঞানীরাই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের হাঁটাপথগুলো অযত্নে পড়ে থাকা শহীদের অস্থি ও করোটি আর স্বজনহারা লাখো মানুষের হাহাকারমুক্ত হওয়ার আগেই কেয়ামতের বিভীষিকা নেমে আসে বাংলাদেশ নামক সদ্যস্বাধীন জনপদজুড়ে। নেমে আসে বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াল সবচেয়ে কলঙ্কময় সেই রাত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।

মাত্র এক মাস পরই আমার কলেজজীবন শুরু হওয়ার কথা; আর কামাল চৌধুরীর বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। একাত্তরের রক্তের দাগ তখনও শুকায়নি। সর্বাঙ্গে সেই রক্ত মেখে আমাদের মুখোমুখি হতে হয় আরেকটি গর্জমান রক্তসমুদ্রের। কী বিপুল তার রক্ততৃষ্ণা! সেখানেই, তীরহারা সেই উপদ্রুত উপকূলে; কোনো এক বৃষ্টিভেজা বিষণ্ন রাতে আমাদের দেখা হয়ে যায়। রক্তলোলুপ হায়েনাদের তুমুল গর্জনের সামনে আহার-নিদ্রার কথা ভুলে আমরা গল্প করি ফিডেল ক্যাস্ট্রোর, চে গুয়েভারার, প্রমিথিউসের...। পরিকল্পনা করি আরেকটি নুহের নৌকা নির্মাণের। সংকল্প করি তীরহারা ওই রক্তসাগর পাড়ি দেওয়ার এবং অবশ্যই ভয়কে জয় করার।

তিন.

তারপর নির্মিত হতে থাকে একের পর এক মাইলফলকÑ ১৯৭৮ সালে বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকীতে ‘এপিটাফ’, ১৯৭৯ সালে গদিনশিন ঘাতকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতির পিতাকে নিয়ে প্রথম স্মারকগ্রন্থ ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ’, ১৯৮০ সালে ‘আবার যুদ্ধে যাবো’; এবং ১৯৮১ সালে কামাল চৌধুরীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মিছিলের সমান বয়সী’। আমি পাঠককে ‘মিছিল’ শব্দটির দিকে লক্ষ রাখতে বলি; লক্ষ রাখতে বলি কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশকালের দিকে। পঁচাত্তরের বিভীষিকার মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত ২৪ বছর বয়সী এ কবির জাত চেনার জন্য পুরো কাব্যগ্রন্থটি তন্ন তন্ন করে খোঁজার দরকার নেই। এমনকি প্রয়োজন নেই তার বিপুল ও বহুস্বরের কবিতাসমুদ্রে অবগাহনের। আমি বিজ্ঞ পাঠককে কেবল ‘রক্তাক্ত পঙ্‌ক্তিমালা’ কবিতার উষ্ণ প্রস্রবণে অবগাহন করতে বলি।

মাত্র ২০ বছর বয়সে লেখা এ কবিতাটি (আমি যতদূর জানি) প্রথম ছাপা হয় (মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত এবং চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত) ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ’-এ। মোট ৭৯ পঙ্‌ক্তির দীর্ঘ এ কবিতাটি তখনকার তরুণদের মনোজগতে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল তার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে আমি নিজের কথা বলতে পারি। দীর্ঘ চার দশকের অসংখ্য ধূলিঝড় পার হয়ে এসে এখনও কবিতাটির বহু পঙ্‌ক্তি আমার ভেতরে স্থায়ীভাবে খোদিত হয়ে আছে। কেন এমন হলো? আজকের শুদ্ধতাবাদী অনেকের বিচারে এটি উৎকৃষ্ট কবিতার তালিকা থেকে হয়তো বাদও পড়তে পারে। কিন্তু সেই সময়ের সন্তান হিসেবে আমার রায় ভিন্ন। নিবন্ধের শুরুতে আমি যে কবন্ধ সময়ের কথা বলেছি, এটি শুধু যে সেই সময়ের সমগ্রতাকে অসামান্য নৈপুণ্য ও মমত্বের সঙ্গে ধারণ করেছে তাই নয়, বহতা নদীর মতো অক্ষরবৃত্তের এমন প্রবহমানতার উদাহরণও বাংলা কবিতায় অঢেল নয়। সব মিলিয়ে কবিতাটি নিটোল ও স্বনির্ভর, আর সে কারণেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মতোই উন্নত নাসা পণ্ডিতদের সব তুচ্ছতাচ্ছিল্য পেছনে ফেলে এ কবিতাটিও নিজগুণে আসন করে নিতে পেরেছে কালোত্তীর্ণতার রথে।

বলে রাখা আবশ্যক, ‘রক্তাক্ত পঙ্‌ক্তিমালা’ কবিতার বিচার বা তার মূল্য নিরূপণ আমার উদ্দেশ্য নয়। যে-কথাটি আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই তা হলো, কবি হিসেবে কামাল চৌধুরীর জাত চেনার জন্য এ কবিতাটিই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারে। এমনটি আমার আগেও মনে হয়েছে, দীর্ঘ ৪০ বছরের ব্যবধানে সম্প্রতি তার ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ (কাগজ প্রকাশন, ২০১৯) পাঠ করার পর আমার এ প্রতীতি আরও দৃঢ়মূল হয়েছে। কী নেই এ কবিতায়? লক্ষণীয়, ২০ বছরের তরুণÑ তার দ্রোহ, তার প্রেম, তার দর্শন, তার স্বপ্ন, তার প্রগাঢ় দেশাত্মবোধ, নিপীড়িত-বঞ্চিত শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষের প্রতি তার শর্তহীন ভালোবাসা, তার সংযম, তার শব্দচয়ন এবং কবিতার যেটি অন্যতম প্রধান শর্ত ছন্দের ওপর তার দখল দেখলে বিস্মিত হতে হয়। পুরো কবিতাটিই উদ্ধৃতিযোগ্য। আমি সেদিকে যাব না। আমার বক্তব্যের সমর্থনে এখানে কেবল কবিতাটির শেষ স্তবকটিই তুলে ধরছি :

পাথরে আঘাত করো, খুলে ফ্যালো বেণীর জড়তা

ভেঙে ফেলি রাষ্ট্রসংঘ তন্ত্রমন্ত্র সামাজিক শ্রেণি

নতুন বিন্যাসে এসো তুমি আমি পৃথিবী বানাবো।

তীব্র টানে খুলে দেবো দালালের বিচিত্র মুখোশ

শনাক্ত হয়েছে যারা মিছিলের বিপরীতে গিয়ে

তারা আজো বেঁচে আছে, সিঁদ কাটে প্রেমিকের ঘরে

তাদের প্রাসাদে এসো জেলে দেই চিতার অনল

বিষাক্ত নিশ্বাস জেনো নত হবে আমার শিখায়।


তুমিও কি ভয় পাও? প্রতিরোধ পর্বতসমান?

আমার কবিতা থেকে ধার করো সাহসী শ্রমিক

মানুষ গিয়েছে চাঁদে, হিমালয় সেও নতমুখ

কাকে আজ ভয় করো? কাকে বলো বাধার সময়?

গান ধরো নজরুল, একবার গান গেয়ে যাও

ভেঙে ফেলি পোড়োবাড়ি, ভুল ঘর, মুখোশী প্রণয়।

তুমি পড়বে না জানি, তবু এই চিঠিখানি পাঠিয়ে দিলাম। (রক্তাক্ত পঙ্‌ক্তিমালা, শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ, বাংলা একাডেমি, ২০২০, পৃ-৬৪)

চার.

প্রথম কাব্যগ্রন্থের শিরোনামেই কামাল চৌধুরী তার পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। সেই সঙ্গে দিয়েছিলেন তার যাত্রাপথের জোরালো একটি ইঙ্গিতও। আর সূচনালগ্নেই তার কবিমানসের পূর্ণাঙ্গ ইশতেহার হিসেবে রচনা করেছিলেন ‘রক্তাক্ত পঙ্‌ক্তিমালা’। তারপর বহু পথ পাড়ি দিয়েছেন। ঘুরেছেন পৃথিবীর পথে পথে। পড়েছেন অজস্র বই। সেদিক থেকে তার মানস পরিভ্রমণের বৃত্তটিও বিশাল। পালন করেছেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জগৎ ও জীবনকে (এবং অবশ্যই এ দুইয়ের বাইরে ব্যাখ্যা ও বোধের অতীত যা কিছু আছে সেসবকেও) নানাভাবে এই যে দেখা ও জানা; তার আনন্দ ও বেদনা বুকে ধারণ করাÑ সব, সবই উঠে এসেছে তার কবিতায়। না, আমি যতটা সহজে বলছি সেভাবে নয়। খুব সরল সাদামাটাভাবে তো নয়ই। যারা ভাবেন এবং এক নিশ্বাসে বলে ফেলেন যে কামাল চৌধুরী তো প্রেম ও দ্রোহের কবি (ভাবখানা এমন যে সত্তরের কবি, প্রেম ও দ্রোহ ছাড়া আর লিখবেই-বা কী!) কিংবা যারা আরও একধাপ এগিয়ে বলে বসেন, ‘সত্তরে কবিতা কোথায়, সবই তো স্লোগান’Ñআমি বিনয়ের সঙ্গে তাদের কামাল চৌধুরীকে নিবিড়ভাবে পাঠ করতে বলি।

কামাল চৌধুরী তার ‘কবিতা সংগ্রহ’ (২০০৩)-এর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কবিতা কী করে লিখতে হয় এখনো জানি না। হয়তো জানা হবে না মৃত্যুর আগে।’ কবির এ বক্তব্য যে সর্বাংশে সত্য নয়, তার অকপট সাক্ষ্যও রয়েছে এ নিবন্ধেই। কবিতা কী তিনি জানেন। আর কীভাবে কবিতা লিখতে হয়, তার অনবদ্য কিছু উদাহরণও তিনি সৃষ্টি করেছেন তার কবিতাযাত্রার সূচনালগ্নে, যখন তার বয়স বিশের কোঠা অতিক্রম করেনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, কোনটি কবিতা নয় এবং কেন নয়, তা তিনি সবচেয়ে ভালো জানেন। ছোট্ট একটি দৃষ্টান্ত দিই। কামাল চৌধুরী লিখেছেন : ‘সন্দেহ নেই, শব্দ নিয়েই কবির কারবার, শব্দের সঙ্গেই কবির বসবাস। কবি শব্দের পর শব্দ সাজান, কখনো সরল কখনোবা দুর্বোধ্য। রহস্যময়তা থাকবে, আড়াল আবডাল থাকবে কিন্তু অর্থহীন নয় তার শব্দযাত্রা। যা অবোধ্য তা কখনো কবিতা নয়।’ (প্রাগুক্ত) এ নিয়ে মতভিন্নতা থাকতেই পারে, কিন্তু যিনি বলছেন তার বক্তব্যে এবং বিশ্বাসে যে কোনো হেঁয়ালি বা দ্ব্যর্থতা নেই তা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তাহলে কবিতা কী? কামাল চৌধুরীর মুখ থেকেই শোনা যাক : ‘কবিতার রক্তপ্রবাহ, আনন্দ, উল্লাসÑঅশ্রু ও বিষাদ সবই নিতে হয় জীবন থেকে, অতীত ও বর্তমানের অভিজ্ঞতা থেকেÑভবিষ্যতের স্বপ্ন থেকে। কবিতা এসবেরই সমাহার, মিলিত বৈভব। আমরা চারপাশে যা দেখি তাই আমাদের অভিজ্ঞতা, আমরা যে পথে হাঁটি তা-ই আমাদের জীবনের পথ। আমরা যা স্পর্শ করতে চাই, পারি না সে-ই আমাদের স্বপ্ন।’ (প্রাগুক্ত)

পাঁচ.

কামাল চৌধুরীর প্রায় অর্ধশতকের কবিতাযাত্রার বিরল সহযাত্রীদের একজন হিসেবে ব্যক্তি ও কবির বাইরেও নানা ভূমিকায় তাকে দেখার ও জানার সুযোগ আমার হয়েছে। সম্প্রতি পড়ার সুযোগ হয়েছে তার ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ছাড়াও তাকে নিয়ে লেখা বেশকিছু মূল্যায়নধর্মী রচনা। একজন লিখেছেন, ‘তার (কামাল চৌধুরীর) কবিতার অভ্যন্তরে যোদ্ধা এবং প্রেমিক, সময়ের সন্ত্রাস এবং জীবনের জ্যোৎস্না, এত দ্রুত এত চকিত চমৎকারে, একে অপরের পাশাপাশি এসে দাঁড়াচ্ছেÑরূপবদল বা স্থানবদল করছে, সত্যিই ভাবা যায় না; (জহর সেনমজুমদার, কবিতা সংগ্রহ, কামাল চৌধুরী, পৃ-২০৬)। এখানে কামাল চৌধুরীর কবিতার দুটি রঙ খুব স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে এবং তা অযথার্থ নয়। তবে আমার মনে হয়েছে, কামাল চৌধুরীর কবিতা বহুবর্ণিল। একটু নিবিড়ভাবে কান পাতলে বহু স্বর সেখানে শোনা যায়। আর সেগুলোকে বাহ্যত পরস্পরবিরোধী বা সাংঘর্ষিক মনে হলেও, তাদের মধ্যে কোথায় যেন আশ্চর্য এক সংহতিও রয়েছে। কোথায় সেটা? তার স্বরূপ সন্ধানই ছিল আমার এ যৎসামান্য রচনার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু নির্ধারিত শব্দসংখ্যার সীমা পেরিয়ে এসে দেখি আমি এখনও তার দ্বারপ্রান্তেই এসে পৌঁছাতে পারিনি। থাক, এ রচনাটি কামাল চৌধুরীর অধিকাংশ কবিতার মতো, অসমাপ্তই থাক। আপাতত (কবির ৬৭তম জন্মদিনে) শুধু এটুকু বলি, কবিতায় কামাল চৌধুরী এক ক্লান্তিহীন পর্যটক, যার খানিকটা তুলনা চলে রিক্তহস্ত বৌদ্ধ শ্রমণের সঙ্গে। ভিক্ষান্নেই যার আনন্দযাপন। বাইরে থেকে যা কিছু তিনি কুড়িয়ে আনেন, সবই ছবি বা প্রতীক হয়ে আসে তার কবিতায়। আশ্চর্য এক কুহক (জাদুবাস্তবতাও বলতে পারেন!) তৈরি করেন তিনি সজ্ঞানে। পাঠককে যা দেখান, আর মূলত যা বলেন তা কখনও এক নয়। তার ভেতরে, তার প্রেম ও সংগ্রামÑসবকিছু ছাপিয়ে, তুষারধবল হিমালয়ের মতো মাথা তোলে এক দার্শনিক সত্তাÑযার জিজ্ঞাসা অপার। তিনি ঠিক নির্বাণও খোঁজেন না। খোঁজেন ভিন্ন কিছু। কী খোঁজেন তা হয়তো কবি নিজেও জানেন না। 

কামাল চৌধুরী, জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৫৭

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা