× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বন্ধুত্বের বয়স কবিতার বয়স

টোকন ঠাকুর

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৪১ এএম

ফুলের নামে নাম হতো মেয়েদের, নদীর নামে নাম হতো মেয়েদের, পাড়াগাঁয়। আমরা পাড়াগাঁর ছেলে। ডাক বিভাগের চিঠি ছাড়া আমাদের কথা কেউ বয়ে নিয়ে যেত না। সারা বাংলাদেশেই চিঠিপত্রে একটা নেটওয়ার্ক চালাচালি ছিল। ওভাবেই আলফ্রেড খোকনের সঙ্গে আমার চিঠিতে যোগাযোগ ছিল। অবশ্য খোকনের কাগজ ‘নন্দন আমি প্রথম পাই শাহবাগ বিপণিবিতানের নিচে একটা লিটল ম্যাগাজিন বিক্রির স্টলে। তারপর হয়তো খোকনকে চিঠি লিখি। খোকন উত্তর দেয়। আমাদের যোগাযোগ বাড়ে। আমি নন্দনে লেখা পাঠাই। ছাপা হয়। তারপর আমি যেমন ঝিনেদা বা খুলনা থেকে ঢাকায় চলে আসি, খোকনও বরিশালের আগৈলঝাড়া থেকে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায়, প্রথম কিছু বছর আমরা একসঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই ঘোরাফেরা করতাম। চারুকলা, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি, শাহবাগ, আজিজ মার্কেট বা ঢাকা শহর পায়ের নিচে ফেলে তন্নতন্ন করে ফেরা দিন পার করতাম। আমাদের সমস্ত যোগাযোগ ও বন্ধুত্বের প্রধান সাঁকোটি হচ্ছে বাংলা কবিতা। বাংলা কবিতা না থাকলে আমি চিনতাম না খোকনকে, খোকন চিনত না আমাকে। এভাবেই লেখালেখির মানুষ আমাদের স্বজন হয়ে ওঠে। খোকন কি আমার স্বজন?

আলফ্রেড খোকন আমার বন্ধু। এর বেশি কিছু লেখার থাকে না। আলফ্রেড খোকন কবি। কবিবন্ধু। একই সময়ের আলো-হাওয়ায় আমরা বড় হচ্ছি। বাংলা কবিতার নাড়ির টানে আমাদের সম্পর্ক। সম্পর্ক পুরোনো হয়ে গেলে নাকি ক্ষীণ হয়ে যায়, আমাদের তা যায়নি। আমাদের সম্পর্কের বয়স তিন দশকের বেশি। খোকনের ব্যাচেলর জীবন আমি দেখেছি। এখন সংসারী জীবন দেখছি। কিন্তু আদতে একটি পাখি আর কতটুকুই বা সংসার যাপন করে বা করে থাকে? গাছে গাছে, গাছের ডালে সংসার হয় বটে, কতটুকু হয়?

প্রথম দিকে একটার পর একটা পাল্টানো প্রতিটি বাসাতেই আমি গেছি। সারা রাত আড্ডা দিছি। নারায়ণগঞ্জে গেছি। আড্ডা দিছি। কী যে একটা জীবন আমরা তামা তামা করে দিলাম শাহবাগ অঞ্চলে, সেসব লিখতে চাই যদি আত্মজীবনী ধরনের কিছু লিখি। এখন কবি আলফ্রেড খোকনের জন্মদিনে কিছু লিখি। আমরা যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম, তখনও মোবাইল ফোন আসেনি। নেট ঘিরে ফেলেনি মস্তিষ্ক। ফেসবুক কী জিনিস আবিষ্কার হয়নি। ঢাকায় মেট্রোরেল ধারণা জমে ওঠেনি তখনও। নিখাদ বন্ধুত্বই আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে।

দিনে দিনে অনেক দিন গেছে। দিন আরও সামনে পড়ে আছে। দিন আরও যাবে। আমি, মারজুক রাসেল ও খোকন ত্রয়ী ছিলাম একদা। একবার আমরা তিনজন ও সঙ্গে ছিল বন্ধু মৃগাঙ্ক, মাঝরাতে গেলাম কবি আবুল হাসানের কবরে, বনানীতে। মাথার ওপরে পূর্ণিমার চাঁদ, আমরা চারজন সারারাত কবির কবরে বসে জ্যোৎস্নার শিশির পান করেছি। এক কথায় যদি বলি, কী না করেছি আমরা? এখনও হুটহাট বসা হয়, আগের থেকে সময় কমে গেছে আমাদের। তবে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে দেখা হয় এখন বেশি। আগে আমাদের দেখা হতো শুধু আমাদেরই দেখা হওয়ার জন্য। প্রতিদিন দেখা হওয়ার একটা প্রেম থাকে, সেই প্রেম থেকেই দেখা হতো। যত দিন আমরা বাঁচব, এ রকম দেখা হতেই থাকবে। সেই ছোট্ট বয়সের ভঙ্গিতে আমাদের কথা হতেই থাকবে। খোকনের সঙ্গে বন্ধুত্বকে আমি উদ্‌যাপন করি।

খোকনের কবিতার দিকে পাঠক হিসেবে লক্ষ রাখি। ভালো লাগে খোকনের কবিতা। নানানরকম নিরীক্ষা আছে ওর কবিতায়। বরিশাল তো কবিতারই সুফলা ভূমি, সেখানে কবি আলফ্রেড খোকনও একজন সফল কৃষক। বাংলা কবিতা সমৃদ্ধ হচ্ছে ওর হাতে। যেকোনো সময়েরই কিছু উল্লেখযোগ্য কবি পাঠকের সামনে উপস্থিত হন। আলফ্রেড খোকন আমাদের সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি। কবি হিসেবে নিজের একটা অবস্থান নির্মাণ করেছে আলফ্রেড খোকন। এসব আমার ভালো লাগে।

একই সময়ে অনেক মানবসন্তান জন্ম নেয়, সবার তো সবার সঙ্গে দেখাও হয় না। বন্ধুত্ব হওয়াটা আরও দুষ্প্রাপ্য কিছু। খোকনের সঙ্গে সে রকম একটা বন্ধুত্ব কীভাবে যে গড়ে উঠল দিনে দিনে, সে কথা আজ নয় আরেক দিন মনে করে করে লেখার চেষ্টা করব। বন্ধুত্ব অমর হোক আমাদের, আশা করি হবে। একদিন আমরা থাকব না পৃথিবীতে, আমাদের বন্ধুত্বের কথা থেকে যাক পরবর্তী মানুষের কাছে।

জন্মদিনের শুভেচ্ছা, খোকন। লাবিউ। ­ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা