× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অশেষ আনন্দের প্রাণের মেলা

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৩৭ পিএম

অশেষ আনন্দের প্রাণের মেলা

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ নানা দিক থেকেই বিকশিত হতে শুরু করে। এর মধ্যে গ্রন্থপ্রকাশনা বিকাশের যে সূচনা হয়েছিল, তা নিয়ে যদি বলি, তাহলে বাংলা একাডেমির বইমেলার কথা বলতে হয়। প্রথমে মুক্তধারার বইমেলা হিসেবে এর যাত্রা। চট বিছিয়ে চিত্তরঞ্জন সাহা শুরু করেছিলেন। সে শিকড় থেকে আজ বইমেলা শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছে। যে বিস্তার বইমেলাকে মাসব্যাপী বিস্তৃত করেছে। মাসব্যাপী বইমেলা পুরো পুথিবীর জন্য একটি বিরল ঘটনা। কারণ কোথাও এক মাসব্যাপী বইমেলার দৃষ্টান্ত নেই। যদি ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার কথা বলি, পৃথিবীর বৃহত্তম বইমেলা, যার পুরোটা ঘুরে দেখতে এক দিন লাগে। সে বইমেলায় নানা ধরনের বই বের হয়, একই সঙ্গে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে প্রকাশক-লেখক আসেন। সে বইমেলায় আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এবং অংশগ্রহণ করেছি, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তবে সে বইমেলাও আমাদের বাংলা একাডেমি বইমেলার সঙ্গে মেলানো যায় না। এই না মেলার নানা কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে, এ বইমেলা প্রাণের মেলা, মিলনমেলা হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রকাশক-লেখক-পাঠক সহযোগে এক মিলনমেলা, আনন্দমেলায় পরিণত হয় অমর একুশে বইমেলা। এ ছাড়া অন্য কোনো বইমেলার সঙ্গে ভাষা, ভাষা আন্দোলনের যোগসূত্র নেই। আমাদের এ মেলার সঙ্গে কিন্তু ভাষার একটি যোগসূত্র আছে। ফলে এটা আমাদের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে।

দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বইপ্রেমীরা বছরের এই একটি সময়ে এসে ভিড় করেন মেলাপ্রাঙ্গণে। প্রাণের টানেই সবাই ছুটে আসেন। একবার এক কবিতায় লিখেছিলাম, ‘মা যেমন মুষ্টি মুষ্টি চাল জমিয়ে রাখেন, আমরাও তেমনি মুষ্টি মুষ্টি ছুটি জমিয়ে বইমেলায় আসি। বইমেলায় আসার আনন্দের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। বইমেলার সঙ্গে দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি আমাদের টানেরও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় বইমেলা বাংলা একাডেমি থেকে দোয়েল চত্বর ও টিএসসি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এত দিনে পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে প্রকাশনীর সংখ্যা। বাধ্য হয়েই মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বর্ধিতকরণ। এখন বইমেলা মানে বিশাল আয়োজন। বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তা ও দর্শনার্থীর সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার জন্য অনেক কিছুই জড়িত। কিন্তু সত্তরের দশকে আমরা কীভাবে বইমেলার আয়োজন উপভোগ করতাম তা উল্লেখ করা জরুরি। ওই সময় একুশে ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে টিএসসি চত্বরে বসে মধ্যরাত পর্যন্ত কবিতা পাঠ করতাম। রাত ১২টার পর যখন শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যেতেন তখন আমরা সবাই বইমেলা প্রাঙ্গণে চলে যেতাম। ততক্ষণে বইয়ের স্টলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা সবাই প্রাঙ্গণে হইচই করতাম। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, তুষার দাশ, ইশাহাক খান, আলমগীর রেজা চৌধুরী, স্বরূপ মাহমুদ, মুজাহিদ শরীফসহ আরও অনেকে সারা রাত হইচই করতাম। হইচই করে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমাদের অনেকে বর্ধমান হাউসের বারান্দায় গিয়ে ঘুমাত। অনেকে রমনার বটমূলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ত। অনেক সময় বইয়ের স্টলের ভেতরেও আমরা ঘুমিয়েছি। বাংলা একাডেমির মূল ফটকের পাশে কয়েকটি চায়ের দোকান ছিল। ঘুম ভাঙলে আমরা সবাই সেখানে গিয়ে নাশতা করে মঞ্চে চলে যেতাম। তখন দিনব্যাপী কবিতাপাঠের একটি আয়োজন ছিল। এ আয়োজনে অংশ নিয়ে বিকালে বাড়ি ফিরে ঘুমাতাম। এটি ছিল আমাদের সময় বইমেলার একটি অংশ। অথবা আমরা যখন লিটল ম্যাগাজিন বের করতাম তখন প্রেসে ছোটাছুটি করতেই হতো। তখন হ্যান্ড কম্পোজের মাধ্যমে গ্যালি থেকে প্রুফ নিয়ে দেখতে হতো। আবার আমাদের প্রথম বই বের হওয়ার স্মৃতির সময় যে উন্মাদনা কাজ করত তা অবর্ণনীয়। মনে আছে ওই সময় আমাদের কজনের বই বের হয়েছিল। প্রকাশের আয়োজনকে আনোয়ারা মুস্তফা কামাল ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন বটমূলে এ বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন হবে। মোড়ক উন্মোচন অবশ্য আরও পরের ধারণা। তখন প্রকাশ উৎসব বলা হতো। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছিলেন আলী ইমাম। দারুণ একটি আয়োজন হয়েছিল। আনোয়ারা মুস্তফা কামাল যেহেতু বাংলার শিক্ষক এবং চারটি বই ভালোভাবে পড়েছিলেন তাই বইগুলোর ত্রুটি তুলে ধরেছিলেন। আবার এর ভালো দিকও আলোচনা করেছিলেন। বইমেলা থেকে এ প্রাপ্তি আমাদের জন্য ছিল গর্বের ও আত্মপ্রসাদের।

বইমেলা এখন আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে গেছে। লেখকের অস্তিত্ব সম্পর্কে পাঠকের আলাদা ধারণা রয়েছে। মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন হচ্ছে। আগে এত টেলিভিশন ছিল না। এখন টেলিভিশনগুলো বইমেলা সরাসরি সম্প্রচার করে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে বইমেলা এখন সবার কাছেই পৌঁছে যাচ্ছে। আমি পৃথিবীর অনেক বড় বড় বইমেলার আসর দেখেছি। পরে টরন্টোয় বাংলা বইমেলা শুরু করি। এ ছাড়া সিডনি ও লন্ডনেও এখন বাংলা বইমেলা হচ্ছে। দুই বছর ধরে দুবাইয়ে বইমেলা হচ্ছে। বিদেশে বইমেলার আয়োজনের সূচনা একুশে বইমেলা থেকেই। যত দিন বাংলা ভাষা থাকবে তত দিন বইমেলা থাকবে 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা