ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৬ পিএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:১৫ পিএম
ফাইল ফটো।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এক নবীন ছাত্রীকে হলের গণরুমে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এ ঘটনা ঘটে। এতে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে চলে যান ভুক্তভোগী।
নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন—পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম।
ভুক্তভোগীও ফিন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী জানান, উদ্বোধনী ক্লাসে উপস্থিত হতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা হলের ৩০৬ নম্বর রুমে এলাকার পরিচিত আপুর কাছে ওঠেন তিনি। ৯ ফেব্রুয়ারি তাবাসসুম তাকে রুমে দেখা করতে বলেন। অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে রুমে যেতে পারেননি ওই ছাত্রী। এরপর থেকেই তার ওপর চড়াও হন তাবাসসুম ও তার সহযোগীরা।
পরে রুমে গেলে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। এ সময় না জানিয়ে হলে ওঠার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনার জের ধরে ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
এ ছাড়া তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা। পরদিন বিকালে হল প্রভোস্ট ও সহকারী প্রক্টরের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ‘ওইদিন রাত ১১টায় সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭ থেকে ৮ জন ভুক্তভোগীকে গণরুমে নিয়ে যান। রুমে নিয়ে কথায় কথায় তাকে সবাই একসঙ্গে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। কেন মারছেন জানতে চাইলে তার মুখ চেপে ধরেন ও সজোরে চোয়ালে থাপ্পড় মারতে থাকেন। এ সময় তারা ভুক্তভোগীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘চিনিস আমাদের, আমরা কত খারাপ। আমরা তোর কী করতে পারি জানিস তুই? কোনো আইডিয়া আছে আমাদের সম্পর্কে তোর?’
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী বলেন, ’এ সময় আমি কান্না করে ওনাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা আমাকে লাথি মারেন। আমার বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে আমার বুকের ওপর হাত দিয়ে সজোরে থাবা মারেন ও গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখেন আবার ছাড়েন। একপর্যায়ে তারা একটা ময়লা গ্লাস আমাকে দিয়ে চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেয় ও সেটার ভিডিও ধারণ করে। পরে তারা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে সেটার ভিডিও ধারণ করেন।
‘এ সময় তারা বলেন, ‘যদি বাইরের কাউকে এসব কথা বলিস, তাহলে তোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেব। এ ছাড়া ছাত্রলীগের সহসভাপতি অন্তরা বলেন, তুই যদি প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ দিস, তাহলে তোকে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াব। পরে রাত তিনটার দিকে তারা আমাকে একটি গণরুমে পাঠিয়ে দেয়। পরদিন সকালে ভয়ে হল থেকে পালিয়ে আমি গ্রামের বাড়ি পাবনাতে চলে যাই।’
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ঘটনা। আমার সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
উল্টো তিনি অভিযোগ করেন, ‘ওই ছাত্রীর এক ভাই ফোন কলে তাকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।’
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ’লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ’আমি এ বিষয়ে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা আমলে নেওয়া হয়েছে।’
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ’ওই ছাত্রীর বিষয়টি শুনেছি। আমরা বরাবরই র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করি। সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ’বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই র্যাগিং অ্যালাউ না। আমি নীতিগতভাবে এটা কখনও সমর্থন করি না। বিষয়টা কীভাবে কী ঘটল আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’