বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:০০ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৩৯ পিএম
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। প্রবা ফটো
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা।
হলে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে মুখোমুখি হন ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন ভবনের আইন বিভাগে চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের কক্ষে তাদের মুখোমুখি করা হয়।
পরে সংবাদকর্মীদের ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা ও ড. মুর্শিদ আলম তাদের মুখোমুখি করেন। এ সময় আমার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা।’
ফুলপরী বলেন, ‘সানজিদা বলেছেন, আমাকে মাফ করে দাও।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
তবে তদন্ত চলাকালে ভুক্তভোগী ও নির্যাতনকারীদের মুখোমুখি করা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ ব্যাপারে জানতে আইন বিভাগে চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোনে সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সমঝোতার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা তদন্ত কমিটিতে সমঝোতার জন্য বসে নেই। আমাদের যা দায়িত্ব তা আমরা পালন করছি। তদন্তের তথ্য যাচাই-বাচাই করার জন্য আমরা দুজনকে মুখোমুখি করেছিলাম।’
ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে, ফুলপরী এমন দাবি করলে তা ভুল হবে। আমরা তদন্তরের স্বার্থে শুধু এতটুকু বলবো, এমন কিছু হয়নি ‘
গত মঙ্গলবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। এতে বলা হয়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম রাতে তাকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। অসুস্থ থাকায় সেদিন তিনি যেতে পারেননি। এরপর তাকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাবাসসুম। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাতে প্রথম দফা র্যাগিং শেষে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
পরদিন রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ ৭/৮ জন মিলে তাকে গণরুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা হয় এবং মুখ চেপে ধরে গালাগাল করা হয়। এমনকি তাকে ময়লার গ্লাস মুখ দিয়ে পরিষ্কার করতে বলেন সানজিদা। পরে তাকে জামা খুলতে বলেন অভিযুক্তরা। জামা না খুললে ফের মারধর করা হয় তাকে। এরপর জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনা কাউকে বললে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।
লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর হল ছেড়ে পাবনায় নিজ বাড়িতে চলে যান ওই ছাত্রী। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আইনজীবী আজগর হোসেন তুহিন। তখন আদালত আইনজীবীদের লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। পরে গত বুধবার ওই ছাত্রীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নির্দেশে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়।