× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রাথমিকে বৃত্তির সংশোধিত ফল

কেউ হাসছে, কেউ কাঁদছে

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৩ এএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৫ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা পৌর শহরের সি বার্ড কেজি অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে এবার পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১০ শিক্ষার্থী।

প্রথম ধাপে প্রকাশিত বৃত্তি পরীক্ষায় দেখা দেখা স্কুলটি থেকে মাত্র একজন শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। পরে আবার সংশোধিত ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির ১০ জন শিক্ষার্থীই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক রুহেলিকা সুলতানা রুমি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রথম রেজাল্ট দেখে আমরা হতাশই হয়েছিলাম। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের নাম তালিকায় না দেখে তারা ভেঙে পড়েছিল। সংশোধিত ফলে সবাই খুশি। 

একই উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের পুষ্প নিকেতন বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় খাদিজা ইসলাম মীম। স্থানীয়ভাবে নেওয়া কয়েকটি বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও প্রাথমিক বৃত্তির প্রথম তালিকায় তার নাম আসেনি। এতে কান্নায় ভেঙে পড়ে মীম। দ্বিতীয় তালিকায় সাধারণ বৃত্তিতে তার নাম আসে।

মীমের মামা মতিউর রহমান বলেন, মীম খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। বৃত্তিতে তার নাম না আসায় খুবই হতাশ ছিলাম আমরা। সংশোধিত তালিকায় সাধারণ বৃত্তির তালিকায় তার নাম আসায় আনন্দিত।

এভাবে শত শত শিক্ষার্থীর প্রথম ফলের তালিকায় নাম না এলেও সংশোধিত তালিকায় তাদের নাম এসেছে। আছে উল্টো চিত্রও। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রোয়াইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার বৃত্তি পরীক্ষার স্থগিত হওয়া ফলে তিন শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল।

এ খবরে উচ্ছ্বসিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গ্রামবাসী। তবে সংশোধিত ফল প্রকাশের পর ওই বিদ্যালয়ের বৃত্তিপ্রাপ্ত তিন শিক্ষার্থীর নামই বাদ পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই হতাশ। শুধু রোয়াইড় নয়, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বালাবাড়ি মডেল স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সামিউল হাসান আরাফাত। প্রথমে প্রকাশিত ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলেও সংশোধিত ফলাফলে কোনো ক্যাটাগরিতেও বৃত্তি পায়নি সে। 

এভাবেই সংশোধিত তালিকায় কারও নাম এসেছে, আবার কারও নাম বাদ পড়েছে। এতে কোনো শিক্ষার্থী আনন্দিত হলেও অনেক শিক্ষার্থীই নাম বাদ পড়ায় মনঃক্ষুণ্ন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীরা।

তারা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খামখেয়ালিপনার দায় নিতে হয়েছে খুদে শিক্ষার্থীদের। তাদের মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোমল মনে দাগ কাটার দায় নেবে কে? 

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের বৃত্তির সংশোধিত ফল প্রকাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, এই বৃত্তির প্রক্রিয়াগত সিদ্ধান্তই ভুল। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো শিক্ষার্থী-খারাপ শিক্ষার্থী হিসেবে বৈষম্য তৈরি করেছে। এটি আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের পরিপন্থি। আবার পরীক্ষার একবার ফল প্রকাশ হলো, আবার বাতিল করা হলো।

অনেকের নাম প্রথমে এলো, পরে বাতিল হলো। এতে তাদের ওপর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগিক যে চাপ পড়েছে, তা বেদনাদায়ক। এটি সারা জীবন শিশুদের বয়ে বেড়াতে হবে। শিশুদের এই বয়সে এই ট্রমা দেওয়া একদমই অনৈতিক। এ ধরনের পরীক্ষা দিয়ে শিশুদের নিয়ে আগামীতে না খেলার আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, প্রথমে যখন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার প্রতিবাদ করেছিলাম আমরা। আমাদের প্রতিবাদ তারা গ্রহণও করেনি। এটা কোনো প্রশাসনিক কাজ নয়; এটা একাডেমিক কাজ। শিশুদের আবেগিক ও মানসিক বিকাশের কাজ। কাজেই আগামীতে এ ধরনের কাজ করতে হলে অবশ্যই যেন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়। 

ফল পরিবর্তনের হিসাব জানেন না কর্মকর্তারা

ঠিক কতজনের ফল পরিবর্তন করা হয়েছে, সেটি বলতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে যেসব শিক্ষার্থীর নাম সংশোধিত ফল থেকে বাদ পড়েছে তাদের ফল যাচাই করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. উত্তর কুমার দাশ বলেন, বৃত্তির ফল চ্যালেঞ্জ ও পুনঃনিরীক্ষণ করার সুযোগ আইনে নেই। তারপরও এবার যেহেতু অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটেছে, তাই আমরা এ সুযোগটি দিতে চাই। কী কারণে বৃত্তি পায়নি আবেদনকারীকে ব্যাখ্যাসহ উত্তর দেওয়া হবে। 

ফল সংশোধন করা হলেও সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট অনুজ কুমার রায়। তিনি বলেন, নতুন করে সংশোধিত ফলাফলে মোট সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

তবে মেধাতালিকার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগের তালিকায় নাম ছিল নতুন তালিকায় অনেকেই বাদ পড়েছেন। আবার সংশোধিত তালিকায় নতুন করে অনেকের নাম এসেছে। এটি সবাইকে মেনে নিতে হবে। তবে ঠিক কতজনের ফল পরিবর্তন করা হয়েছে, তা বলতে পারেননি তিনি। 

সংক্ষুব্ধ হয়ে ফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংশোধিত ফলে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে বা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে কিন্তু কোনো তালিকায় নাম আসেনি, তিনি চাইলেও এ আবেদন করতে পারবেন। আমরা তাদের আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখব। দেশে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় বা অধিদপ্তরে এ আবেদন করতে পারবেন।’

এই কর্মকর্তার দাবি, সংশোধিত ফল প্রকাশের পর প্রকৃত মেধাবীদের কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃত্তির ফলের নানা ধরনের কোটা থাকে। এসব কোটার কারণে অনেক অভিভাবক ভাবতে পারেন, ওই স্কুলের বাচ্চা বৃত্তি পেলে আমার বাচ্চা কেন পাবে না? খোঁজ নিলে জানা যাবে, বৃত্তি না পাওয়া শিক্ষার্থী পৌরসভার মধ্যে কোনো স্কুলের, বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী গ্রামের কোনো স্কুলের। এসব বিভ্রান্তি দূর করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফল স্থগিতের যে কারণ জানালেন কর্মকর্তারা 

ফল তৈরির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের পর জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে কোড দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষকেরা সেই খাতা মূল্যায়ন করেন। ফলে কার খাতা কোনটি, তা বোঝা যায় না। কিন্তু মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর কোড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বরে যোগ হয়। শেষের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিকোডিং। এই কোডিং ও ডিকোডিং প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে।

ঝিনাইদহের শৈলকুপাসহ কয়েকটি উপজেলায় সব শিক্ষার্থীকে একই কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কম্পিউটার সেলে ধরা পড়েছে। এ কারণে সারা দেশের ফল পুনরায় যাচাই করার জন্য ফল স্থগিত করা হয়। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় দেশের ৫ লাখ ৩৬২ জন নিবন্ধন করলেও সেখান থেকে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৮২ হাজার ৩৮৩ জনকে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় বৃত্তি দেওয়া হয়।

এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) ৩৩ হাজার ও ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায় পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বৃত্তি পেয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। আবার কেউ কেউ দুইবারও বৃত্তি পেয়েছে।

এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ফল ঘোষণার চার ঘণ্টা পরই কারিগরি ত্রুটি দেখিয়ে ফল স্থগিত করা হয়। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের কমিটি করা হয়। ফল স্থগিতের পর ওই দিন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছিলেন, ফল স্থগিত হলেও কারও ফল পরিবর্তন হবে না।

সংশোধিত ফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ সম্পর্কিত অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য দুঃখও প্রকাশ করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ্ রেজওয়ান হায়াত। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা