জাবিতে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর শুরু

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা বিভাগের আয়োজনে ৫ দিনব্যাপী বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। বিভাগের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চতুর্থ বারের মতো এ আয়োজন করা হয়েছে। 

রবিবার (১৯ মার্চ) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের নিচতলায় ‘উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান’-এর মধ্য দিয়ে প্রদর্শনীটি শুরু হয়।

প্রদর্শনীতে চারুকলা বিভাগের বিএফএ এবং এমএফএ পর্যায়ে অধ্যয়নরত ৮২ জন শিক্ষার্থীর ১৫২ টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীটি চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

চারুকলা বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ফারহানা তাবাসসুমের সভাপতিত্বে এবং সহকারী অধ্যাপক ধীমান সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দেশবরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান, অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক আলমগীর কবীর, অধ্যাপক শাহেদুর রশিদ প্রমুখ।

প্রদর্শনীতে পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন অতিথিরা। পুরস্কার প্রদান শেষে প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন উপাচার্য। পরে ফিতা কেটে জয়নুল আর্ট গ্যালারিতে প্রবেশ করে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে শিল্পকর্ম প্রদর্শন করেন উপাচার্য ড. নূরুল আলম ও অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘যাদের সৌজন্যে এই প্রদর্শনী আয়োজিত হচ্ছে তাদের আমি জানাই উষ্ণ অভিনন্দন। যারা ২০২২ সালের প্রদর্শনীতে পুরস্কার পেয়েছ তাদেরও জানাই অভিনন্দন। চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটা সুখবর আছে। সুখবর হচ্ছে, আমি আশা করছি খুব শিগগিরই ফাইন আর্ট ফ্যাকাল্টি বিল্ডিংটা হবে। সর্বশেষ একনেক মিটিংয়ে এই বিষয়ে আমি কথা বলেছি, তারা বলেছিল যে বিল্ডিং ১০ তলা হবে। কিন্তু আমি বলেছি বিল্ডিং পূর্বের নকশা অনুযায়ীই হবে, কারণ সেখানে পাখিদের ফ্লাইং জোন আছে, যার জন্য ৬ তলা নকশাটাই প্রযোজ্য। পরে তোমাদের শিক্ষক ময়েজ স্যার আমাকে জানিয়েছেন যে এটা একনেকে পাশ হয়ে গেছে। আশা করছি, আগামী একনেকে এর অনুমোদন হয়ে যাবে। এই ফ্যাকাল্টি বিল্ডিংটা হলে আরও ৪-৫ টা বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এবং আমরা গর্ব করে বলতে পারবো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন আর্ট ফ্যাকাল্টি আছে।’

শিল্পী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘আমি সবসময় মনে করি আমি নিজেও একজন ছাত্র এবং এই ছাত্র অবস্থাতেই আমি মৃত্যুবরণ করতে চাই। এটি বোধহয় শিল্পী হিসেবে সবচে বড় প্রাপ্তি। আমরা যখন কলেজে পড়তাম তখন এই বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী দিনটির জন্য মুখিয়ে থাকতাম। সারাবছর ধরে যে কাজ হচ্ছে তার মূল্যায়ন হয় এইদিনে। ছাত্রদের কাছে আমি একটি কথাই বলবো, শিক্ষক যাঁরা রয়েছেন, তোমরা তাদের থেকে আদায় করে নিবে। চারুকলা বিভাগে ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক থাকতে হয় নাহলে এই স্ট্রিমে প্রকৃত আদানপ্রদান হয় না।’

তিনি বলেন, ‘মোবাইলের যে একটা বিষয় বর্তমানে শুরু হয়েছে সেটা ভাল হলেও আমার মতে এর একটা খারাপ দিক রয়েছে।যেমন, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ইদানিং মোবাইলে ছবি তুলে মডেল ড্রইং করে, এই চর্চাটা ভাল না। আর চারুকলার শিক্ষার্থীদের সবসময় সাথে স্কেচ খাতা রাখা উচিৎ। আমার মতে স্কেচ খাতার উপরেও একটা বার্ষিক পুরস্কার রাখা উচিৎ আমার শিল্পী জীবনের ৫০ বছর বয়স, আমি এখনও সাথে স্কেচ খাতা সঙ্গে রাখি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবজারভেশন শিল্পীর জন্য সবচে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। হাত দিয়ে ছবি আঁকলেই ছবি আঁকা হয় না। হাত দিয়ে আঁকলে স্কিল বাড়ে কিন্তু ছবি আঁকা হয় অন্তর দিয়ে।’

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অনিন্দ্য সুন্দর প্রাণ প্রকৃতি সেটা ফুটিয়ে তোলার জন্য কিছু ল্যাকিংস ছিল, সেটা চারুকলা বিভাগ পূরণ করেছে। শরীফ এনামুল কবির স্যার, আফসার আহমদ স্যারসহ যাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের কথা স্মরণ করছি। আশা রাখছি এই বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় পথচলায় ভূমিকা রেখে যাবে।’