বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৭ পিএম
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ২৩:৫৫ পিএম
প্রতীকী ছবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে রড ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল শিক্ষার্থী। শনিবার (২৫ মার্চ) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীম উদ্দীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন। তার নাক-মুখ-ঠোঁটে অন্তত পাঁচ-ছয়বার স্টাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
এমন বেধড়ক মারধরের পেছনে কারা? গতকাল সেই খোঁজ নেওয়া হয়। জানা যায়, অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসের ‘প্রলয়’ নামে একটি গ্যাংয়ের সদস্য।
ক্যাম্পাসে মারামারি, ছিনতাইয়ে যারা অগ্রগামী তাদেরকে বেছে বেছে নেওয়া হয়েছে এই গ্যাংয়ে। নানা অপকর্ম আর মাদকের সঙ্গে তাদের চলাফেরা। সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শহীদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় তারা গ্যাংয়ের অঘোষিত কার্যালয় বানিয়েছেন। সেখানে তারা নিয়মিত জড়ো হন। ক্যাম্পাসে তাদের চলাফেরা একসঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সংঘবদ্ধ ছবি দেন নিয়মিত। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের পর এই চক্রের নাম প্রকাশ্যে আসে।
‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ মারধরের শিকার শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের কাছে বন্ধুদের সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ বেপরোয়াভাবে একটি মাইক্রোবাস সেদিক দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের গায়ে কাদা ছুড়ে মারে। তারপর আমি ও আমার বন্ধু তিন নেতার মাজারের কাছে সেই মাইক্রোবাসটি আটক করে কারণ জানতে চাই। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা আমাকে হল গেটে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পেটায়।’
জুবায়ের আরও বলেন, ‘আমাকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সিফরাত সাহিলের ফোন দিয়ে কল দেওয়া হয়েছিল। ট্রুকলার দিয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি। আমার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে অতর্কিত হামলা চালায়। সে সময় স্টাম্প, রড, বাঁশ দিয়ে ২০-৩০ জন আমার ওপর হামলা করে ছয়-সাত মিনিট পিটিয়েছে। নাকে-মুখে অন্তত পাঁচ-ছয়বার স্টাম্প দিয়ে আঘাত করেছে। তখন নাক ফেটে অনবরত রক্ত ঝরছিল।’
স্যার এফ রহমান হলের ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সারা শরীরে রড ও স্টাম্পের আঘাত রয়েছে। শরীর ফুলে গেছে। এজন্য না পারছি খেতে, না পারছি উঠে বসতে। আমার বাঁ চোখের পাশে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ায় দেখতে সমস্যা হচ্ছে। আমি সিটি স্ক্যান, এক্স-রেসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করিয়েছি। এর মধ্যে এক্স-রের একটা রিপোর্ট এসেছে। সেখানে নাকে ফ্র্যাকচার ধরা পড়েছে। বাকি রিপোর্টগুলো পেলে আরও জানতে পারব। এখন শরীর নড়াতে পারছি না। নাক-মুখ ফুলে যাওয়ায় খেতেও পারছি না।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীসহ নানা সূত্রে হামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের তবারক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সিফরাত সাহিল, মার্কেটিং বিভাগের মোহাম্মদ শোভন, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ফিন্যান্স বিভাগের মোশাররফ হোসেন, চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের ফেরদৌস আলম ইমন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ফারহান লাবিব, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের হেদায়েতুন নুর, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, আবু রায়হান ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অর্ণব।
এ ছাড়া জিয়া হলের ফয়সাল আহমেদ সাকিব, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আব্দুল্লাহ আল আরিফ, জসীমউদ্দীন হলের রহমান জিয়া ও নাইমুর রহমান দুর্জয়ের নামও শোনা যাচ্ছে অভিযুক্ত হিসেবে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দেওয়ায় ও মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘একটি গ্রুপকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। ভিকটিম আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য।’