বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৮:০৩ পিএম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৯:০১ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। সংগৃহীত ছবি
রমজান মাসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে সব আবাসিক হল। বেশ কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা চলায় উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন। যাদের পড়ালেখার ‘চাপ’ বেশি তারাও রয়েছেন হলে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর রমজানে তুলনামূলক বেশি শিক্ষার্থী হলে রয়েছেন।
তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলেও হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান বাড়েনি। অন্য মাসগুলোর মতোই নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, রমজান মাস উপলক্ষে হল কর্তৃপক্ষ ভালো খাবার পরিবেশন করবে, এমন আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু খাবারের দাম বাড়ালেও মান মোটেও বাড়েনি। নিম্নমানের খাবার পরিবেশনকে দুঃখজনক বলে মনে করেন কেউ কেউ।
হলের ডাইনিংগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, রাতের খাবারের মূল্য আগের মতো থাকলেও সেহরির খাবারে ৫-১০ টাকা বা তারও বেশি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশন করা হচ্ছে একই মানের খাবার। বাধ্য হয়ে অনেকে বাইরের দোকানগুলোতে বাড়তি টাকা দিয়ে খাবার খাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের যেমন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে ক্ষোভ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলে নিয়মিত খাবারের দাম ৩৮ টাকা। কিন্তু সেহরির জন্য ১২ টাকা বাড়িয়ে দাম রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে একই মানের খাবার।
বিষয়টি নিয়ে শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আশরাফ উদ্দীন বলেন, ‘৩৮ টাকার খাবার ৫০ টাকায় বিক্রি করা হলেও ন্যূনতম মান বাড়েনি। এই খাবারে সেহরি খেয়ে সারা দিন রোজা থাকা দায়।’
সাদ্দাম হোসেন হলে ২৮ টাকার খাবারের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ টাকা। ৩৮ টাকার খাবারের দাম নেওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। এই হলের খাবারেও বাড়েনি মান।
সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোতালেব বিশ্বাস বলেন, ‘আগের মাসের তুলনায় রমজানে হলের খাবারের দাম বৃদ্ধি করলেও খাবারের মান আহামরি বাড়েনি। এতে করে আমরা আগের তুলনায় বাড়তি মূল্য দিলেও মানসম্মত সেহরি পাচ্ছি না।’
এদিকে সেহরির সময় ভালো খাবারের আশায় এক হলের শিক্ষার্থীদের অন্য হলে যেতে দেখা যায়। সাদ্দাম হোসেন হলের শিক্ষার্থীরা লালন শাহ হলে, আবার শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা যায় সাদ্দাম হোসেন হলে। এভাবে তারা ভালো খাবারের খোঁজে হলগুলো ঘুরতে থাকেন। তবে কিছু হলে খাবারের মান ভালো হলেও সেটা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। যা সত্তর টাকা থেকে নব্বই টাকার মধ্যে।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাজিদুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, ‘জিয়া হলে কয়দিন থেকে খাচ্ছি, খাবারের মান ভালো না হওয়াতে লালন শাহ হলে যাচ্ছি। তবে ওখানেও খেয়ে মজা পাচ্ছি না। বাড়তি টাকা লাগলেও মনের মতো খাবার পাচ্ছি না। তাই নিজ হল রেখে অন্য হল ও দোকানগুলোতে ছুটতে হচ্ছে।’
ছাত্রী হলগুলোর অবস্থাও একই। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুসরাত রাসা বলেন, ’রমজানে বাড়ি যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় যেতে পারছি না। হলে অন্যকোনো সমস্যা নেই। তবে এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেহরি খেয়ে রোজা রাখা। ডাইনিংয়ে খুব বাজে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’
খাবারের দামের বিষয়ে শেখ রাসেল হলের ডাইনিং ম্যানেজার মাসুদ বলেন, ‘বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাই আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। অন্য মাসের তুলনায় রমজানে খাবারের মান ভালো করা হয়েছে। এজন্যই দাম একটু বেশি।’
খাবারের মানের বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘যারা হল ডাইনিংয়ে কাজ করছেন তাদের অতিরিক্ত খেয়াল রাখা উচিত। আরও সচেতন হলে নির্ধারিত টাকায় ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা যাবে। হল প্রশাসন এ বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে।’