বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩ ২২:১৮ পিএম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩ ২২:৩২ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিদের কাছ থেকে বৃত্তির চেক নিচ্ছেন এক শিক্ষার্থী। প্রবা ফটো
দেশে এখন কেউ না খেয়ে মরে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ’বিশ্বের একটা ভীষণ রকম অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সেই অবস্থাতেও এখনও আমরা স্বস্তিতে আছি।’
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ও সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার্থী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৫৩০জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।
২৬ মার্চ সাভারের দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্বৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক। ওই প্রতিবেদনে জাকির হোসেন বলেন, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
প্রতিবেদনের সঙ্গে ছোট্ট একটি শিশুর ফুল হাতে স্মৃতিসৌধের দিকে তাকিয়ে থাকার একটি ছবিও প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অন্য একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ছবি তোলার জন্য শিশুটিকে ১০ টাকা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এই বিষয় উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি বলেন, ’একটা ছোট্ট শিশুর হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে তাকে দিয়ে এমন কথা বলানো রাষ্ট্রবিরোধী। ওই ছেলেটির মা বলেছে, আমার ছেলে স্কুলে পড়ে, সে তো বাজারে যায় না। দরদামের কথা জানবে কী করে। তাকে দিয়ে এ ধরনের কথা বলানো রাষ্ট্রবিরোধী সাজানো নাটক। এটা হলুদ সাংবাদিকতা। আমি কিন্তু এর সঙ্গে একটা যোগসূত্র দেখি, কোথায় মোড়লেরা কী কথা বলছেন, তার সঙ্গে তাদের তল্পিবাহকেরা এ ধরনের সাজানো নাটক করছে। ঘটনা যাই ঘটুক আমাদের সচেতন থাকতে হবে।‘
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের পিছিয়ে পড়ার আর কোনো সুযোগ নেই। সত্যকে সত্য বলতে হবে, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে হবে। দেশ এগোচ্ছে, এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে দেশ পিছিয়ে গেছে। আমরা যে দেশকে গড়তে চাই, সেজন্য পেছনে যাওয়া যাবে না, বরং সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই অনেক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সামনের নির্বাচন ও নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে দিপু মনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন তাই কেউ কেউ ভীষণ তৎপর। কেউ কেউ হঠাৎ করে নানা রকম প্রতিবেদন ছাপিয়ে ফেলছেন। বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন খুব ভালো হতে হবে। নিশ্চয়ই আমরাও চাই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হোক। যখন ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটারে ভরা ছিল আমাদের ভোটার তালিকা, তখন তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা আন্দোলন করেছিলেন। সেই আন্দোলনে কেউ কর্ণপাত করেনি, তৎকালীন সরকারও বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি। তার ফলাফল কী তা আপনারা জানেন। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় যতগুলো সংস্কার হয়েছে, তার সবগুলোই শেখ হাসিনার দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই হয়েছে। ১৯৭৫-এর পরের থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, হ্যাঁ-না ভোটের প্রচলন করেছিল, শতভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। সেই অবস্থা পাড়ি দিয়ে আজকে একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, আরও ভালো করার সুযোগ নিশ্চয়ই আছে, আমরা সেটা করার চেষ্টা করব। কিন্তু যারা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করল, আজকে তাদের পক্ষ নিয়ে কীভাবে আমাদের কথা বলে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ’বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি গ্রন্থ পড়লে জানা যায় তিনি কীভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি নানাভাবে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারপর তেতাল্লিশের মন্বন্তরে সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে বঙ্গবন্ধু লঙ্গরখানা খুলেছিলেন। ছেচল্লিশের দাঙ্গায় তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। আজকে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিবর্তনে, সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর মানচিত্র পরিবর্তন করে দিয়েছিল, এত বড় একটি মর্যাদার অধিকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আসুন আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করি, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য কাজ করে যাবে, যার সম্মুখ সারিতে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেবে শিক্ষার্থীরা।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই বৃত্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো শিক্ষার্থীর যাতে অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে সমস্যা না হয়। আর কোনো শিক্ষার্থী যাতে এই বৃত্তি নিতে ইতস্তত বোধ না করে, সেজন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাই। এই শিক্ষার্থীরাই বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কাজ করছেন। এই বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আবার আমাদের পরবর্তী অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নেবেন।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহীম।