× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঢাবি ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একাধিক গ্যাং

শোয়াইব আহমেদ, ঢাবি

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৯ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় সামনে এসেছে ‘প্রলয় গ্যাং’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের খবর। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, প্রলয় গ্যাংয়ের মতো শিক্ষার্থীদের আরও বেশ কয়েকটি চক্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঢাবি ক্যাম্পাস। দল বেঁধে মাদক সেবন, ক্যাম্পাসে ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন এসব গ্যাংসের সদস্যরা। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারা ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। 

প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধান বলছে, রাজনৈতিক মদদে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন করে শিক্ষার্থী মিলে একাধিক গ্যাং গড়ে তুলেছেন। ঢাবি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানা অপকর্ম করে বেড়ানো এসব গ্যাংয়ের মধ্যে প্রলয় গ্যাং ছাড়াও রয়েছে ফ্রেন্ডস, নিশাচর, নিশাচর-২ ইত্যাদি। 

এসব গ্যাংয়ে সম্পৃক্ত একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে গ্যাং গড়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের গেস্টরুম, গণরুম ও বড়ভাই সংস্কৃতি। অবাধে মাদকসেবন, ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতে কিংবা স্রেফ রোমাঞ্চের খোঁজেও অনেক শিক্ষার্থী এসব গ্যাংয়ে যুক্ত হচ্ছেন।

প্রলয় গ্যাং ছাড়াও ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় সক্রিয় আছে ‘নিশাচর’নামে আরেকটি গ্যাং। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে এই গ্যাং গড়ে তুলেছেন। ফেসবুকভিত্তিক একটি গ্রুপের মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখেন। এই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধেও ছিনতাই-চাঁদাবাজি, হেনস্থা-মারধর ও মাদকসেবনের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ গ্যাংয়ের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে তাদের গ্রুপের কয়েকজন বহিষ্কার হওয়ার পর বাকিরা এখন সাবধান হয়ে গেছেন। 

কীভাবে গড়ে উঠল এই গ্যাং? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কথা হয় নিশাচর গ্রুপের সাবেক এক সদস্যের সঙ্গে। ২০১৭-১৮ বর্ষের ওই শিক্ষার্থী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর রাতের বেলা হলের গেস্টরুমে ডেকে রাজনৈতিক বড় ভাইয়েরা নানা নিয়ম-কায়দা মেনে চলার কথা বলতেন। তারপর ক্যাম্পাস চেনার জন্য হল থেকে বের করে দেওয়া হতো। দল বেঁধে রাতের ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে বিভিন্ন হল থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে চেনাজানা গড়ে ওঠে। সেই সূত্রেই সমমনা অনেকের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। এরপর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারা ফেসবুকে গ্রুপ খোলেন। সেখানে নিজেদের রাতের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হতো। এভাবে একপর্যায়ে ক্যাম্পাসে ছিনতাই, চাঁদাবাজি আর বহিরাগতদের ধরে র‌্যাগিং দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হাতিয়ে নিয়ে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে আনন্দে মাতেন তারা। এভাবে দিনদিন ভয়ংকর হয়ে ওঠে এসব গ্যাং। 

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে গড়ে তুলেছেন নিশাচর-২ নামে আরেকটি গ্রুপ। ফেসবুকে এ নামে একটি গ্রুপও আছে। সেই গ্রুপে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীও রয়েছেন। নিশাচর–২ গ্যাংয়ের এক সদস্য বলেন, ‘আমাদের গ্রুপে ৭০-৮০ জন সক্রিয় সদস্য আছেন। এর মধ্যে অনেকে ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। গ্রুপের সবাই অপকর্মে জড়িত থাকে না। রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছাই নেই, এমন সর্বোচ্চ ১০-১৫ জন অপকর্মে জড়িত। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলে কেউই এ ধরনের অপকর্মে জড়াতে পারে না। এরা শুধু রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।’

নিশাচর-২ গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা হয় এই গ্যাংয়ের সাবেক এক সদস্যের সঙ্গে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি জানান, গেস্টরুম থেকে বেরিয়ে রাতের ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে অন্য হলের ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ফেসবুকে গ্রুপ খোলা হয়। সেই গ্রুপের আলোচনার মধ্যে কেউ কেউ বলতে থাকেন, রাতের ক্যাম্পাসে আসা বহিরাগতদের র‌্যাগ দিয়ে মারধর এবং সুযোগ পেলে টাকা হাতিয়েও নেওয়া যায়। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ঢোকা ট্রাক আটক করে এখানে-সেখানে ঘুরতেও যাওয়া যায়। এমন বিভিন্ন আলোচনার সূত্র ধরেই এসব অপকর্মে যুক্ত হয়ে পড়েন অনেকে। তবে মানসিকতার পার্থক্যের কারণে অনেকে সেসব গ্যাং থেকে বেরিয়েও গেছেন। 

ক্যাম্পাসে গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে প্রায় অভিন্ন প্রেক্ষাপটের কথা বলেছেন আলোচিত ‘প্রলয় গ্যাং’থেকে বেরিয়ে আসা একাধিক সদস্যও। তারা জানান, গেস্টরুমে বড় ভাইয়েরা হলে থাকার নিয়মকানুন ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও দলীয় স্লোগান দেওয়া শেখানোর পর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিতেন। তখন বলে দেওয়া হতো, রাত ৩টার আগে কেউ যেন হলে না ফিরে আসে। তাই বাধ্য হয়ে রাত-বিরাতে ক্যাম্পাসের এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতে হতো।

এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কার্জন হল ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে অন্যদের সঙ্গে পরিচয়। তারপর র‌্যাগ দেওয়ার নাম করে ধীরে ধীরে মাদকসেবন, ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন অনেকে। সেই টাকায় দামি মোবাইল ফোন-মোটরসাইকেল কিনেছেন কেউ কেউ। তা দেখে উৎসাহিত হয়েছেন আরও অনেকে। ক্যাম্পাসে মিনিট্রাক আটক করে অনেক সময় হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেকসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে যেতেন গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব কাজে ছাত্রলীগের কয়েকজন ‘বড় ভাই’তাদের উৎসাহ দিতেন বলেও দাবি করেছেন প্রলয় গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য।

এসব গ্যাংয়ের সদস্যের মদদদাতা হিসেবে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর খবর পাওয়া যায়। তারা একসময় ‘ফ্রেন্ডস’নামে একটি গ্রুপ খুলেছিলেন। সেই গ্রুপ মূলত নিজেদের মধ্যে আলাপের জন্যই খোলা হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে কয়েকজন মিলে ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম শুরু করেন। পরে তারা কিছুটা সিনিয়র হওয়ার পর সরাসরি অপকর্মে না জড়িয়ে জুনিয়দের এসব কাজে উৎসাহ দিতে থাকেন। জুনিয়র গ্যাংয়ের সদস্যরা কোনো কাজে গিয়ে বিপদে পড়লে সেই সিনিয়ররা ঘটনাস্থলে ছুটে যেতেন। ফ্রেন্ডস গ্রুপের কয়েকজন এখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের সঙ্গে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘গেস্টরুম, গণরুম সংস্কৃতি এখন আর নেই বললেই চলে। এসবের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করছি। যারা এসব করছে তারা ছাত্রলীগের কেউ না, আগের কমিটি কেন তাদের পদায়ন করছে জানি না। বর্তমান কমিটিতে এদের রাজনীতি করার সুযোগ নেই।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগিতা করা হচ্ছে সব সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যেন কোনো ধরনের ফায়দা নিতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে সবাইকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা