সেলিম আহমেদ
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১০:২৮ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:০৬ পিএম
ফাইল ফটো
দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায় সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউসিজি। তবে এখন পর্যন্ত নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়- এমন স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, একাডেমিক কাউন্সিলে আলাপ-আলোচনা করে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে চারটি স্বায়ত্তশাসিতসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনও নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি।
তবে তারা বলছেন, স্বায়ত্তশাসন আছে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতির আদেশ মানারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে একাডেমিক কাউন্সিলে আলাপ-আলোচনা করে একক ভর্তি পরীক্ষায় থাকবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, রাষ্ট্রপতি যখন কোনো নির্দেশনা দেন, সেটা বাস্তবায়ন করা সবারই উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন আছে। পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা দীর্ঘকাল থেকে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করি। যে প্রজ্ঞাপনটি জারি হয়েছে, সেটি আমরা একাডেমিক কাউন্সিলে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন আছে, তা অনুসরণ করাও বাঞ্ছনীয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকার ও ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটে আলোচনা করব। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একই কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি বলেন, এখানে অনেক আইনি বিষয় আছে। সেগুলো সম্পর্কে এখনও সম্পূর্ণ অবগত নই। আর রাষ্ট্রপতির আদেশ অবশ্যই পালনীয়।
একই সুরে কথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেণু কুমার দে। তিনি বলেন, ইউজিসির ধারণাপত্র পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতির আদেশ মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির সদস্য দিল আফরোজ বলেন, রাষ্ট্রপতি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান। তাই তার আদেশ মানতে সবাই বাধ্য। এখানে কোনো অবহেলার সুযোগ নেই।
এদিকে নানা নাটকীয়তার পর চলমান শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে গুচ্ছের ওয়েবসাইটে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে ৩ জুনের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার কথা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা। এর পর থেকে সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়, আটটি কৃষি এবং তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা গুচ্ছে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেয়। এর বাইরে নিজস্ব স্বকীয়তার কথা বলে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ টেক্সটাইলসহ বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তারা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়।
বিগত সময়ের নানা বিশৃঙ্খলতা কেন্দ্র করে গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় থাকবে না। এর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার ফলে সংকটে পড়ে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া।
সংকট সমাধানে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির সহযোগিতা চাওয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি চলতি বছর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা ও আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশ দেন।
গত শনিবার রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে : ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলরের অভিপ্রায় অনুযায়ী বিগত সময়ে যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত ছিল, তাদের অংশগ্রহণে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব প্রদান করা হলো।’
রাষ্ট্রপতির আদেশের পর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের জরুরি সভায় এবার একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী ২২ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকছে। ১৫ এপ্রিল ভর্তি আবেদন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করা হয়েছে। আজ ১৮ এপ্রিল অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হবে। আর এটি চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। ৩ জুনের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করা হবে।