বরিশাল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩ ২৩:৩৯ পিএম
আপডেট : ০১ মে ২০২৩ ২৩:৫০ পিএম
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা দ্বিতীয়বারের মতো স্থাগিত করা হয়েছে। সংগৃহীত ফটো
বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের নির্দেশে উজিরপুর উপজেলার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত করা হয়েছে। ফলে দুই প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিতে পারেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি মো. নুরুল ইসলামকে ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার (১ মে) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
পরে জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম অল্প সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আশ্বাস দিলে বেলা ২টার দিকে চাকরিপ্রার্থীরা শান্ত হয়ে ফিরে যান।
খোঁজ জানা গেছে, উপজেলার আটিপাড়া স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ও রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঁচটি পদে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ১ মে দিন নির্ধারণ করা হয়। এজন্য প্রায় অর্ধশত পরীক্ষার্থী জিলা স্কুলে উপস্থিত হন। তবে এদিন হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি ও বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম মোবাইলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার নির্দেশ দেন। ফলে এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে কী কারণে স্থগিত করতে বলেছেন সে বিষয়ে সংসদ সদস্য কিছু বলেননি।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য লুৎফর রহমান ও সুখেন্দু শেখর বৈদ্য জানান, ডিজির প্রতিনিধি ও জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিবার্য কারণবশত নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন। এ ঘটনা জানার পর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা প্রার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। একপর্যায়ে তারা পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম উপস্থিত সবাইকে জানিয়েছেন, এমপি শাহে আলমের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে শিক্ষককে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করেন। দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় পরীক্ষার্থীরা শান্ত হয়ে ফিরে গেছেন।
পরীক্ষার্থী সুকান্ত চন্দ্র দাস জানান, তিনি রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদের একজন প্রার্থী। গলাচিপা থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। কিন্তু এসে শুনেছেন পরীক্ষা হবে না। জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমপি শাহে আলমের নির্দেশে পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। এর আগেও একবার এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।
বিনয় হালদার নামে আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা দিতে একাধিকবার এসেছি। আজকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছে। প্রধান শিক্ষক বলেছেন আজকে তোমরা যাও, সামনে তোমাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন আমরা জানতে পেরেছি, এমপির কারণে পরীক্ষা বাতিল কারা হয়েছিল। আজকেও আবার এমপি সাহেবের কারণে পরীক্ষা বাতিল হলো।’
রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জীবন কৃষ্ণ সিকদার জানান, দেড় মাস আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর আগে নিয়োগ পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির সাথে এমপির বাগ্বিতণ্ডা হয়। তাই সেই পরীক্ষা হয়নি। আজ জিলা স্কুলে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। সকাল সাড়ে ৯টায় তারা এসে পৌঁছেন। এসে শুনতে পান এমপির নির্দেশে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, বরিশাল জিলা স্কুলে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল আজ (১ মে)। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে এমপি সাহেবের সাথে কথা বলেছেন। পরে তিনি পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। কেন করেছেন সেই রহস্য আমি জানি না।’
এ বিষয়ে এমপি শাহে আলম মোবাইল ফোনে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নিয়োগটি দুর্নীতির মাধ্যমে হচ্ছিল। তা ছাড়া এ নিয়োগের বিরুদ্ধে এলাকায় মানববন্ধন ও পোস্টারিং হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেজন্য আমি ফোন করে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলেছি।’