× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কুবির ১৭ বছর পূর্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাবনা

ফাতেমা রহিম রিন্স

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩ ১৩:০৩ পিএম

আপডেট : ২৮ মে ২০২৩ ১৭:০৯ পিএম

কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো

কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রবা ফটো

সবুজের বুকে লাল মাটির টিলা। তার মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতবর্ণের কয়েকটি সুউচ্চ দালান। কুমিল্লার শালবন বিহার ও জাদুঘর সংলগ্ন সালমানপুরে ২০০৬ সালে ২৮ মে ৫০ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। শুরুতে ৭টি বিভাগের অধীনে ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে বিভাগ রয়েছে ১৯টি। হরেক রকমের ফুল-ফল ও জীববৈচিত্র্য পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।

তাদের সংস্কৃতি চর্চার জন্য তৈরি হয়েছে অনুপ্রাস ও প্রতিবর্তনের মতো নানা সাংস্কৃতিক সংগঠনের। সময়ের পরিক্রমায় ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা দেয়ার জন্য রয়েছে একাধিক ভিন্ন নামে চত্বর। কোন কোন চত্বর যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি শিক্ষার্থীদের হাত ধরে তৈরি হয়েছে নতুন আরও অনেক আড্ডা দেওয়ার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র, সেহেতু সেই পরিসরকে আরও বিস্তৃত করতে প্রস্তাবিত হয়েছে ১৯৪.১৯ একরের নতুন ক্যাম্পাস। 

সবকিছুকে সাঙ্গ করে 'শিক্ষাই শক্তি' এই বাক্যকে ধারণ করে দেশের ২৬ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৭ পেরিয়ে পা দিলো ১৮ তে। সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছরকে বলিষ্ঠতার ও পরাজয়কে জয় করার সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর নিজেকে ছাড়িয়ে অনন্য কিছু করার এই আঠারো বছর বয়সে পা দিলো কুবি। চলছে নতুন পথে, নিয়েছে নতুন উদ্যোগ। সকল চাওয়া-পাওয়াকে একত্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানান আবেগ, ভালোবাসা ও অনুযোগ। ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা..

 

কামরুন নাহার শিলা, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ


মাত্র সাতটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ষোলো বছরে আজ উনিশটি বিভাগের বিভায় সমুজ্জ্বল। সেই সাথে আমাদের অনুষদের সংখ্যাও বেড়েছে।সম্প্রতি গবেষণায় উদ্ধুদ্ধকরণে শিক্ষকদের জন্য 'ভাইস চ্যান্সেলর সম্মাননা' এবং মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তি প্রদানের বিষয়টি দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ক। গবেষণার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়নের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি আমাদের সাফল্যের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়েছে। বিভাগগুলোর ওয়েবসাইট আপগ্রেড থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সব দিক থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হতে যাচ্ছে অচিরেই। প্রতিষ্ঠার স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অগ্রগতি অত্যন্ত আশা জাগানিয়া। তবে তারপরও কথা থেকে যায়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানোর জন্য মনে করি কলা অনুষদের বিভাগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র বাংলা ও ইংরেজি বিভাগ নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ গঠিত। এই অনুষদের সমৃদ্ধি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিক সমৃদ্ধির জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা, নাট্যকলা, সঙ্গীত ও নৃত্যকলার মতো বিভাগগুলোর সঙ্গে পরিচিত হোক, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এই প্রত্যাশাই করছি।

 

কাজী ওমর সিদ্দিকী, সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ

 

নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা যে পরিপূর্ণ তা আমরা বলতে পারি না। তবে আমাদের যতটুকু রিসোর্স আছে, আমরা সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। বর্তমান উপাচার্য গবেষণার দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। তা ছাড়া আমাদের যে নতুন ক্যাম্পাসের প্রজেক্ট চলমান আছে, সে কাজ সম্পন্ন হলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা বিশ্ববিদ্যালয় পাবো বলে আশা করছি।

আর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে আমাদের সাবেক শিক্ষার্থী যারা আছে তাদেরকেও আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থী ও স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তারা সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস সুন্দরভাবে উদযাপন করবো। 

 

মোহাম্মদ আইনুল হক, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

 

শিক্ষক হিসেবে বলতে গেলে ১৭ বছরে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যতটুকু যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন রিসোর্সের সংকটের কারনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ততটুকু সম্ভব হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু হয়েছে তাতেও আমরা অখুশি না। বর্তমানে শিক্ষক সংকট আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস সংকট, আবাসন সমস্যা, অডিটোরিয়াম ও সাংস্কৃতিক চর্চার বিভিন্ন বিষয়াদির সংকট রয়েছে। আর কুমিল্লার এই অঞ্চল যেহেতু আগে থেকেই শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো মানের শিক্ষক- শিক্ষার্থীই পেয়ে থাকি। সর্বোপরি, নতুন ক্যাম্পাসের মাধ্যমে আমাদের এই সংকটগুলো উত্তোরণ করতে পারলে, আমরা একটা পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। 

 

 আফসারা বিনতে আলম তন্নি, সাবেক শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ

 

এই লাল মাটির ক্যাম্পাস প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্যই অসম্ভব আবেগের জায়গা। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক অর্জন আর ভালো স্মৃতি দিয়েছে। ভালো শিক্ষকদের সান্নিধ্য, লাল বাস এই জার্নি, হলের সেই আড্ডার দিনগুলি আমি খুব মিস করি এখন। ক্যাম্পাস থেকে চলে আসার পরই আসলে বুঝা যায়, ক্যাম্পাস কত আপন ছিল। তবে অপূর্ণতার ঝুলি তো একটু খালি থেকেই যায়। ভালো ক্যাফেটেরিয়ার অভাব এখনো দেখছি, সব শিক্ষার্থীরাই এখনো অভাববোধ করছে। তা ছাড়া ছোট্ট একটা চাওয়া শিক্ষার্থী থাকাকালীনই ছিল। ক্যাম্পাস এ যদি কয়েকটি ঝুপড়ি আর চায়ের স্টল থাকতো তাহলে ক্যাম্পাসে সবসময় আড্ডা, গান আর আনন্দে ভরপুর থাকতো। সবশেষে ভালো থেকো কুবি। জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

 

কিফায়াত উল হক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

 

২৮ মে আমাদের এ প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ বছরে পা দিতে  চলেছে। আঠারো সংখ্যাটার মধ্যে একটা তারুণ্যের ভাব থাকে। আর তারুণ্যের কাছে প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। তাই এ ১৮ বছরে পদার্পণ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার আশা-আকাঙ্ক্ষাও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতির কোলে সাজানো ছোট ক্যাম্পাস, ছোট তবে সাজানো। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আক্ষেপের একটি জায়গা তৈরি হয়, এখানে যে লাইব্রেরি ঠিক লাইব্রেরির মতোই অনুভূতি দিচ্ছে না। তবে এই আক্ষেপ ব্যতিরেকে, সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ ও নিজের গন্ডি পেরিয়ে আমাকে নানান রকমের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ইমরুল আহসান, পরিসংখ্যান বিভাগ

 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি কি পেয়েছি বলতে গেলে এটি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সারাজীবন বয়ে নিয়ে যাওয়ার মত কিছু সিনিয়র, জুনিয়র, বন্ধু, শিক্ষক-শিক্ষিকা হরেক সম্বোধনে ডাকা সম্পর্ক দিয়েছে। নবীন হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আসি যখন, সবে এক যুগ পার করা একটা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ইট বিছানো রাস্তা, অদৃশ্য মেইন গেইটসহ জীর্ণশীর্ণ একটা ক্যাম্পাস ছিল তখন। সময়ের পরিক্রমায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আজ তার শিশু কাল পার করে কৈশোরে পা রাখতে যাচ্ছে, এর মাঝে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক,  কংক্রিটের ঢালাই করা অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও মুক্ত মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ণে এখনো অনেকটুকু বাকী, তবে এ উন্নয়ন শুধুমাত্র শিক্ষক, প্রশাসনিক কিংবা সরকারই করবে বলে আমি মনে করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় ভূমিকা পালনের জায়গা আছে বলে আমি মনে করি।অবশেষে বলবো জন্মদিনের শুভেচ্ছা কুবি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা