বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩ ২০:৩০ পিএম
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৩ ২০:৪৯ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর বহিষ্কারের আদেশ অকার্যকর করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ওই পাঁচজনের শাস্তি নির্ধারণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২৬ জুলাই) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে ২৩ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এর আগে ১৫ জুলাই ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭-এর অধ্যায় ২, ধারা ৮ অনুযায়ী অভিযুক্তদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এই শাস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিধিসম্মত হয়নি বলে মন্তব্য করেন আদালত।
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বিষয়ে শাস্তি নির্ধারণ করবেন। পরে তিনি শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠাবেন। উপাচার্যের শাস্তি যথাযথ হয়েছে কি না, সে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর চূড়ান্তভাবে শাস্তি আরোপ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটি। শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্তে শাস্তি কমবেশি হতে পারে। কিন্তু এই পাঁচ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে উপাচার্য কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটি সরাসরি শাস্তি আরোপ করেছে। এই বহিষ্কার আদেশ যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি উল্লেখ করে তা বাতিল করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নতুন করে শাস্তি আরোপ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক এ ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করে ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির রায় বহাল রাখার আবেদন করেন। পরে আদালত আবরার হত্যা মামলার কথা তুলে ধরে বলেন, এ ঘটনায় ক্ষমা করা যাবে না। এটা ক্ষমার যোগ্য না। এ ঘটনায় প্রশাসনের দায়ভার আছে। সব ঘটনা সামনে আসে না। কিন্তু ঘটনা তো ঘটেই যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুন বলেন, ‘আমি আমার দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছি। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হোক, এটাই আমার চাওয়া।’
এ বিষয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ’বিধান অনুযায়ী পুনরায় শাস্তি নির্ধারণের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশের বিষয়ে তিনি জানেন না। জানার পর মন্তব্য করবেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, ’আদালত থেকে চিঠি এলে বিস্তারিত বলতে পারব। আদালত যে নির্দেশ দেয় সে আলোকেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ফুলপরী খাতুন নামে এক ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগ নেত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও উচ্চ আদালত, শাখা ছাত্রলীগসহ পৃথক চারটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের আলোকে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করে।