হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১৪:২৪ পিএম
প্রতীকী ছবি
বিধি ও জ্যেষ্ঠতা না মেনেই মহিলা কলেজ চট্টগ্রামে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে। মাহবুবুল আলম ওই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশনে (সংশোধিত) ২০১৯-এর ধারা-৪(ক)-এর ২(১) ও (২) ধারায় বলা আছে, কলেজ অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে অথবা অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ অথবা জ্যেষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে দায়িত্ব দিতে হবে। অথচ ওই কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে সিনিয়রিটির তালিকায় ৮ নম্বরে থাকা সোহানা শারমিন তালুকদারকে। নিয়ম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব দেওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করার কথা থাকলেও কলেজের গভর্নিং বড়ি সেটি করেনি। বিষয়টি জানার পর ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দিলেও সেটি মানেনি গভর্নিং বডি।
নিয়ম আরও রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে বিধিমোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের এক বছরের মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষরযুক্ত কাগজপত্র ও কার্যবিবরণী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃত অথবা গ্রহণযোগ্য হবে না।
কলেজের সিনিয়র শিক্ষকরা জানিয়েছেন, গভর্নিং বডি নিয়ম না মেনে গত ১ ফেব্রুয়ারি সোহানাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাকে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘনসহ বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশনে (সংশোধিত) ২০১৯-এর শর্তাবলি মানা হয়নি। অনিয়মের বিষয়ে গভর্নিং বডির সভাপতিকে একাধিকবার জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
সিনিয়রিটির তালিকায় সবার ওপরে থাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মুনিরা চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘গভর্নিং বডির মিটিংয়ে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ১ নম্বরে থাকা শিক্ষককে অধ্যক্ষ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরে দেখি সেটি পাল্টে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ৮ নম্বরে থাকা সোহানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে। গভর্নিং বডি কীভাবে এটি করল, সেটি আমরা জানি না। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় ৮ নম্বরে থাকা একজনকে এনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ায় আমরা আশ্চর্য হয়েছি। ওনাকে বাদ দিয়ে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় থাকা পাঁচজন থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে বিষয়ে আমরা গভর্নিং বডির সভাপতিকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। চিঠির শর্ত অনুযায়ী ১০ কার্যদিবস পার হলেও এখন পর্যন্ত গভর্নিং বডি কোনো মিটিং আহ্বান করেনি।’ একই ধরনের অভিযোগ করেন তালিকার শুরুর দিকে থাকা আরও কয়েকজন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা বলেন, ‘কলেজের গভর্নিং বডি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে। নিয়ম হলো সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের পর গভর্নিং বডি আমাদের মিটিংয়ের রেজল্যুশনসহ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয় অবহিত করতে হয়। কিন্তু গভর্নিং বডি সেটি আমাদের অবহিত করেনি। পরে আমরা অন্য মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ জন্য আমরা গত ১ আগস্ট জ্যেষ্ঠতম পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে একজনকে দায়িত্ব দিয়ে দায়িত্ব প্রদান-সংক্রান্ত রেজল্যুশন, দায়িত্ব প্রদান-সংক্রান্ত পত্রের কপি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রেরণ করার জন্য চিঠি দিয়েছি।’ ১০ কর্মদিবস পার হয়েছে জানিয়ে চিঠির উত্তর পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজ থেকে এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র এসেছে কি না, সেটি আমাকে কাগজপত্র খুঁজে বলতে হবে। আমি এই মুহূর্তে অফিসে নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘গভর্নিং বডির সবার (৮ সদস্য) সিদ্ধান্তে ওনাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার জন্য সাবেক অধ্যক্ষও সুপারিশ করেছিলেন। আমরা অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি পেয়েছি, তাদের ইতোমধ্যে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সোহানা বলেন, ‘আমাকে গভর্নিং বডি দায়িত্ব দিয়েছে। কলেজের বিষয়ে কথা বলতে হলে আপনি (প্রতিবেদক) কলেজে আসেন। কাল আমি কলেজে থাকব।’