বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:২৯ পিএম
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:২৪ পিএম
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইব্রেরিয়ান খাইরুল আলম নান্নু। প্রবা ফটো
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলম নান্নুর বিরুদ্ধে লাইব্রেরির বাজেট ব্যবহারে অসংগতি, একাডেমিক বইয়ের অপর্যাপ্ততা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণে অসংগতি, লাইব্রেরির এসির অচলাবস্থা, কোনো ধরণের নোটিশ ছাড়াই গণগ্রন্থাগারে তালা দেওয়া, লাইব্রেরিতে চাকরি দেওয়ার নামে পাঁচজনকে কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার স্বেচ্ছাচারিতা দিনদিন বাড়ছে বলেও জানা গেছে।
লাইব্রেরিতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগের সতত্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণের কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে এবং কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। বরাদ্দের টাকার অসংগতির কারণেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ একই সময়ে লাইব্রেরির বৈদ্যুতিক, সংস্কার, মেরামত ও লাইব্রেরিয়ানের অফিস কক্ষের আধুনিকায়নসহ নানা কাজে ব্যয় করা হয়েছে এক কোটি টাকার বেশি। লাইব্রেরির এসব কাজের ব্যয় ও কেনাকাটা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
কেনাকাটার ভাউচারে কমিটির অনেকেই স্বাক্ষর করেননি বলেও জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলম নান্নু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক থেকে অনুদান পাওয়া ২৫ লাখ টাকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আরও কিছু বাজেট হলে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণের কাজ শেষ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন আমার রুম ডেকোরেশেনের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণ শেষ হলেই লাইব্রেরির নিচতলায় চারটি এসি লাগানোর কার্যক্রম শুরু হবে। লাইব্রেরিতে বই সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি আছে। কমিটির সব সদস্যের পরমর্শক্রমেই বই সংগ্রহ করা হয়। লাইব্রেরিতে পিওন সংকট হওয়ার কারণে পাঁচ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদেরকে বেতন দেওয়া হয়।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. অলিউল্লাহ বলেন, লাইব্রেরিতে খণ্ডকালীন কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে যেকোনো বিভাগের প্রধান প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট বাজেটের আওতায় কন্টেনজেন্সি হিসেবে জনবল রাখতে পারেন।
শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ২০টি ফ্যান কেনার জন্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে খাইরুল আলম বলেন, ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০টি ফ্যান কেনা হয়। ফ্যান কেনার পর অবশিষ্ট টাকা দিয়ে আইপিএস কেনা হয়েছে।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরির রিডিং রুমে ১৫টি ফ্যান সচল রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণগ্রন্থাগার বন্ধের অভিযোগের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান বলেন, গণগ্রন্থাগারটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য সহকারী পরিচালক বরাবর কয়েকটি চিঠি দিয়েছিলাম। তারা কোনো চিঠির উত্তর দেয়নি। এ কারণে তালা দেওয়ার পরও গণগ্রন্থাগারটি আবার খুলে দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, লাইব্রেরির তিন তলায় পরিত্যক্ত রুমটি দ্রুত পড়ার উপযুক্ত করা হবে। লাইব্রেরির কেন্দ্রীয় এসি পরিবর্তন করা হবে। এজন্য ডিপিপির বাজেটে এসির কথা উল্লেখ আছে। খুব দ্রুতই নতুন এসি সংযোজন করা হবে। একাডেমিক বই হিসেবে ই-বুকের আধিক্য বাড়ছে। তাই কাগজের বই কমছে। লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদেরকে ই-বুক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। লাইব্রেরির অসংগতির বিষয়ে কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণে অধিকাংশ বাজেট খরচ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি ও হিসাব পর্যালোচনা করে পরবর্তী বাজেট দেওয়া হবে।