বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০০ এএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিচার শুরুর আগেই প্রায় ১৪ মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। জামিন স্থগিত হওয়ায় দীর্ঘদিন কারাভোগে তার শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটেছে। কিডনিতে সমস্যার পাশাপাশি তিনি চর্মরোগে আক্রান্ত বলে পরিবার জানিয়েছে।
পুলিশ ২০২০ সালের ১১ ও ১৯ অক্টোবর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় খাদিজার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। সে সময় তিনি মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে ফেসবুক ও ইউটিউবে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ ওয়াজ লাইভ’ নামে একটি অনুষ্ঠান করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী প্রচারণার অভিযোগ আনা হয়। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থীকে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানার পুলিশ। যেখানে খাদিজার জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিতে বয়স ১৭ বছর। খাদিজার জামিনের আবেদন দুইবার নামঞ্জুর হয় আদালতে। গ্রেপ্তারের পর থেকে খাদিজা কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছেন। পরিবারের দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় খাদিজার বাবা কুয়েত প্রবাসী।
সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছে ট্রাইব্যুনাল। মামলা দুটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। খাদিজার মুক্তির দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া মশাল মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী করেছেন মানববন্ধন। পাশাপাশি প্রতিবাদী বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও খাদিজার মুক্তির দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে খাদিজার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
খাদিজার সহপাঠী তাসলিমা জাহান মুন বলেন, বাকস্বাধীনতা বলে আমাদের যে একটি সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে তার সুফল আমরা পাচ্ছি না। দেশে যদি বাকস্বাধীনতা থাকত তাহলে আমার সহপাঠীকে বিনা বিচারে এক বছর কারাগারে থাকতে হতো না। আমরা যদি বাকস্বাধীনতার সুফল না পাই তাহলে সংবিধান থেকে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি তুলে দিতে পারেন।
খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, আমার বোন খাদিজা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিডনিতে সমস্যার পাশাপাশি এখন চর্মরোগজনিত রোগে আক্রান্ত। তার সঙ্গে আমরা ২৪ মিনিটের মতো কথা বলতে পারি। তাও সব কথা শেষ হয় না। পড়াশোনার জন্য কারাগারে বই নিতে আদেশ দিলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করব। তিনি আরও বলেন, কারাগারে খাদিজার পেছনে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আমরা মাসে দুইবার তার সঙ্গে দেখা করি। এ পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, খাদিজার মুক্তি কি আদৌ হবে কি না আল্লাহ জানেন। আমার পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। আমার বোনকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মেজবাহ-উল-আলম সওদাগর বলেন, এক বছরেরও অধিক সময় ধরে খাদিজা ক্লাসে অনুপস্থিত। সে খুবই মেধাবী। কিন্তু তার এতদিন কারাগারে থাকার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ও ছোট মানুষ। বুঝতে পারেনি বিষয়টি এমন হবে। আমরা চাই দ্রুত ওর জামিন হোক, ক্লাসে ফিরে আসুক।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, খাদিজা আমাদের শিক্ষার্থী হলেও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রয়েছে। সরকারবিরোধী কাজে লিপ্ত মেজর (অব.) দেলোয়ারের সঙ্গে তার অনুষ্ঠান করাটা মোটেও ঠিক হয়নি। এসব ঘটনা ও মামলা দুটোই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিষয়। এসব মামলার বাদীও পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা হলে ভিন্ন বিষয় ছিল। আদালত থেকে মুক্ত হলে তিনি পড়ালেখার সুযোগ পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ইমদাদুল হক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।