ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে আট দফা সুপারিশ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৫৯ এএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফাইল ছবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এ ঘটনার পর ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটি আট দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশে ইউজিসি বলেছেÑ ক্যাম্পাসে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে; বিভিন্ন সময়ে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; এবং জাবি একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই হলের আসন ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা সমান হওয়াই যথাযথ হবে।
৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে হলের বোটানিক্যাল গার্ডেনসংলগ্ন জঙ্গলে স্ত্রীকে ধর্ষণের এ ঘটনা ঘটানো হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মোহাম্মদ জামিনুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ১১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশের যে তিনটি রাস্তা রয়েছে, তা বন্ধ করে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে; ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলো ও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা উচিত এবং প্রতিটি স্থান নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন; শিক্ষাজীবন শেষ হলে শিক্ষার্থীর হলের সিট বাতিল ও হলে অবস্থান নিষিদ্ধ করতে হবে; শিক্ষার্থীদের হলের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে।
ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করতে এই কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের জরুরি সভা আহ্বান করে ধর্ষণ ও ধর্ষণকারীকে হল থেকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বহিরাগত মামুনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা করার কথা জানিয়েছে। অপরাধে জড়িত ছয় শিক্ষার্থীর জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশ দেওয়ার জন্য অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদারকে সভাপতি করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বহিরাগত একজনসহ অভিযুক্ত সাতজনের নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইতোমধ্যে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করা হয়েছে। ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারও করা হয়েছে। জাবি কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রমও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ধর্ষণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইউজিসির এই পরিদর্শন প্রতিবেদন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে, যাতে তারা এই প্রতিবেদন অনুসরণ করে।’
এ ঘটনায় ৪ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একই ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যাব। তারা হলেনÑ মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন ও মো. মুরাদ।