বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪০ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৪৫ পিএম
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গন থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন করেন আট শিক্ষার্থী। প্রবা ফটো
ইচ্ছাকৃতভাবে ডিসকলেজিয়েট করে দেওয়ার প্রতিবাদে অনশন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের আট শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গন থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর থিসিস ও নন-থিসিস পর্যায়ের আট শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, ফয়সাল আহমেদ, তানভির, জয়শ্রী, রিতু পর্না, ফারজানা ইয়াসমিন, ফাতিমা আফরিন মিম ও অনামিকা। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল।
অনশন কর্মসূচিতে ‘চারুকলায় অন্যায় চলে, ভিসি স্যার ঘুমাচ্ছেন কেমন করে’, ‘সন্দেহজনক সিগনেচার শিক্ষার্থীদের উপর অত্যাচার’, ‘নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে, শিক্ষক আসেন ১২টার পরে’, ‘কর্মচারী দিয়ে উপস্থিতি, প্রশাসনে আছে কি এই রীতি?’, ‘দিনের পর দিন শিক্ষকের মানসিক অত্যাচার, কে করবে এর বিচার?’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগের মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আটজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম অ্যাটেন্ডেন্স দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে, যেটা অফিসিয়ালি তাদেরকে কোনোভাবে জানানো হয়নি। নিয়মিত ক্লাস করার পরও এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। শ্রেণিশিক্ষক প্রতিদিন ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ডিপার্টমেন্টে আসেন, যেখানে তিনি তাদের সাড়ে নয়টা থেকে ক্লাসে থাকতে বলতেন এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে শুনে তার ভিত্তিতে অ্যাটেন্ডেন্স দিতেন। এই নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্লাসে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অনুপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত হন।
তারা আরও জানান, গোপনে মাত্র দুইদিন সময় দিয়ে চারজন শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষার ফর্মফিলাপ করানো হয়েছে। বাকি আটজন শিক্ষার্থীকে এই প্রক্রিয়া থেকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যেটা তারা ফরম ফিলাপের একদম শেষের দিনে নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করেছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) তাদের পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছে।
অনশনরত শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন প্রভা বলেন, ‘আমরা মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন কলিজিয়েট, দুইজন নন-কলিজিয়েট এবং বাকি আটজনকে ডিস-কলিজিয়েট করা হয়েছে। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সব কোর্সের প্রাকটিক্যাল অংশ নিজে নেন। অন্যকোনো শিক্ষককে নিতে দেন না। ক্লাসে তিনি বলেছিলেন তোমরা ক্লাস করলেও পরিক্ষা দিতে পারবা না। তার মানে তিনি পরিকল্পিত ভাবেই এমনটি করেছেন আমাদের সঙ্গে। তিনি আমাদের সাড়ে ৯ টায় আসতে বলতেন ক্লাসে। কিন্তু নিজেই আসতেন সাড়ে ১২ টায়। অন্যদিকে কখনো এক মিনিট অথবা দুই মিনিট দেরি হলে অ্যাবসেন্ট দিয়ে দিতেন ওই দিন।’
আরেক শিক্ষার্থী অনামিকা কুণ্ডু বলেন, ‘শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে আমরা কিছুদিন পরে ক্লাস শুরু করি। ক্লাস শুরুর পর নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও অ্যাটেনডেন্স দেওয়া হয়নি। স্যার নিজে আমাদের বসিয়ে রেখে দেরি করে আসতেন ক্লাসে। আমি কখনও ডিসকলেজিয়েট হইনি এর আগে। সবসময় কলিজিয়েট হয়ে পরিক্ষা দিয়েছি। মাস্টার্সে এসে এমন ঘটনা ঘটবে যা কখনও আশা করিনি।’
অভিযুক্ত শিক্ষক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। কারণ হলো, এরকম অনেক কথা তারা লিখেছে। আমি হুমকি দেওয়ার কে? ক্লাসতো আরও কয়েকজন শিক্ষক নিয়েছে, আমিতো একা নেয়নি? আপনারা অফিসে এসে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কাগজপত্র সব রেডি আছে। তারা ক্লাস করার পরে মাস শেষে অ্যাটেনডেন্স শিটে স্বাক্ষরও করেছে। সব সাক্ষ্য প্রমাণ আছে। এখন তারা যদি ক্লাস না করে, তাহলে আমি কিভাবে কি করব? দয়া করে উপস্থিতি দেখানোর ক্ষমতা আমার নাই। তাদের সঙ্গে তো আমার ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্কও নাই।’