কামরুল হাসান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪ ২০:১১ পিএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪ ২০:৫৫ পিএম
প্রতীকী ছবি
ময়মনসিংহে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলছেন, খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রবিবার (৩ মার্চ) মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী একই বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। নিজের ফেসবুকে এ নিয়ে তিনি পোস্ট করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর নামের আদ্যক্ষর ‘ছ’।
অভিযুক্ত ব্যক্তি ২০১৯ সালে মানবসম্পদ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভালো ফলের জন্য শিক্ষাজীবনে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। তার নামের আদ্যক্ষর ‘স’।
সামাজিকমাধ্যমে ওই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন থেকেই স্যার আমাকে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসেজ দিতেন। নানান কথায় একটু খটকা লাগলেও আমি এড়িয়ে গেছি। কিন্তু একদিন গভীর রাতে উনি আমাকে চা খেতে ডাকেন। উনি আমাকে বার বার ওনার রুমে যাওয়ার জন্য বলতেন। বিভিন্নভাবে আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ক্লাসে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষায় জরিমানা, খাতায় নম্বর কম দেওয়া, থিসিস পেপার আটকে দেওয়াসহ নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে আমাকে।’
‘ছ’-এর পোস্ট সামাজিকমাধ্যমে ছড়ালে আরও অনেকেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তোলেন। তাদের দেওয়া শিক্ষকের ‘অনৈতিক প্রস্তাবের’ স্ক্রিনশর্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুব্ধ করে তুলেছে সহপাঠীদের।
প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে বিক্ষোভ-মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। পরে উপাচার্য তাদের ডেকে নিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।
আন্দোলনকারী মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারাবী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমাদের ওই সহপাঠীসহ আরও অনেকেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যার ফলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমাদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষককে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে।’
একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিনিয়া জাফরিন বলেন, ‘আমরা আজকে শুধু আমাদের বান্ধবীর পক্ষে দাঁড়াইনি, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি মেয়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। যেখানে আমার বান্ধবী নিরাপদ না সেখানে কোনো মেয়েই নিরাপদ না। আমরা এর দ্রুত বিচার চাই।’
অভিযোগকারীরা বলছেন, প্রতিকার পেতে তারা হয়রানির বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান রেজুয়ান আহমেদ শুভ্রকে অবগত করেছেন। তবে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
তবে রেজুয়ান আহমেদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ থাকলে আমিও জানতে চাই। অভিযোগ করলেই হবে না, এর সত্যতা প্রমাণ করতে হবে।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যদিও আমি ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি। তারপরও যা শুনলাম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পেলাম, তাতে আমি বিব্রত ও লজ্জিত। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির বক্তব্য সভা করে জানাতে পারব।’
অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্য পেতে সকাল ও দুপুরে বিভাগের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন ‘এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা এ রকম বিষয়ের মুখোমুখি হব তা আশা করি না। ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। শুনেছি আগামীকাল সে আসবে। আমরা এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয়যোগ্য বলে মনে করি না। আমি আগামীকাল তার সঙ্গে কথা বলব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি সব ডকুমেন্টস সহপাঠীদের মেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) ক্যাম্পাসে এসে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেব।’