প্রবা প্রতিবেদক, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৯ পিএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৩ পিএম
মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র। মঙ্গলবার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। প্রবা ফটো
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. রায়হান শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বুধবার (৬ মার্চ) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উপসচিব দূর-রে-শাহওয়াজ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ফৌজধারি অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ায় সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. রায়হান শরীফকে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি খোরপোশ ভাতাপ্রাপ্ত হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সোমবার (৪ মার্চ) বিকালে মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফ। ঘটনাস্থল থেকে তাকে অস্ত্রসহ আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। আটকের পর তার কাছ থেকে সেভেন পয়েন্ট ফাইভ সিক্স বোরের দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১টি গুলি, চারটি ম্যাগাজিন ও ১২টি বিদেশি চাকু জব্দ করা হয়।
গুলির ঘটনায় রাত সোয়া ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা মো. আবদুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পরদিন মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকালে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। পরে বিচারক বিল্লাল হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করে রায়হান শরীফকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
ঘটনার পর থেকে একে শিক্ষার্থীরা রায়হান শরীফের অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন। ঘটনার দিন তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। পরদিন ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মূচি পালন করেন শিক্ষার্থী। তাদের দাবি ছিল রায়হান শরীফের সনদ বাতিল করতে হবে।
শিক্ষার্থীকে গুলি করার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
শিক্ষার্থীকে গুলি করার পর শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ আসছে। নিজের কাছে দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র রাখার পাশাপাশি তিনি এসব অস্ত্র দিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন করতেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ছাত্রছাত্রী।
একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি কলেজের ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেন এবং ছাত্রদের প্রায়ই ভয়ভীতি দেখান। এমনকি রায়হান শরীফ কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বে নিজস্ব ক্ষমতা দেখিয়ে ফরেনসিক বিভাগে ক্লাস নিয়ে থাকেন। তিনি প্রায়ই ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করেন বলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।