অবন্তিকার ‘আত্মহত্যা’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৩:১৯ পিএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:০৫ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করা হয়। প্রবা ফটো
শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে শোক র্যালি ও মানববন্ধন করেছে আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে শোক র্যালিটি শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এসে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সরকার আলী আক্কাস বলেন, ‘অবন্তিকার মৃত্যুতে আইন বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমাদের বিভাগের মেধাবী ছাত্রী অবন্তিকার মৃত্যুর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের দাবি জানাই। তার মনের অবস্থাটা সে যে ফেসবুকে পোস্ট করে মনের কথাগুলো বলল, সেগুলো যদি সে আমাদের আগেই বলত, তাহলে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে পারতাম। যেদিন সে আত্মহত্যা করল তার আগের দিন ডিপার্টমেন্টে তার সঙ্গে দেখা হয়, তখনও আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কেমন আছো কী অবস্থা? সে তখনও স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে। সে তখনও কিছু বলল না, এটা আমার কাছে অনেক কষ্টের।’
তিনি আরও বলেন, অবন্তিকা বিমান বাহিনীর পাইলট হিসাবে চাকরি পেয়ে চলে গিয়েছিল, পরে ফেরত আসে। অত্যন্ত মেধাবী ছিল আর কিছুদিন পরেই তার স্নাতক ফল বের হতো। তার ইচ্ছা ছিল বিচারক হওয়ার। সে বিচারক হলে দেশের সম্পদ হতো, সেই অবন্তিকাকে হারানো পুরো রাষ্ট্রের ক্ষতি। অবন্তিকার হত্যার পেছনে যারা আছে তাদের শাস্তির দাবি করছি এই রাষ্ট্রের কাছে। অবন্তিকার বিচার যেন ঝুলে না থাকে। দ্রুত বিচার পাওয়ার পরম ভাষা-সুইসাইডই অন্তিম আশা? অবন্তিকা মরিয়া প্রমাণ করিলো—এখানে অভিযোগ মূল্যহীন, আজকে অবন্তিকা-কালকে কে? এই মৃত্যু উপত্যকা আমার ভার্সিটি নয়, এই সিস্টেমে ঝুলে পড়াই সেরা সমাধান।’
অবন্তিকার সহপাঠী আব্দুর রহমান বলেন, ‘অবন্তিকা আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র ছিল, পরবর্তীতে সে রি-এড নিলে আমাদের সাথে যখন ক্লাস করতে আসে তখন আমরা আপু করে ডাকতাম। কিন্তু সে নিজেই বলে আমরা ফ্রেন্ড তাই আপনি করে বলা লাগবে না। অবন্তিকা আমাদের বন্ধু এবং সে সব ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। অবন্তিকার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু শুধু দুজনকে না এর সাথে আরও যারা যারা জড়িত তাদেরকেও তদন্তসাপেক্ষে শাস্তির আওতায় আনা হোক।
১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা বলেন, আর যেন কোনো অবন্তিকা ঝড়ে না পড়ে। অবন্তিকার এই আত্মহত্যা হত্যাকাণ্ড। যে বা যারাই এর সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেককে তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হোক।
আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নূরনাহার মজুমদার বলেন, আমাদের বিভাগে কোনো অভিযোগ করেনি, সে অভিযোগ করেছিল প্রক্টর বরাবর। সে আমাদের মৌখিক ভাবে কিছু অভিযোগ করেছিল সহপাঠীদের বিরুদ্ধে। আমরা সে ব্যাপারে তাদের সাথেও কথাও বলেছি এবং তাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে সে সরাসারি প্রক্টরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।
বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা এহসানুল কবির বলেন, অবন্তির অকালপ্রয়াণে এই উজ্জ্বল নক্ষত্রে পতন ঘটল। অবন্তিকা শেষ পর্যন্ত তার অবস্থা আমাদের যদি জানাত তাহলে হয়তো আমরা তার মানসিক অবস্থা বুজে সাহায্য করতে পারতাম।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিম বলেন, এখানে এভাবে অবন্তিকার জন্য মানববন্ধন করতে হবে সেটা কখনো ভাবিনি। আর কোনো আশ্বাস নয়, প্রশাসনের কাছে দাবি এর পেছনে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। এরপর যেন এমন কোনো ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আর না ঘটে।
সহপাঠী মোস্তফা শন্তু বলেন, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ও এমন করবে৷ এখানে এভাবে অবন্তিকার জন্য মানববন্ধন করতে হবে এটা বিশ্বাসই হচ্ছেনা। আমরা গত বৃহস্পতিবারও একসাথে ক্লাস করেছি৷ তখনও তাকে দেখে কিছু বুঝতে পারিনি। আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।