× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৫ বছরেও যৌন হয়রানির বিচার পাননি জবির মীম

ইউছুব ওসমান, জবি

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ২৩:০৮ পিএম

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪ ০০:২৫ এএম

জবির ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন। ফাইল ছবি

জবির ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন। ফাইল ছবি

শিক্ষক-সহপাঠীর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে জবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এমন সময়ে সামনে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১ সালের আরেকটি যৌন হয়রানির অভিযোগের কথা- যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। দীর্ঘদিন বিচারের দাবিতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম নিজেই স্বপরিচয়ে প্রকাশ্যে লড়ে যাচ্ছেন। তিনি জবির ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার যৌন হয়রানির অভিযোগ নিজ বিভাগেরই শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে। এদিকে সোমবার (১৮ মার্চ) জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ও বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন মীম। 

অভিযোগকারী কাজী ফারজানা মীম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের নারাজির ভিত্তিতে একাধিকবার তদন্ত কমিটি পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিনেও তিনি বিচার পাননি। বরং বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। সহপাঠীরাও ভয়ে পাশে নেই তার। মানসিক যন্ত্রণায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষাজীবন থেকেও।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন গণমাধ্যমে দাবি করেছেন, অবন্তিকার মৃত্যুতে যে আন্দোলন তৈরি হয়েছে সেটার ‘ফায়দা’ নেওয়ার চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থী মীম। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল তা প্রমাণ হয়নি। এখন বিষয়টি আবার তুলে এনে তাকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগের এই ঘটনা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে তাই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক এবং নির্মাতা আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে এবং তার দুই বছর পরে ২০২১ সালে কাজী ফারজানা মীম বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ গ্রহণের পর তিনি অভিযোগকারীর ক্লাসের কোনো কিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়াও মীম ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘যৌন হয়রানির বিচার চাই’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে একাই দাঁড়িয়েছিলেন। ওই সময় বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পাশাপাশি মিডিয়ার নজরে এলেও তিনি বিচার পাননি। 

অভিযোগের বিষয়ে কাজী ফারজানা মীম বলেন, আবু শাহেদ ইমন আমার বিভাগের লেকচারার। উনি সিনেমা নির্মাণ করেন। উনি আমাকে কাজের জন্য অফিস রুমে ডেকে নিয়ে হেনস্থা করেন। এটা নিয়ে আমি অনেক দিন ভুগেছি। আমার বাবাকে বলা হয়েছে, আপনার মেয়েকে বহিষ্কার করব।

তিনি আরও বলেন, আমার অভিযোগের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নিপীড়ন সেল ছিল না। পরে নতুন করে যে কমিটি করা হয়, এখনকার ভিসি ম্যাডামও ওই কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। সাদেকা হালিম ম্যাডাম নারীবান্ধব কিন্তু তার উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আমি বিচার পেলাম না। কয়েক দফা রিপোর্ট আসা সত্ত্বেও আবু শাহেদ ইমন এবং ওনাকে সাহায্যকারী আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনাইদ হালিম তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসার পরও সুপ্রিম কোর্টে রিট করেছেন। একজন শিক্ষক কতটা নির্লজ্জ হলে নিজের দোষ ঢাকতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারেন। 

কাজী ফারজানা মীম আরও বলেন, অভিযোগ দাখিলের পর থেকে আমার জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আমি অনেকটা গৃহবন্দি। এই লড়াইয়ে কাউকে পাশে না পেয়ে হতাশায় ভুগছি। এমন অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু হয়রানির শিকার হয়েও বেশিরভাগ মেয়ে চুপ থাকে। কারণ তারা দেখেছে অভিযোগ করলে আমার মতো জীবন পাবে। প্রথমে একাডেমিক জীবন বরবাদ, তারপর সহপাঠীদের থেকে বিচ্ছিন্ন। 

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা এক হয়ে আমার বিরুদ্ধে নেমেছিলেন। ইমন আমার গ্রামের বাড়িতে পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। আমার বাবা-মা অসুস্থ, তাদের চাপ দিয়েছেন অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে। অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় আমাকে বিভাগের রুমে দরজা আটকে জোরজবরদস্তি করা হয়েছে। আমাকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করানো হয়। আমি অনার্স শেষ করতে পারিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি যৌন হয়রানির প্রমাণ পেয়েছে। এবং সেটার ভিত্তিতে সিন্ডিকেট কী ব্যবস্থা নেবে সেই প্রক্রিয়া চলাকালে অভিযুক্ত শিক্ষক ‘ন্যায়বিচার পাবেন না’ শঙ্কা করে আবেদন করেন। সেই কমিটির সদস্য ছিলেন জগন্নাথের বর্তমান উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম। তিনিই এখন আবার উপাচার্য হিসেবে সিন্ডিকেটে আছেন। ইমনের আবেদনের পর আইন বিভাগের ডিন মাসুম বিল্লাহকে প্রধান করে আবারও নতুন একটি কমিটি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, নতুন করে একটি কমিটি হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছে।

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান তদন্ত কমিটির প্রধান মাসুম বিল্লাহ বলেন, যৌন নিপীড়ন সেল তাদের তদন্তে শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। সেটা সিন্ডিকেটে রেফার করে। কিন্তু সেই শিক্ষক আপত্তি জানান, তিনি ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এরপর দুই সপ্তাহ আগে আমার কাছে কেস এসেছে। আমরা অনুসন্ধান করে দেখছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমি আসার আগের কোনো ঘটনার দায়ভার আমি নেব না। তবে আমি এখন সেগুলো নিয়ে সোচ্চার হব। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এসব বিষয় উত্থাপিত হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পাচ্ছেন কাজী ফারজানা মীম। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন ও বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। 

সোমবার ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরে সাংবাদিকদের মীম বলেন, আমার বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্থা করেছেন। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমি স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, মীম এর আগে বিভিন্ন জায়গায় বিচার চেয়েও বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ পেয়েছি। তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতের চেষ্টা করব। তাকে হুমকিধমকি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ডিবির সাইবার টিম। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা