রাজশাহী অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১০:২১ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ১২:৫৯ পিএম
আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনসহ ছোট-বড় দেড় শতাধিক ভবন রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি)। এসবের মধ্যে মাত্র তিনটি ভবনে রয়েছে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ফলে অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে অধিকাংশ ভবনে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চুড়িহাট্টা কিংবা বেইলি রোডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট-বড় মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫৭টি ভবনের মধ্যে ১৭টি আবাসিক হল, ১০টি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, আইবিএস ভবন, টিএসসিসি, মিলনায়তন, ডিনস ভবন, সিনেট ভবন, আইবিএ ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন রয়েছে। এ ছাড়া উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বাসভবনসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রায় ১১৫টি আবাসিক ভবন রয়েছে। এসব ভবনের মধ্যে কেবল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ১৯টি, মুহম্মদ কুদরত-ই-খোদা ভবনে চারটি ও স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ভবনে ১১টি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার রয়েছে। আর বাকি ভবনগুলোর কোনোটিতেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছেলেদের ১১টি ও মেয়েদের ৬টি মিলিয়ে ১৭টি হলের একটিতেও নেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। এসব হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ডাইনিং, ক্যান্টিনের কক্ষগুলো এমনভাবে তৈরি আগুন লাগলে বের হওয়ার একটা দরজা ছাড়া বিকল্প নেই। ছোট কক্ষের মধ্যেই রান্না হয় শত শত শিক্ষার্থীর খাবার। চুলার সঙ্গেই আবার বৈদ্যুতিক লাইনের তার। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক, যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি রাতের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবখশ হলের ক্যান্টিনে আগুন লাগে। সদ্য রান্না শেষ করা চুলার পাশে রাখা শুকনো খড়িতে আগুন ধরে যায়। শিক্ষার্থীরা ধোঁয়া দেখতে পেয়ে আগুন নেভাতে উদ্যত হয়। ক্যান্টিনের মালিককক্ষ দরজায় তালা দিয়ে ততক্ষণে চলে গেছে। একপর্যায়ে সেই তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বালতির পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন শিক্ষার্থীরা।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাইমুল হাসান রুদ্র বলেন, ‘রাতে হঠাৎ করে কালো ধোঁয়া দেখে আমরা দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি ক্যান্টিন মালিক তালা দিয়ে চলে গেছে। ফায়ার সার্ভিস আসতে দেরি করায় তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে বালতিতে করে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আবদ্ধ কক্ষের মধ্যে বৈদ্যুতিক লাইন ছিল। এতে আমরাও দুর্ঘটনার শিকার হতাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো হলেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই, এটা হতাশাজনক। অথচ প্রত্যেক হলেই শত শত শিক্ষার্থী থাকে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা হল কর্তৃপক্ষ নেবে না। বিশেষ করে ডাইনিং এবং ক্যান্টিনে জরুরিভিত্তিতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানো উচিত।’
বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহরিমা আরেফিন কেয়া বলেন, ‘মেয়েদের হলে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র জরুরি। কারণ এখানে আমরা অনেকেই রান্না করি, তার ওপর দেখা যায় এক চুলার লাইনে অনেকজন রান্না করেন। ফলে মাঝে মাঝেই চুলা ব্লাস্ট হয়ে আগুন লেগে যায়। এরকম ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে।’
এ বিষয়ে একাধিক হলের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে, তাতে ক্যাম্পাসে দুর্ঘটনা হবে না তার নিশ্চয়তা নেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা দরকার। তবে একা চাইলে সম্ভব না। প্রাধ্যক্ষ পরিষদে আলোচনা করে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। হলগুলোর পাশাপাশি একাডেমিক ভবনেও অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক একরামুল ইসলাম বলেন, ‘হলগুলোতে সাধারণত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে না। তাই সেভাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থার প্রয়োজনও হয়নি। ডাইনিংগুলোতে অগ্নিসতর্কতা হিসেবে একাধিক দরজা রয়েছে। যে কয়টা হলে ক্যান্টিন রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে একটু সতর্কতা প্রয়োজন। শিগগির প্রাধ্যক্ষ পরিষদের মিটিং করব এবং প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলব।’
জানতে চাইলে উপউপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা অগ্নিকাণ্ড রোধে সচেতনতা জরুরি। আমরা যদি নিজেদের মতো করে সচেতন হই, তাহলে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে না। হলগুলোতে প্রাধ্যক্ষদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম দরকার। তাহলে যেকোনো দুর্ঘটনা সহজে এড়ানো সম্ভব।