× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ জবিতে, নেই বরাদ্দও

ইউছুব ওসমান, জবি

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১২:১১ পিএম

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১২:১৭ পিএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করতে এবং মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে কাউন্সেলিং সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে দুই বছর আগে চালু করা হয় ‘কাউন্সেলিং সেন্টার’। এরপর বছরখানেক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সেবা দিয়ে এলেও এখন তা থমকে গেছে। সীমিত বরাদ্দটুকুও বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ফাইল আটকে থাকা, জনবল সংকটসহ নানামুখী সীমাবদ্ধতা আর সংকটের কারণে ভূমিকা রাখতে পারছে না সেন্টারটি। ফলে আত্মহত্যা প্রবণতা রোধ, বিষণ্নতা ও পরীক্ষা ভীতি দূর করাসহ নানা সমস্যা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে আনার কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। 

২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচতলায় প্রতিষ্ঠা করা হয় কাউন্সেলিং সেন্টার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কথা কাউন্সেলিং সেন্টারটির। বছরখানেকের মধ্যেই এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা দিলেও হঠাৎ করেই থমকে গেছে সেন্টারটির কার্যক্রম। জনবল সংকটে সেবা নিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।

নিয়মিত বসেন না কাউন্সেলর

গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে সরেজমিনে কাউন্সেলিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেন্টারটির কক্ষ খোলা থাকলেও নেই কোনো কাউন্সেলর। শুধু একজন নারী কর্মচারী একটি কক্ষের তালা খুলে বসে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী কর্মচারী জানান, আর্থিক তেমন সুবিধা না থাকায় ইন্টার্ন কাউন্সেলররা নিয়মিত সেন্টারে আসেন না। ফলে শিক্ষার্থীরাও সমস্যাগ্রস্ত হয়ে এখানে আসার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।

কাউন্সেলিং সেন্টারটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ। এই বিভাগের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ফিল্ড ওয়ার্কের অংশ হিসেবে এখানে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করে থাকেন। প্রতি ঘণ্টায় দুজন করে দিনে তাদের মোট ১২ জনকে সেবা দেওয়ার কথা। কেন্দ্রে মোট কাউন্সেলর ৩০ জন। এ ছাড়া মনোবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ শিক্ষক রয়েছেন উপদেষ্টা হিসেবে। প্রত্যেক সেবাগ্রহীতাকে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট কাউন্সেলিং করার কথা। কিন্তু কেউ নিয়মিত সেন্টারে আসছেন না।

নভেম্বর থেকে বরাদ্দ বন্ধ

প্রতিষ্ঠার পর কাউন্সেলিং সেন্টারটি পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হতো। তবে গত বছরের নভেম্বর থেকে এই বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেছে। কাউন্সেলররা এখানে নামমাত্র সম্মানীতে সেবা দিতেন। এখন বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেটিও মিলছে না। ফলে তারা সেন্টারটিতে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমদিকে অনেক শিক্ষার্থীই সেবা নিতে আসতেন। পরে জনবল না থাকায় সেবা নিতে না পারায় তারাও অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। আবার অনেক শিক্ষার্থীর কাউন্সেলিং সেন্টারের কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। কেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া উচিত বা কাউন্সেলিং সেন্টারে কী ধরনের সেবা পাওয়া যায়, সে সম্পর্কেও তাদের ধারণা নেই। নতুন ভর্তি হওয়া অনেকে কাউন্সেলিং সেন্টার সম্পর্কে অবগতই নন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সেন্টার আছে, এটা জানা ছিল না। পরে এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারি। তবে কী ধরনের সেবা দেওয়া হয়, তা জানি না।’

সিদরাতুল আনিকা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এক সিনিয়র আপুর কাছ থেকে জানার পর সেন্টারে গিয়েছিলাম। কিন্তু একজন কর্মচারী ছাড়া আর কাউকে পাইনি সেখানে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু কাউন্সেলিং সেন্টার থাকলে তো হবে না। সেবা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবলও থাকতে হবে। প্রচার ও সচেতনতা কর্মসূচিও থাকা দরকার।’

এসব বিষয়ে কাউন্সেলিং সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘কাউন্সেলিং সেন্টার থেকে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন এবং উপকৃত হচ্ছেন। তবে গত বছর নভেম্বর থেকে সেন্টারটি আর্থিক কোনো বরাদ্দ পাচ্ছে না। তাই আমাদের নিজেদের উদ্যোগেই কেন্দ্রটি চালাতে হচ্ছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবা দিতে। তারা সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছেন।’

থমকে আছে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রক্রিয়া

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্সেলিং সেন্টারটিকে গতিশীল করতে এবং শিক্ষার্থীদের মানসম্মত মানসিক সেবা দিতে দুজন বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিদ্ধান্তটি গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পাসও হয়েছিল। তবে সে ফাইল আটকে আছে রেজিস্ট্রার দপ্তরে। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না সেন্টারটি।

বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগের বিষয়ে সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়টি সিন্ডিকেটে পাস হলেও এখনও তা সুরাহা হয়নি। বারবার রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তাগাদা দিলেও কোনো অগ্রগতি ঘটছে না। নতুন উপাচার্যের সঙ্গে এখনও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়নি। আশা করছি বৈঠকের পর সমস্যাগুলোর সমাধান হবে, কাউন্সেলিং সেন্টারে পরিপূর্ণভাবে সেবা কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’

বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ফাইল আটকে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি আজই (বুধবার) বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘কাউন্সেলিং সেন্টারে বিশেষজ্ঞ নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করব। অন্য যেসব সমস্যা আছে সেগুলোও চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা