বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১২:২৫ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৫ পিএম
পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে বাস্কেটবল মাঠ। প্রবা ফটো
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আবারও পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে বাস্কেটবল মাঠ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়েই পাহাড় কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর জানিয়েছে, ৩০ লাখ টাকা বাজেটে ১০০ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ৫৬ ফিট প্রস্থের এই বাস্কেটবল মাঠ তৈরি করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষক ডর্মেটরি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মাঝ বরাবর বাস্কেটবল মাঠটি নির্মাণের জন্য শ্রমিকেরা পাহাড়ের বেশ কিছু মাটি কেটে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (সংশোধন) ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাবে।’ আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো অনুমতি নেয়নি বলে জানা যায়।
কুমিল্লা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘এটির জন্য কোনো অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এসএম শহিদুল হাসান বলেন, ‘এটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের কাজ। এটির অনুমোদন পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে চাইলেও দিবে না। কেননা এটির প্রশাসনিক অনুমোদন চাইবে তারা প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে হলে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা একনেক থেকে অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটির লিখত তারা দেবেন না।’
এদিকে বাস্কেট বল মাঠ বানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, সদস্য ছিলেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহা. হাবিবুর রহমান এবং সদস্য সচিব ছিলেন শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল আলম।
এটিকে পাহাড় কাটা মানতে নারাজ শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল আলম। তার ভাষায় এটি ‘পাহাড় ড্রেসিং’।
ছাড়পত্র ছাড়াই পাহাড় কেটে বাস্কেট বল মাঠ নির্মাণের সুপারিশ কীভাবে করা হলো জানতে চাইলে এমন দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘আসলে পাহাড় কাটা হয়নি। পাহাড় ড্রেসিং করে মাঠটি তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড় তো টুকটাক ড্রেসিং করা হয়। কোনো স্থাপনা পাহাড় ড্রেসিং ছাড়া হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে? যেহেতু আমাদের সমতল জায়গা নেই, বাস্কেট বল মাঠের জন্য সমতল জায়গা লাগে। এজন্য পাহাড় ড্রেসিং করে মাঠ তৈরি করা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দাবি করছেন তিনি পাহাড় কেটে বাস্কেটবল মাঠ বানানোর বিষয়টি জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে পাহাড় কাটার কথা না। পাহাড় কাটা হলে অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে।’
এর আগে ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্যান্ডেল তৈরির জন্য কাটা হয় পাহাড়। সেবারও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাহাড় কাটার কোনো অনুমতি নেয়নি। যার ফলে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিস ছাড়াও জরিমানা গুনতে হয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।