ইউছুব ওসমান, জবি
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১৪ এএম
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২২ এএম
বাংলা বর্ষবরণের প্রস্তুতি হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে রিকশাচিত্র অঙ্কন করেছেন চারুকলা অনুষদের দুই শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাতে তোলা। প্রবা ফটো
ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ঢাকার রিকশাচিত্র। ঐতিহাসিকভাবে এসব চিত্রকর্ম দেশের সংস্কৃতিকেই ফুটিয়ে তোলে। এই রিকশাচিত্রকেই মূল প্রতিপাদ্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে। এরই মধ্যে উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি হিসেবে রিকশাচিত্র অঙ্কনের কাজ করেছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টির দেয়াল সাজানো হয়েছে নান্দনিক চিত্রকর্মে। এবার ঈদের ছুটি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের বৈশাখ উদযাপনের মূল অংশ জুড়েই থাকবে রিকশাচিত্র। বাংলা নববর্ষ ১৪৩১কে বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ফটকের পাশের দেয়ালে পেইন্টিং করা হয়েছে। রিকশা পেইন্টিংয়ের আদলে দেয়ালে ফুটে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক, বুড়িগঙ্গার নৌকা, মা ও প্রকৃতির বিভিন্ন চিত্র। শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রতে রয়েছে ফুল, মাছ, নৌকা, বাঘ, ময়ূরসহ নানা ধরনের চিত্র। ঐতিহাসিকভাবে দেশের রিকশায় আঁকা নানা ধরনের চিত্রের মধ্য থেকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন চিত্রগুলোকে উজ্জ্বল রঙে দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও থাকবে বড় আকৃতির রিকশা পেইন্টিং। এরই মধ্যে দেয়ালগুলোতে রিকশা পেইন্টের মাধ্যমে নান্দনিক ছোঁয়া দিয়েছে চারুকলার শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ কাজের জন্য প্রশংসিতও হয়েছেন।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য প্রস্তুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বর্ষবরণের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পুতুল, পাখি, বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ, পাখির মুখোশ, রাজা-রানীর মুখোশ, নানা রকমের মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম এবং মুখোশে রঙ করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের রঙ-তুলিতে ফুটে উঠছে আবহমান বাংলার রূপ।
এবার থাকছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বাংলা বর্ষবরণের নানা আয়োজন। মঙ্গল শোভাযাত্রায় উপকরণ হিসেবে থাকবে পাখি, ফুল ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তু। প্রকৃতিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এবার কাজ হচ্ছে। শোভাযাত্রার জন্য বড় আকারের ফুল, মৌমাছি, পাতা ছাড়াও বাঘ ও পেঁচার মুখোশ তৈরি করা হয়েছে।
আয়োজনের দায়িত্বে থাকা চারুকলা অনুষদের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাঈম মৃধা বলেন, দেয়াল চিত্র, মুখোশ, স্ট্রাকচার সবকিছুতেই রিকশা পেইন্টিংকে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেয়াল পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন মোটিভ এবং উজ্জ্বল রঙগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। রিকশাচিত্রে সাধারণত নায়ক-নায়িকা, কুমির, বাঘ, মাছ, ময়ূর, ফুল, লতাপাতার ও বিভিন্ন পশুপাখির ছবি দেখতে পাই। এগুলোর মধ্য থেকে দৃষ্টিনন্দন চিত্রগুলোকেই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
একই ব্যাচের শিক্ষার্থী হৃদয় হোসাইন বলেন, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম হচ্ছে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃত বাংলাদেশের রিকশাচিত্র। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদ হওয়ার পর এটি প্রথম বৈশাখ। এজন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি আগের বারের থেকে আমাদের জন্য একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে খুব সুন্দরভাবে এই আয়োজনের প্রস্তুতি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো এবার বৈশাখী চারু শিল্পমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
দেয়ালচিত্র অঙ্কন করা শিক্ষার্থী পরমা দাস বলেন, এবারে বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হবে। শোভাযাত্রার জন্য আমরা মুখোশ তৈরি করছি। বাঘ পেঁচার পাশাপাশি রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন ফর্ম দিয়ে মুখোশ তৈরি করেছি এবং সব মুখোশে রিকশা পেইন্টিংয়ের মতো উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করছি। রিকশা পেইন্টিংকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহা. আলপ্তগীন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনেস্কোর অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে রিকশাচিত্র স্বীকৃতি পেয়েছে। এজন্যই বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ উপলক্ষে আমরা রিকশাচিত্রের যত রকমের অঙ্কন, মোটিভ এবং চিত্রায়ণের যত অলংকরণ রয়েছে, সেগুলো সব নিয়েই রিকশাকে কেন্দ্র করে দেয়াল পেইন্টিং করেছি। মূলত এবারে আমাদের থিম হচ্ছে রিকশাচিত্র। মঙ্গল শোভাযাত্রাতেও বড় আকৃতির রিকশা পেইন্টিং থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে চাই। সেজন্য ১৮ এপ্রিল আমরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান করব। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ বিগত দিনে চলে আসা সকল আয়োজন থাকবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা নান্দনিক রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তোলার কাজ করছে।