নোয়াখালী সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৮:৫৭ এএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২২ ১১:৩৬ এএম
শীতের স্নিগ্ধতায় ভরা নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস। প্রবা ফটো
শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত চলমান। হেমন্তের শিশির বিন্দুতে সাদা কাশফুলের রঙও এখন ধূসর প্রায়। কার্তিকের শেষে তাই শীতের আগমনী বার্তায় ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে ভোরের সোনারাঙা রোদ। ঘাস আর ধানের ডগায় রোদ লেগে ঝলমল করা শিশির কণা জানান দিচ্ছে ঋতু পরিবর্তনের খবর। শীতের শুরুতে কুয়াশার চাদরে আবৃত হয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। নিজের পুরো সৌন্দর্যকে প্রকাশ করার জন্য শীতের সাজে সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ একর।
ক্যাম্পাসে সবুজের নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত শীত আসে চিরচেনা রূপের বাইরে আরও কিছু মুগ্ধতা ও অনবদ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে। নোবিপ্রবির প্রকৃতি ও পরিবেশটা অনেকটাই গ্রামীণ আবহে তৈরি। নানান প্রজাতির ফুলের সৌরভে মুখরিত হয়ে আছে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে রয়েছে বিস্তীর্ণ ধান ও ফসলের মাঠ। ভোরে ও সন্ধ্যায় ধানের কচিপাতার ডগায় শিশির বিন্দু জমতে দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে রাতের বেলা থেমে থেমে বৃষ্টি যেন ডেকে আনছে শীত।
কুয়াশা ভেজা সকাল
শীতের সকালে শিশির ভেজা কুয়াশা জড়ানো রাস্তায় চলে অনেকের প্রাতঃভ্রমণ, শরীরচর্চা। ক্যাম্পাস গেট পেরিয়ে গোলচত্বর, নীলদিঘির পাড়সহ সবকিছুই প্রকৃতিপ্রেমীদের ডেকে নিয়ে আসে স্নিগ্ধ সকালে শীতের রূপ-রস আস্বাদনে। কুয়াশায় মোড়া গোধূলীর অল্প আলো ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে করে তোলে আরও রহস্যময়, আরও মোহনীয়। ভবনগুলো তার নিজস্বতা ফিরে পায় সকালের শিশির আর রাতের কুয়াশার মাঝে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের ফাঁক দিয়ে শিশির ভেজা ঘাসের ওপর সূর্যের শীতল উত্তাপহীন কিরণ এসে পড়ে। তখন শিশিরও কুয়াশাকে কাটিয়ে তুলে। প্রাণভরে শ্বাস নেওয়া যায় অনায়াসে। আর শীত যেন এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতিদিন ভোরে শরীর চর্চা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. ফাহিম রানা ও আকলিমা হক সুলতানা।
আকলিমা হক সুলতানা বলেন, 'একটা ভোর যা সবার দেখার সৌভাগ্য হয় না। আমাদের কুয়াশা-মাখানো ক্যাম্পাস সব থেকে সুন্দর। এখানে ভোরের সূর্য, কুয়াশা ও পাখির ডাক অনাবিল আনন্দ দিয়ে যায়। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেখতে পারায় আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।'
মো. ফাহিম রানা বলেন, 'সকালের কুয়াশামাখা ক্যাম্পাস দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি হাটাহাটি ও শরীর চর্চার জন্য ভোরে উঠি। সকালে উঠলে আমার কাছে দিনটা অনেক বড় মনে হয়। অনেক কিছু করার সময় পাওয়া যায়। যেদিন আমি ভোরে উঠতে পারিনা সেদিন দিনটা ছোট মনে হয়।'
ভোরের নোবিপ্রবির সৌন্দর্য প্রকাশ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজের শিক্ষার্থী নাসরাতুল ফেরদৌস তিতলি বলেন, 'ভোরের নোবিপ্রবি একটা নতুন নোবিপ্রবি। সকালবেলার মৃদু হাওয়া, ঠাণ্ডা বাতাস, কুয়াশাচ্ছন্ন নোবিপ্রবি ও পাখির কিচিরমিচির অসাধারণ লাগে। আমি আগে ভোরে উঠতাম না। কিন্তু কুয়াশা পড়ার পর থেকে আর মিস করি না। কুয়াশাজড়ানো ক্যাম্পাসের দৃশ্য আমি মিস করতে চাইনা।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের চালক গিয়াস উদ্দিন সোহাগ বলেন, 'আমার বাড়ি ক্যাম্পাস থেকে দূরে। খুব ভোরে আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে হয়। ভোরের শিশির ভেজা ঘাস দেখলে প্রাণ ভরে যায়। আমাদের হৃদয় ছুয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। দিনদিন যেনো আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে এই সৌন্দর্য।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাহানা রহমান বলেন, 'মাত্র শীত আসতে শুরু করেছে। ভোরের নোবিপ্রবি এত সুন্দর তা আমার জানা ছিল না। কিছুদিন থেকে আমি ভোরে উঠছি। চারপাশে হালকা হালকা কুয়াশা পড়ছে। সূর্যের আলো যখন শিশির বিন্দুর ওপর পড়ছে তখন মুক্তোর মতো লাগছে। যেনো স্বর্গীয় সৌন্দর্য। কুয়াশার মধ্যে শীতের পাখি আসে নোবিপ্রবিতে। সবার উচিত ভোরে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা। কেননা প্রকৃতির যত কাছাকাছি আমরা যাব তত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবো এবং আমাদের ভেতরকার সৌন্দর্য ততই উদ্ভাসিত হবে।'