সৌম্য প্রীতম ও মহিউদ্দিন মাহি
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৩০ পিএম
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বড় অংশজুড়ে আছে ‘অপারেশন জ্যাকপট’। মুক্তিযুদ্ধের সময় অপারেশন জ্যাকপট নামের এক অভিযানে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে একযোগে গেরিলা অপারেশন চালানো হয়েছিল। সেই অভিযানে পাকিস্তান ও অন্য আরও কয়েকটি দেশ থেকে অস্ত্র, খাদ্য ও তেল নিয়ে আসা ২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই ঘটনাটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নির্মাণের অপেক্ষায় আছে সিনেমা ‘অপারেশন জ্যাকপট’। তবে এর নির্মাণ শুরুর আগেই মিডিয়া অঙ্গনে চলছে বিতর্ক।
চলচ্চিত্রটি তৈরিতে প্রথমে উদ্যোগ নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেই সময় পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমকে চিত্রনাট্য তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ছবিটি পরিচালনা করবেন বলেও জানা যায়। তবে গেল বছরে নতুন করে সিনেমাটি নির্মাণের দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের হাতে যায়। তখন টেন্ডারের মাধ্যমে ‘অপারেশন জ্যাকপট’নির্মাণের জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কিবরিয়া ফিল্মস দায়িত্ব পায়। বাদ পড়েন দীর্ঘদিন ধরে সিনেমাটি নিয়ে গবেষণা করে আসা ‘মনপুরা’খ্যাত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম। এ নিয়ে শুরু হয় জটিলতা।
এরপর গত ২২ জানুয়ারি ‘অপারেশন জ্যাকপট’নির্মাণের আগের কার্যক্রম বাতিল করে এবং নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম রচিত চিত্রনাট্য অগ্রাহ্য করে টেন্ডারের মাধ্যমে কিবরিয়া ফিল্মস নামের প্রতিষ্ঠানকে ওই ছায়াছবি নির্মাণের জন্য দেওয়া কার্যাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে নাÑ তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে আদালত। বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সে সময় ‘অপারেশন জ্যাকপট’সিনেমা নির্মাণের টেন্ডারের সব কার্যক্রম তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।
সেই স্থগিতাদেশ শেষ হবে আজ। আসবে নতুন সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আদালতের স্থগিতাদেশ ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা জানার জন্য অপেক্ষায় আছি। এর বেশি কিছু এ মুহূর্তে বলতে চাইছি না।’
সিনেমাটির সম্ভাব্য নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। প্রযোজক কিবরিয়া লিপু আবেদন করেছেন, তার কাছেই কাগজপত্র আসবে। তিনিই বলতে পারবেন বিস্তারিত। যদি আমার কাছে কাজটি আসে, তবে আমি কাজের পরিকল্পনা শুরু করব।’
এদিকে কিবরিয়া ফিল্মসের কর্ণধার কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু জানান, সব সিদ্ধান্ত হয়েই আছে। নতুন করে সিদ্ধান্ত আসার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘অপারেশন জ্যাকপট’সিনেমা নিয়ে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি তার মতো করে সিনেমাটি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সিনেমাটি নির্মাণের দায়িত্ব আমার প্রতিষ্ঠান কিবরিয়া ফিল্মসকে দিয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নেব কে বানাবেন কে বানাবেন না। সেখানে নতুন করে সিদ্ধান্ত হবার কিছু নেই। আদালতের কাছে তিনি কিছু অভিযোগ করেছিলেন। সে বিষয়ে আদালত তাকে সিদ্ধান্ত দেবেন। সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ‘অপারেশন জ্যাকপট’কে নির্মাণ করবেন তার কোনো সম্পর্ক নেই।
কিবরিয়া ফিল্মসের হয়ে কে নির্মাণ করবেন সিনেমাটি ও কবে শুরু হবে শুটিং- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিচালক হিসেবে বেশ ক’জন তালিকায় আছেন। শিগগিরই চূড়ান্ত নাম প্রকাশ করা হবে। আর সিনেমার শুটিং শুরুর ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। সেগুলোর সমাধান হলেই আমরা শুটিং শুরু করব। তার আগে বড় আয়োজন করে সিনেমাটির পরিচালক, অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের নাম প্রকাশ করা হবে।
প্রসঙ্গত, প্রায় আড়াই বছর আগে চলচ্চিত্রটি তৈরির উদ্যোগ নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেই সময় তারা পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমকে চিত্রনাট্য তৈরির দায়িত্ব দেয়। পুরো প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এরপর থেকে সেলিম এ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও করেন। গত বছর এই চলচ্চিত্র নির্মাণ তদারকির দায়িত্ব পায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর গত বছরের আগস্ট মাসে তারা এই চলচ্চিত্র নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে।
সেই দরপত্রে অংশ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটি পায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কিবরিয়া ফিল্মস। তাতে গিয়াসউদ্দিন সেলিম আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের হয়ে অংশ নিলেও আবেদন ‘বিধিসম্মত না হওয়ায়’তাদেরকে বাদ দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। সেসময় গণমাধ্যমে নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘যেহেতু আমি সিনেমাটির চিত্রনাট্য কমিটিতে ছিলাম, তাই আমি নাকি পরিচালক হিসেবে থাকতে পারব না। সেটা নাকি নিয়ম-বহির্ভূত হবে। অথচ তারাই (মন্ত্রণালয়) আমাকে এই কাজের জন্য বলেছে। তারা কিন্তু কখনও আমাকে বলেনি যে, এটা হলে ওটা হবে না। অথচ এ নিয়ে আমি বছরের পর বছর ধরে রিসার্চ করেছি, অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই জানেন যে সিনেমাটি আমি তৈরি করছি।’
তবে সেলিমের সেই বক্তব্য আমলে নেয়নি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিবরিয়া ফিল্মসও নিজেদের মতো করে সম্ভাব্য পরিচালক হিসেবে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু (বাংলাদেশ), স্বপন চৌধুরী (বাংলাদেশ), জেপি দত্ত (ভারত) এবং অনিরুদ্ধ রায়দের (ভারত) নাম প্রস্তাব করে। এর মধ্যে সিনেমাটির সম্ভাব্য পরিচালক হিসেবে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর নামটি আলোচনায় আসে।
এ ছাড়াও কিবরিয়া ফিল্মসের প্রস্তাবিত ‘অপারেশন জ্যাকপট’চলচ্চিত্রে অভিনয় শিল্পীদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে আছেনÑ শাকিব খান, ওমর সানি, মোশাররফ করিম, মৌসুমী, পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস, রিয়াজ, নিপুণ, ববিতা, আহমেদ শরীফ, সুচরিতা, মিশা সওদাগর, চম্পা, ভারতের রাণী মুখার্জি, সানি দেওল, সুনীল শেঠি, ফারদিন খান, জয়া বচ্চনসহ আরও কয়েকজন।